গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রথমে ফোনে আলোচনা এক নেতার। তার পরে বাড়ি গিয়ে বৈঠক আর এক জনের। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ধরে রাখতে সোমবার এ ভাবেই জোড়া-ফলাকে ময়দানে নামাল বিজেপি। শোভনের ওয়ার্ডে তৃণমূলের সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে সোমবারই তৃণমূলের একটি অংশ দাবি করে। প্রাক্তন মেয়রের ‘ঘর ওয়াপসি’র পথ সহজ করে তুলতেই তৃণমূল সূত্রে ওই খবর প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল বলে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের ধারণা। আর সে খবর নিয়ে চর্চা তুঙ্গে উঠতেই আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করল না বিজেপি। একসঙ্গে সক্রিয় হলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন।
বিজেপি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, তৃণমূল কাকে অপসারণ করেছে বা করেনি, তা দেখে কৈলাস ও মেনন সক্রিয় হয়েছেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক মেনন গত এক সপ্তাহ ধরেই অনবরত যোগাযোগ রাখছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পর্যবেক্ষক তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গেও দূত মারফত শোভনদের যোগাযোগ ঘটছিল বলে খবর। ২২ অগস্ট থেকে ২৪ অগস্টের মধ্যে যে কোনও দিন যে কৈলাস বা মেনন শোভনের বাড়িতে যাবেন, তা-ও আগে থেকেই স্থির ছিল বলে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে। বিজেপির এই দুই নেতা যে অনবরত যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন, শোভন শিবিরও তা স্বীকার করছে। শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নন, রাজ্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও গত কয়েক দিনে শোভনদের কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে ঢোকেন বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন। আর বেরোন রাত ১১টা ৪০ নাগাদ। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে কী কথা হল শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে, সে বিষয়ে মেনন এখনও কোথাও মুখ খোলেননি। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে বিশদে মুখ খুলতে চায়নি শোভন শিবিরও। তবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, ‘খুব ভাল আলোচনা হয়েছে’। বৈশাখীর কথায়, ‘‘প্রায় আড়াই ঘণ্টা মেননজি এখানে ছিলেন। ফলে বুঝতেই পারছেন যে, দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। খুব ভাল কথা হয়েছে।’’ সেই ‘দীর্ঘ’ এবং ‘খুব ভাল’ কথার ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত হল? কৌশলে জবাব এড়িয়েছেন বৈশাখী। বলেছেন, ‘‘সময় এলেই দেখতে পাবেন কী সিদ্ধান্ত হল।’’
আরও পড়ুন: নীরব মোদীর স্ত্রী, ভাই-বোনের বিরুদ্ধে রোড কর্নার নোটিস ইন্টারপোলের
সোমবারের এই বৈঠক বেশ লম্বা বৈঠক ছিল ঠিকই। তবে অরবিন্দ মেনন যে এই প্রথম বার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে বৈঠকে বসলেন, তা কিন্তু নয়। এর আগেও তিনি একাধিক বার সেখানে গিয়ে বৈঠক করেছেন। বস্তুত বিজেপিতে যোগ দিয়েও নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা শোভনদের সঙ্গে দলের সংযোগ এত দিন মূলত রক্ষা করছিলেন মেননই। তাই তাঁর সঙ্গে শোভনদের দীর্ঘ বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ হলেও একেবারে নতুন কিছু নয়। যা তাৎপর্যপূর্ণ এবং নতুন, তা হল মেননের সঙ্গে বৈঠকের আগে কৈলাসের সঙ্গে ফোনে বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনা।
আরও পড়ুন: প্রশান্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা গেল নতুন বেঞ্চে
শুধু অরবিন্দ মেনন নন, কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও এই দফায় শোভনের বাড়ি গিয়ে বৈঠক করবেন বলে স্থির হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে তেমনই জানা যাচ্ছে। কিন্তু সোমবার কৈলাসের ইনদওরের বাড়ি থেকে পরিবারের এক সদস্যদের অসুস্থতার খবর আসে। তা নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত আর শোভনের বাড়িতে যেতে পারেননি তিনি। কিন্তু তিনি যে যেতে পারছেন না, সে খবর কৈলাস নিজেই বৈশাখীকে জানান। মেননের সঙ্গে আলোচনায় যা কথা হবে, তিনি সব জেনে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী দলের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও কৈলাস আশ্বাস দেন। বিজেপি সূত্রে তেমনই জানা গিয়েছে।
মেননের সঙ্গে বৈঠকের আগে কৈলাসের সঙ্গে যে ফোনে কথা হয়েছে, তা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করেছেন। সে আলোচনাও ইতিবাচক বলেই খবর। গত বছর এই কৈলাসের সঙ্গেই শোভন-বৈশাখীর একটি সাক্ষাৎকার কিন্তু সুখকর ছিল না বলে জানা গিয়েছিল। সম্পর্ক শীতল হয়ে গিয়েছিল অনেকখানি। এ বার সেই কৈলাসের সঙ্গেই বৈশাখীর ফোনে আলোচনা এবং সে আলোচনা ‘ইতিবাচক’ হওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। সম্পর্কের বরফ যে অনেকটাই গলে গিয়েছে, তা এই ফোনালাপের খবরেই স্পষ্ট বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সোমবার দুপুরেই রত্না চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল থেকে অপসারণের খবর আসে। যদিও সে খবর নিয়ে বিভ্রান্তিও রয়েছে। রত্নাকে যে দলীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, সে কথা তৃণমূলের কোনও মুখপাত্র বলেননি, দলের তরফে কোনও বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়নি। রত্না নিজে জানান, তিনি দলের তরফ থেকে কোনও ফোন পাননি। দলেরও একাংশ সেই সুরেই প্রশ্ন তোলেন যে, রত্না তো কোনও পদেই ছিলেন না, অপসারণটা হবে কোথা থেকে? তবে শোভনকে ফেরাতেই রত্নাকে সরানো হল, এই রকম খবর তা সত্ত্বেও রটেছিল। সেই কারণেই সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বিজেপির তৎপরতা বেড়ে যায় বলে কারও কারও দাবি। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বা শোভন শিবির, কেউই তেমন কোনও ইঙ্গিত দিতে চাননি। শোভনদের সঙ্গে নেতৃত্ব অনবরত যোগাযোগ রেখেই চলছে এবং এই বৈঠক আগেই নির্ধারিত ছিল— দু’পক্ষই এমনই জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy