প্রকৃত সাইনবোর্ড। উপরের বাংলা লেখাটি বাদ দিয়ে ভুয়ো ছবি ছড়ানো হয়। নিজস্ব চিত্র
একটি মিথ্যে ফেসবুক পোস্ট সামনে রেখে শনিবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অশান্তি তৈরি করল বিজেপির যুব মোর্চা। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেই মিথ্যার বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল না করে পুলিশ কেন মিথ্যা পোস্ট করা যুব মোর্চার নেতাকে গ্রেফতার করল, তা নিয়েই সুর চড়াতে ব্যস্ত থাকলেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার নামেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মিম ঘোরে। তা নিয়ে তো কোথাও অভিযোগ জানাতে যাই না!’’ তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস সকলেই বিজেপির এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে বলেছে, বিজেপির কাছে এটাই প্রত্যাশিত।
বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরভবনের দেওয়ালের সাইনবোর্ডের ছবি পোস্ট করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই বোর্ডে পুরসভার নাম ইংরেজি, উর্দু এবং হিন্দিতে লেখা। ওই পোস্টের সঙ্গে ‘বাংলা ছেড়ে উর্দু প্রেম’, এই মন্তব্য করে তৃণমূল এবং ‘বাংলা পক্ষ’ নামে একটি সংগঠনকে কটাক্ষ করেন বাপ্পা। কিন্তু বাস্তবে আসানসোল পুরসভার নাম ওই তিন ভাষার উপরে আলাদা সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা আছে। আসানসোল পুরসভা বিষয়টি নিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় শুক্রবার বাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তার ভিত্তিতে ওই রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শনিবার আসানসোলের পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ-অবস্থান করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশ সূত্রের খবর, সৌমিত্র-সহ কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে কিছু ক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। সৌমিত্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, বর্ধমানের উল্লাস মোড়, মালদহের ইংরেজবাজার, উলুবেড়িয়া-সহ রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভ, অবরোধ করে যুব মোর্চা এবং বিজেপি।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করার অভিযোগে বাপ্পাবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে শনিবার আদালতে তুলে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।’’ কিন্তু আসানসোল পুরসভার নামের সাইনবোর্ডের ছবির অংশ কেটে ফেসবুকে দিয়ে কাউকে ‘বাংলা বিরোধী’ প্রমাণ করার চেষ্টা কি চক্রান্তমূলক নয়? বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু বলেন, ‘‘মিথ্যে ছবি পোস্ট ঠিক নয়।’’ তার পরেই তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধের অভিযোগে পুলিশের গ্রেফতার করার আইন নেই। কেউ অপরাধ করলে এফআইআর করুক, আইনমাফিক বিচার হবে। বাপ্পাকে গ্রেফতার করা হল কেন?’’ কিন্তু বিজেপি কি সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যে পোস্ট দেওয়াকে সমর্থন করে? এর জবাবে দিলীপবাবু বার বার পুলিশের গ্রেফতার করার অধিকার নিয়েই প্রশ্ন তুলতে থাকেন। বাপ্পার মিথ্যে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে বিভাজনমূলক প্রচারের সঙ্গে সাংবাদিকদের সংবাদ সম্পাদনার কাজের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমও আমার বক্তৃতার অংশ কেটে দেখায়। তার জন্য কি আমি কিছু বলি?’’
বিজেপির যুব নেতা বাপ্পা তৃণমূলের বাংলা প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেদের বাংলা দরদ দেখাতে চেয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু বাংলা ভাষাকে যখন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধ্রুপদী ভাষার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজেপি কেন্দ্রের কাছে প্রতিবাদ জানাচ্ছে না কেন? দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ওটা আমাদের কাজ নয়। যারা বাংলা ভাষার ঠিকা নিয়েছে, তারা ওটা করুক। তথ্য দিয়ে কেন্দ্রকে বলুক।’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য দিয়ে অশান্তি তৈরির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বিজেপি। তবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাজনৈতিক স্তরেও মিথ্যাচারের বিরোধিতা করছি।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘প্রতি পদে প্রমাণিত হচ্ছে, দিলীপবাবুদের দল বাঙালি এবং বাংলা বিরোধী। জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্বীকৃত ভাষা হিসাবে বাংলাকে রাখা বা নিট, জেইই-র প্রশ্নের মাধ্যম হিসাবে বাংলাকেও সুযোগ দেওয়া—এই সব দাবি তোলার হিম্মৎ দিলীপবাবুদের নেই।’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষার জ্ঞান, কোনওটাই দিলীপবাবুদের নেই। বাংলা ভাষা এবং বাংলার সংস্কৃতি বাঁচাতে বাংলার মানুষই লড়ে নেবে। দিলীপবাবুদের দরকার নেই।’’
অন্য দিকে, এ দিন বেলঘরিয়ায় একটি চা-চক্রে ফের পুলিশকে ‘অশালীন’ আক্রমণ করেন দিলীপবাবু। সেই সঙ্গেই পুলিশের ভূমিকার বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বেআইনি কাজ করে না। তবে বেআইনি কাজ করবে না, আমি এমন বন্ড লিখে দিইনি।’’ এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে যারা এনকাউন্টারে মেরে দিচ্ছে, বিজেপি বরং তাদের দিকে তাকাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy