আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কি আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী? ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজ্য বিজেপির একটি অংশ তেমনই ভাবতে শুরু করেছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কার্যালয় খুলতে চলেছেন বিরোধী দলনেতা। বিজেপি সূত্রের খবর, সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। কার্যালয় খোলার দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনামতো সব চললে আগামী ১ মে ওই কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে পারেন শুভেন্দু।
ঘটনাচক্রে, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে কেবল মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ি নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস এবং বাড়িও ওই ওয়ার্ডেই। মমতার পরিবারের সদস্যেরাও ওই ওয়ার্ডেই থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ওয়ার্ড থেকেই কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। তাই শুভেন্দু ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ডেরা’ বাঁধলে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় ‘রাজনৈতিক উত্তাপ’ তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডে শুভেন্দুর কার্যালয় করা নিয়ে দক্ষিণ কলকাতা বিজেপিও ‘উত্তেজিত’। এক নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই সব সময় কঠিন। কিন্তু শুভেন্দুদার মতো নেতা পাশে থাকলে আমরা প্রাণপণ লড়াই করব। তাঁর অফিস উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।’’
এ সব দেখে অনেকেই মনে করছেন, শুভেন্দু আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি ভবানীপুর থেকেও লড়তে পারেন। তবে সেই বিষয়টি একেবারেই অনুমানের স্তরে রয়েছে। শুভেন্দুর তরফেও এই মর্মে দলের অন্দরে কিছু বলা হয়নি। অনেকের মতে, নেতাজি ইন্ডোরের সভায় ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো’ ভোটার থাকা নিয়ে অভিযোগ তুলে যে ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গোটা দলকে ‘বুথমুখী’ করে দিয়েছেন মমতা, তাতে ‘চাপ’ বেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের উপর। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা তথা তৃণমূলের উপর ‘পাল্টা চাপ’ তৈরি করতেই শুভেন্দু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডে তাঁর কার্যালয় খোলার কৌশল নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ভবানীপুর বিধানসভা। বিরোধী দলনেতার দফতর থেকে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডটি বাদ দিয়ে বাকি সাতটি ওয়ার্ডে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে জমি তৈরি করতে চাইছেন শুভেন্দু। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটের প্রাধান্য থাকায় ওই ওয়ার্ডে বিজেপি একেবারেই দাগ কাটতে পারেনি। সে কারণে ওই ওয়ার্ডটি বাদ দিয়েই কাজ শুরু করতে চান বিরোধী দলনেতা। এর মধ্যে মমতার বাড়ি ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। মমতার বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি পিছিয়ে ছিল। কিন্তু মাত্রই ২৭৯ ভোটে। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। আবার ২০১৫ সালের পুরভোটে ভবানীপুরে জোড়া ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেই পরিসংখ্যানে ভরসা করেই এগোতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।
মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ড-সহ আরও ছ’টি ওয়ার্ডে পদ্মফুলের পক্ষে ভোট বাড়াতে ‘গোপন টিম’ তৈরি করা হচ্ছে। ১০০ জনের উপর সদস্য থাকবেন সেই দলে। তারা আগামী দু’মাস তথ্য সংগ্রহ করবে। তার পরে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজাম প্যালেসে ভবানীপুর বিধানসভার সক্রিয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন শুভেন্দু। সেই বৈঠকেই ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বুথ স্তরে সংগঠন তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশের কারণে গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের পরে আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও ভবানীপুরে মমতা বনাম শুভেন্দুর ভোটযুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পদ্মশিবিরের অন্দরমহলে। অনেকে এমনও বলছেন যে, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি ভবানীপুর থেকেও ভোটে লড়তে পারেন শুভেন্দু। যদিও তার বিপরীত মতামতও রয়েছে।