শ্যামবাজারে সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের অবস্থান। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ঝাঁঝ যতই বাড়ছে, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিয়ে ততই সংশয় তৈরি হচ্ছে রাজ্য বিজেপিতে। তাই এক দিকে যেমন তারা নাগরিক আন্দোলনে দলীয় উদ্দেশ্য নিয়ে ঢুকে পড়ার অভিযোগে সিপিএমকে কাঠগড়ায় তুলছে, তেমনই নিজেদের ধর্না কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় সরকার-বিরোধী প্রতিবাদের আবহেও কার্যত দু’টি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপিকে। প্রথমত, নাগরিক সমাজ এই নিয়ে যে ভাবে আন্দোলন সংগঠিত করছে, সেখানে দলীয় উপস্থিতি ততটা জোরালো হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার প্রতিবাদে বামেদের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যথেষ্ট সাড়া মিলছে। সব মিলিয়ে বিরোধী পরিসরে একচ্ছত্র দখলদারি তো বটেই, সামান্য দাঁত ফোটাতেও কালঘাম ছুটছে বিজেপির।
বিজেপি আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে প্রথম দফায় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে ধর্না কর্মসূচি নিয়েছিল। দলের প্রায় সব স্তরের নেতা-কর্মীরা ওই কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন। তার পরেই ‘ছাত্র সমাজে’র নবান্ন অভিযান এবং তাকে কেন্দ্র করে ১২ ঘণ্টার বন্ধে পুলিশ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে গিয়ে বিরোধী পরিসরে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিল বিজেপি। প্রথম ধর্নার ‘সাফল্যে’ উৎসাহিত হয়ে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে আরও এক দফা ধর্নার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। সেই সঙ্গে মণ্ডল, ব্লক ও জেলা স্তরেও বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কর্মসূচি ভাগ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় পর্বের ধর্না কার্যত ধারহীন হয়ে পড়েছে। সমর্থকদের উপস্থিতিও কমে এসেছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযানে রাতভর অবস্থানের সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে দলের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে যে ভাবে ‘গো ব্যাক’ শুনে ফিরতে হয়েছে, তাতে ধাক্কাই খেয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে বামফ্রন্টের মিছিলে কুল ছাপানো ভিড় এবং শ্যামবাজারে ছাত্র-যুবদের টানা অবস্থান নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। এ সবের জেরে বিরোধী পরিসরে জমি শক্ত করতে কলকাতার প্রাণকেন্দ্রেই ঘাঁটি গেড়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির নেতৃত্ব। ধর্মতলায় আজ, শুক্রবার থেকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ১০ দিন চলবে ধর্না। কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য বৃহস্পতিবার অনুমতি দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ।
তবে এই কৌশলের সঙ্গেই সিপিএমকে কাঠগড়ায় তুলতে ছাড়ছে না বিজেপির একাংশ। সিপিএম দলীয় পতাকা নিয়ে ঢুকে রংহীন আন্দোলনকে ভেঙে দিচ্ছে, এমন অভিযোগে সরব হচ্ছেন বিজেপির কিছু নেতা। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ মন্তব্য করেছেন, ‘‘আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। নিজের পতাকা নিয়েও আন্দোলন যে কেউ করতে পারে। কিন্তু নাগরিক আন্দোলনের মধ্যে পতাকা নিয়ে ঢোকার চেষ্টা হলে প্রতিবাদী নাগরিকেরা সেটা প্রত্যাখ্যান করবেন। সিপিএম সেই চেষ্টা করেছে। আমাদের বক্তব্য রংহীন গণ-আন্দোলনকে দলীয়করণ করার সিপিএমের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে।’’ শিলিগুড়িতে ১৪ অগস্টের একটি ঘটনার অভিযোগ করে প্রায় একই সুরে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘এটা সিপিএমের নীতিহীনতা। দলীয় সমর্থকেরাও এই বিষয়টা সমর্থন করছেন না। এই করে সিপিএম শূন্য হয়েছে, আগামী দিনে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাবে!’’
পাল্টা ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘যা হয়নি কোথাও, সেই নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেব? বিজেপি বলছে, বলতে থাকুক। নাগরিকেরা কী বলছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘নকল ছাত্র সমাজের নামে নবান্ন অভিযান এবং বন্ধ, দু’টোই চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ায় হতাশা থেকে বিজেপি নেতারা এই কথা বলছেন। আমরা মানুষের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, এখনও রয়েছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আমরা মঞ্চের কেন্দ্র আলো করে থাকার নীতিতে বিশ্বাস করি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিকদের প্রশ্ন উঠবে না? হাথরস, উন্নাওয়ের প্রসঙ্গ উঠবে না? নাগরিক সমাজের প্রশ্নের জবাব বিজেপির কাছে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy