গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
‘গরুর দুধে সোনা’র হদিস দিয়ে ‘তোলপাড়’ ফেলে দিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষের সেই ‘তত্ত্ব’ ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাস্য-রসিকতার বিস্ফোরণ ঘটেছে। শুধু কি সোশ্যাল মিডিয়া? দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির অভ্যন্তরেও সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। কেন এই ধরনের মন্তব্য করতে গেলেন— উঠেছে এমন প্রশ্নও। যদিও বাইরে ‘গরুর দুধে সোনা’র উপস্থিতি প্রমাণেও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। তার জন্য তুলে আনা হচ্ছে নানা গবেষণাপত্রের রেফারেন্সও। বিশেষ করে, পোল্যান্ডের একটি পরিবেশ জার্নালে দেড় দশক আগে ছাপা একটি গবেষণাপত্র থেকে নেওয়া একটি চার্ট ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যাতে দেখা যাচ্ছে, সত্যি সত্যিই গরুর দুধে সোনা রয়েছে। যদিও সেই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল আলাদা।
সোমবার বর্ধমানে শহরে ‘ঘোষ ও গাভীকল্যাণ সমিতি’র সভায় সোমবার দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘গরুর দুধে সোনার ভাগ থাকে, তাই দুধের রঙ হলুদ হয়।’’ এই মন্তব্য সংবাদ মাধ্যমে ছড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নেটিজেনরা। মঙ্গলবার দিনভর ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের বন্যা বয়ে যায়। উঠে আসে, ‘দিলু পাতন প্রক্রিয়া’ থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছ’ কবিতার প্যারোডি, স্বর্ণগাভী কিংবা ‘গরুকে বাপি লাহিড়ীর হিংসা’র মতো কটাক্ষ-শ্লেষে ভরা নানা পোস্ট-মেসেজ।
এই তুমুল ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের মধ্যেই মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাজ্য বিজেপির যুব নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র শেয়ার করেন তিনি। তাতে দেখা যায়, ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সত্যিই গরুর দুধে অন্যান্য খনিজের সঙ্গে সোনার উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। বিজেপি দফতর থেকে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও ফরওয়ার্ড করা হয়েছে ওই গবেষণার অংশ।
কী বলছে গবেষণার ফল? পোল্যান্ডের রক্ল ইউনিভার্সিটি অব টেকনলজির ২০০৫ সালের ওই গবেষণায় অজৈব এবং রাসায়নিক মিলিয়ে ৩৮টি উপাদান মিলেছিল গরুর দুধে। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, দস্তা, আয়োডিন, অ্যালুমিনিয়াম, রেডিয়াম, প্লাটিনাম, অ্যান্টিমনি-সহ নানা পদার্থের মতোই গরুর দুধে রয়েছে সোনাও। ‘গরুর দুধে সোনা’র উপস্থিতি প্রমাণ করা অবশ্য উদ্দেশ্য ছিল না গবেষণায়। বরং সেই গবেষণা করা হয়েছিল পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষিতে। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণের ফলে গরুর দুধে অজৈব, রাসায়নিক, মৌলকণা বা খনিজের উপস্থিতি কী ভাবে পরিবর্তন হয়, সেটাই পরীক্ষা করে দেখা।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ বাঘাযতীন, পার্থর সঙ্গে বৈঠকেও মিলল না রফাসূত্র
কিন্তু দিলীপবাবুর তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কার্যত আরও ‘ল্যাজে গোবরে’ হয়েছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, ওই গবেষণায় দুধের নমুনা নেওয়া হয়েছিল, পোল্যান্ডের আপার সিসেলিয়ান ও লোয়ার সিসেলিয়ান এলাকার এবং আমেরিকার একটি অংশের গাভী থেকে। অথচ সোমবার বর্ধমানের সভায় এই বিদেশি গরু নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিদেশ থেকে যে গরু আনা হয়, তা ‘হাম্বা’ আওয়াজ করে না। যে ‘হাম্বা’ ডাকে না, সে গরুই নয়। গোমাতা নয়, ওটা আন্টি। আন্টির পুজো করে দেশের কল্যাণ হবে না।’’ অর্থাৎ দিলীপবাবুর মতে যা ছিল কার্যত ‘অচ্ছুৎ’, এখন তাঁকে রক্ষা করতে আশ্রয় নিতে হল সেই বিদেশি গরুর উপরেই।
এর আগেও যে বিতর্কিত মন্তব্য করেননি দিলীপ ঘোষ, এমন নয়। বিদ্যাসাগরের ‘সহজ পাঠ’ মন্তব্য ঘিরে কম জলঘোলা হয়নি। কিন্তু ‘গরুর দুধে সোনা’ ঘিরে যে কাণ্ড হয়েছে, দিলীপের আর কোনও মন্তব্য ঘিরে সম্ভবত এমন আক্রমণ, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ হজম করতে হয়নি রাজ্য বিজেপিকে। তাই দলের অভ্যন্তরে এ নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। এমন মন্তব্য কেন করতে গেলেন রাজ্য সভাপতি যা নিয়ে দু’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন রঙ্গ-রসিকতা চলল এবং এখনও থামার নাম নেই— তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: ‘আর কারও কাছে যাওয়ার দরকার নেই’, অধ্যাপকসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘অর্থ’ বুঝতে চাইলেন রাজ্যপাল
কিন্তু ‘গরুর কুঁজ’ এবং ‘স্বর্ণনাড়ি’র কি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা? সোমবার বর্ধমানের সভায় বিজেপি সভাপতি আরও তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন ‘‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে, সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’’ বিজ্ঞানীরা অবশ্য আজ পর্যন্ত এমন কোনও সম্ভাবনা বা সূত্রের খোঁজ পাননি। তবে দলের নেতাদের সাফাই, এগুলি সাধারণ ধর্মীয় বিশ্বাস। গ্রামীণ এলাকায় এই ধরনের অনেক কথাই প্রচলিত থাকে। সেটাই বলতে চেয়েছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু তাঁর সেই মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে আক্রমণ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy