ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই রাজ্যে ‘মেরুকরণে’র রাজনীতির হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠছিল। এ বার কি সেই রাজনীতিতে অন্য মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করছে বিজেপি? সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ‘ছদ্ম সংগঠন’ তৈরি করছে?
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও তৃণমূল নেতা তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম কটাক্ষ করে বিষয়টিকে ‘ঘৃণ্য চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। এ দিন মেদিনীপুর সদর ব্লকের হাতিহলকা, ছেড়ুয়া ও তার আশেপাশের এলাকার সংখ্যালঘুদের একাংশকে নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বার করে সদ্য গজিয়ে ওঠা একটি সংগঠন। তাদের অভিযোগ, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় নয়, তাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তারা এনেছে, তা যথেষ্ট স্পর্শকাতর। সংগঠনের নেতা শেখ আব্দুল মইন এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। হিন্দুদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। মুসলিমরাই মুসলিমদের মারছে।’’ শুধু তা-ই নয়, শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ‘অত্যাচারে’র অভিযোগ তাঁরা এনেছেন। অন্য দিকে, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই সংগঠনে তাঁদের কর্মীরা আছেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাসের বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। অত্যাচারের প্রতিবাদে সংখ্যালঘুরাই সরব হয়েছেন। আমাদের কয়েক জন কর্মী ওঁদের সঙ্গে থাকতে পারেন।’’
স্বাভাবিক ভাবেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি সংখ্যালঘু ভোট পেতে বিজেপিই ছদ্মবেশে এই সংগঠন তৈরি করেছে? তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়ের কথায়, ‘‘বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। মানুষ সব দেখছেন। মানুষই ওদের জবাব দেবেন।’’ জেলা তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৩০ জুলাই ছেড়ুয়ায় মিছিল করা হবে। শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানানো হবে।’’
পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, নানা কারণে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছিল। কিন্তু স্পর্শকাতর কোনও ঘটনা ঘটেনি।
লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব উপলব্ধি করেছিলেন, কেবলমাত্র মেরুকরণের রাজনীতি করে বিধানসভা ভোটে ‘লাভ’ পাওয়া যাবে না। ফলে বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককেও নিশানা করেছেন তাঁরা। ঘোষিত ভাবেই তাঁরা চেষ্টা করছেন, এলাকায় এলাকায় প্রশাসন এবং সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মানুষদের ‘খেপিয়ে’ দিতে। বিজেপি পিছনে থেকে নতুন নতুন সংগঠনকে ইন্ধন জোগাচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠেছে বহু জায়গায়। এ দিন বিজেপির জেলা সভাপতির কথায় তা খানিকটা স্পষ্টও হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমরা পিছন থেকে কিছু করাই না। যা করি, প্রকাশ্যে। ওই এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই গণ্ডগোল চলছে। মুসলিমরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে পুলিশকে ব্যবহার করে তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। তারই প্রতিবাদে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল করেছেন।’’
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ যদিও দিলীপবাবুর মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায় এখানে যে ধরনের নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করে, যে ভাবে মাথা উঁচু করে বসবাস করে, সেটা এখানে তৃণমূলের প্রশাসন আছে বলেই সম্ভব। যারা ভুল বুঝিয়ে এই পরিবেশ বিষিয়ে দিতে চায়, এটা তাদের কাজ। এটা ঘৃণ্য রাজনীতি।’’ আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ যদি অন্যায় ভাবে অত্যাচার করে, তা হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এর মধ্যে ধর্মীয় রং খোঁজার দরকার কী? যা অন্যায়, তা অন্যায়। ধর্মভেদে তো অন্যায়ের সংজ্ঞা বদলে যায় না!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy