Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC Dharna at Delhi

মঙ্গলেও ‘মার্কিং’ বিজেপির! অভিষেক-সাক্ষাতের ঠিক আগে শুভেন্দুকে সময় দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতি

অভিষেক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার যন্তর মন্তরে তৃণমূলের কর্মসূচি শুরু হবে দুপুর ১টায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেই কর্মসূচি চলবে। তার পর তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাবে নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে।

An image of Abhishek Banerjee, Niranjan Jyoti and Suvendu Adhikari

(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরঞ্জন জ্যোতি এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০২:১২
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবারও ‘ম্যান মার্কিং’-এ রাখছে বিজেপি। সোমবার তৃণমূলের দিল্লি অভিযানের প্রথম দিনে তিন জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বাংলায় দলের রাজ্য সভাপতি এবং আরও একাধিক নেতানেত্রীকে নিয়ে তিনটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছে কেন্দ্রের শাসকদল। মঙ্গলবার কী হবে এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও যে অভিষেককে বিজেপির ‘ঘরের মাঠ’ দিল্লিতে ‘ওপেন’ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না তা স্পষ্ট। পরিষ্কার হল সোমবার সন্ধ্যায়, যখন জানা গেল, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং দিল্লি যাচ্ছেন। এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ঘণ্টাদুয়েক আগে শুভেন্দুকে কথা বলার সময় দিয়েছেন। খেলার মাঠে ‘মার্কিং’ করা হয় বিশেষ বিশেষ খেলোয়াড়কে। বিজেপি অভিষেককে ‘বিশেষ’ বলে মান্যতা দিয়েছিল সোমবারই। শুধু তিন বার অভিষেকের দাবি-খণ্ডনে সাংবাদিক বৈঠক করাই নয়, বাংলায় দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ-ও দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, বাংলা চালাচ্ছেন অভিষেক।

দিল্লির বুকে বিজেপিকে হঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেকও। তাঁর কথায়, ‘‘মাঠ আপনার, রেফারি আপনার, ময়দানও আপনার। কিন্তু লড়াই হবে জোরদার।’’ সোমবারের থেকে মঙ্গলবারের ‘খেলা’ আরও টানটান হবে বলে মনে করছেন অনেকে। ওই ‘খেলা’য় শুভেন্দু খোলসা করেছেন তাঁর দায়িত্বের কথা। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু তার আগে বিকেল ৪টেয় তাঁর সঙ্গে বৈঠক হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা জেনুইন (প্রকৃত) জব কার্ড হোল্ডার, তাঁদের নিয়ে তো আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি দিল্লিতে গিয়ে সুনিশ্চিত করব, ভুয়ো জব কার্ডে যাঁরা টাকা তুলছেন, তাঁরা যেন আইনের আওতায় আসেন। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে পঞ্চায়েত প্রধানেরা ভুয়ো জব কার্ড ইস্যু করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ আঙুল উঁচিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘যাঁরা দেশের টাকা চুরি করেছেন, মানুষের ট্যাক্সের টাকা লুট করেছেন, এই লুটের রাজের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার জন্য বিরোধী দলনেতা দিল্লি যাবেন।’’

ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে অবশ্য পাল্টা বক্তব্য রেখেছে তৃণমূলও। ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড বাতিল করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে তারা। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করা হয় অবিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের পক্ষে লেখা হয়েছে, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে ৪৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩৪টি মনরেগা জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যা কিনা সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের দ্বিগুণ। কিন্তু বিজেপিশাসিত ওই রাজ্যের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বন্ধ করা হয়েছে শুধু অবিজেপিশাসিত পশ্চিমবঙ্গের।” ওই একই টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নিজেদের কেউ দোষ করলে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, তাই না!” সোমবার তৃণমূলের কর্মসূচি চলাকালীনই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বিহারের বেগুসরাই থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ অভিষেক পাল্টা বলেন, ‘‘গত দু’বছরে বাংলায় ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্ত হয়েছে। কী হয়েছে? সারদা, নারদ তদন্তের কী সুরাহা সিবিআই করতে পেরেছে? আর যদি সিবিআই তদন্ত হয়ে বাংলার মানুষ তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান, তা হলে তাকে আমি স্বাগত জানাব।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘দু’বছরে ৬৯টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় পৌঁছে তদন্ত করেছে। কী পেয়েছে? বিজেপি ক’টা এফআইআর করেছে?’’

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় যন্তরমন্তরে সভা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু পরে অভিষেক জানিয়েছেন, তা শুরু হবে দুপুর ১টায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সভা চলবে। তার পর তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাবে কৃষিভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। অভিষেক জানিয়েছেন,‘‘প্রতিমন্ত্রী যদি সদুত্তর দিতে পারেন ভাল, যদি না পারেন, তা হলে সেখান থেকে বেরিয়েই পরের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’’ তৃণমূলের সেনাপতির বার্তা, বাংলার মানুষের ‘হক আদায়ে কোনও ছাড়’ দেবেন না তাঁরা! মঙ্গলবারের কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘যন্তর মন্তরে তৃণমূলের কর্মসূচিতে যদি এক জন সাধারণ মানুষের গায়েও আঁচড় পড়ে, তা হলে তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর! যেখানে নরেন্দ্র মোদী থাকেন, যেখানে অমিত শাহ, জেপি নড্ডা থাকেন, সেখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি। বিজেপি যে ভাষা বোঝে, আমি সেই ভাষাতেই জবাব দিতে জানি!’’

সোমবার তৃণমূল বনাম বিজেপি যা হল

সোমবারই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বিহারের বেগুসরাই থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ অভিষেক আবার তার পাল্টা বলেছেন, ‘‘গত দু’বছরে বাংলায় ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্ত হয়েছে। কী হয়েছে? সারদা, নারদ তদন্তের কী সুরাহা সিবিআই করতে পেরেছে? আর যদি সিবিআই তদন্ত হয়ে বাংলার মানুষ তাঁদের প্রাপ্য টাকা পান, তা হলে তাকে আমি স্বাগত জানাব।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘দু’বছরে ৬৯টি কেন্দ্রীয় দল বাংলায় পৌঁছে তদন্ত করেছে। কী পেয়েছে? বিজেপি ক’টা এফআইআর করেছে?’’ তার পর বিজেপির পক্ষে সাংবাদিক বৈঠকে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে। তিনি কেবল একশো দিনের কাজের ইস্যুতেই তৃণমূলকে নিশানা করেননি, তাঁর বক্তব্যে এসেছে বাংলায় আবাস দুর্নীতি প্রসঙ্গ। সারদা, নারদ মামলার কথাও ছুঁয়ে যান তিনি। অনুরাগের কথায়, ‘‘রাস্তা, পুকুরের নামেও বেলাগাম দুর্নীতি হয়েছে বাংলায়। নদী বাঁধের জন্য কাজ দেখিয়ে বালির বস্তাও পাওয়া যায়নি। বারবার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনও রিপোর্ট আসেনি। যার দোতলা, তেতলা বাড়ি, সেও আবাস প্রকল্পের আওতায়। সারদা, নারদের পর ১০০দিনের কাজের টাকাও লুঠ হয়েছে বাংলায়। গরিব মানুষের প্রাপ্য টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।’’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কেন হাত কাঁপছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?’’ যদিও অভিষেক পাল্টা খোঁচা দেন, বিভিন্ন মামলায় তো তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো। সেই মামলাগুলোর হাল কী? সোমবার দিল্লিতে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার সুর চড়িয়েছেন অভিষেক, সেই সময় কলকাতায় সুর চড়ান শুভেন্দু। তিনি দাবি করেন, ১০০ দিনের কাজে এ রাজ্যের বিশাল দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতির তদন্তও সিবিআই করুক। সেই শুভেন্দুকে কেন্দ্রীয় বিজেপি ডেকে পাঠানোর পর মঙ্গলবারের তৃণমূলের ‘মিশন দিল্লি’ আরও টানটান এবং ঘটনাবহুল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার তৃণমূলের কর্মসূচিতে যা হল

সোমবার ছিল তৃণমূলের ‘মিশন দিল্লি’র প্রথম দিন। কর্মসূচির শুরুতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা অমিত শাহের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের বাধার মুখোমুখি হলেন তৃণমূলের নেতা এবং কর্মীরা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ রাজঘাটের সামনে সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। সেই সাংবাদিক বৈঠক কিছু ক্ষণ চলার পরই দিল্লি পুলিশের তরফে বার বার বাধা আসতে শুরু করে। অভিষেককে ঘিরে তৃণমূলের নেতা, সাংসদ এবং বিধায়কদের যে ভিড় ছিল, সেখানে কার্যত ঢুকে পড়েই এক পুলিশকর্মীকে বলতে শোনা যায়, “অনেক হয়েছে। এ বার কথা বন্ধ করতে হবে। ফাঁকা করে দিতে হবে রাজঘাত চত্বর।” বৈঠক থামিয়ে অভিষেক তাঁর কাছে জানতে চান, কেন? কী অসুবিধা হচ্ছে। তাঁরা শান্তিুপূর্ণ ভাবে যা করার করছেন। জবাবে তাঁকে বলা হয়, গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে সাধারণ মানুষ আসবেন। তাঁদের জন্য গেট খুলতে হবে। তাই আন্দোলনকারীদের এলাকা ছেড়ে দিতে হবে। কথাগুলি কিছুটা রুঢ় স্বরেই বলতে শোনা যায় দিল্লি পুলিশের ওই কর্মীকে। তাঁর সঙ্গে এক প্রস্ত কথা কাটাকাটিও হয় অভিষেকের। তৃণমূল সাংসদ তাঁদের বলেন, ‘‘আপনারা গেট খুলে দিন। মানুষকে আসতে দিন। আমরা কারও অসুবিধা সৃষ্টি করছি না।” কিন্তু দিল্লি পুলিশ সে কথা না শুনেই এর পর ক্রমাগত হুইসল বাজাতে শুরু করে। তার কিছু ক্ষণ পরেই অভিষেক সাংবাদিক বৈঠক অসম্পূর্ণ রেখে তাঁর গাড়ির কাছে চলে আসেন। বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন এলাকা ছেড়ে। তার পর তৃণমূলের অন্য কর্মী সমর্থকদেরও কার্যত রাজঘাট থেকে তাড়া করে বার করে দিতে দেখা যায় পুলিশকে।

তাড়ায় যে যা হারালেন

পুলিশের সঙ্গে গন্ডগোলের পর মোবাইল ফোন খুইয়েছেন বলে দাবি করেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন এবং শতাব্দী রায়। জুতো হারানোর কথা জানান রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। আর মেজাজ হারিয়ে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলের আর এক সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, অভিষেকের উপর নাকি প্রাণঘাতী হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল দিল্লি পুলিশ। আর অভিষেক বলেন, ‘‘রাজঘাট শান্তির পীঠস্থান। সেখানে মহিলাদের উপরও হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার আমাদের মারুক ক্ষতি নেই। কিন্তু একজনও সাধারণ মানুষের গায়ে হাত পড়লে তার ফল ভাল হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Dharna at Delhi Abhishek Banerjee TMC Suvendu Adhikari BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy