সোমবার রানি রাসমণি রোডের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রামে আগামী ৮ মে মিছিল করবে বিজেপি। তার তিন দিন পর ১১ মে মিছিল হবে ডেউচা-পাচামিতে। দু’টি মিছিলেরই নেতৃত্ব দেবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের আন্দোলনে শুভেন্দুর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। সে সব অতীতকালে হয়ে থাকলেও শুভেন্দু কিন্তু এখনও ‘নন্দীগ্রাম’-এরই। গত বছর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে ভোটে হারিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ, তিনি এখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাঁর ভোটার কার্ডেও নন্দীগ্রামেরই ঠিকানা। এ হেন নন্দীগ্রামকে কি শুভেন্দু বীরভূমের ডেউচা পাচামি জমি আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে দিতে চাইছেন? বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে সেই সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রকাশ্যে আসতেই (বস্তুত, শুভেন্দু নিজে প্রকাশ্যে আনতেই) সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে। ডেউচা-পাচামিকে কেন্দ্রে করে তিনি যে কর্মসূচির কথা ভাবছেন, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। সোমবার সেটাই আরাও এক বার স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।
প্রসঙ্গত, আগেই ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সোমবার কলকাতায় মিছিলের মধ্য দিয়ে সেই কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। সেই মিছিলের শেষেই রানি রাসমণি রোডের সভায় শুভেন্দু ঘোষণা করেন নতুন কর্মসূচির কথা। যেখানে তিনি বলেন নন্দীগ্রাম ও ডেউচায় পর পর আন্দোলন কর্মসূচির কথা। যা আপাতদৃষ্টিতে রাজ্যে বিজেপির ঘোষিত কর্মসূচির আওতায় নয়। সেই সূত্রেই বিজেপির মধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে এই মর্মে যে, শুভেন্দু কি বীরভূমের আদিবাসী প্রধান এলাকা ডেউচা-পাচামিকে কেন্দ্র করে নন্দীগ্রামের মতো কোনও আন্দোলনের অধ্যায় শুরু করতে চাইছেন? আচমকা শুভেন্দুর কর্মসূচি ঘোষণায় কিছুটা বিস্মিত হন পদ্মশিবিরের নেতাদের একাংশ। কারণ, এমন কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নাকি আগে থেকে জানা ছিল না!
প্রসঙ্গত, এ-ই প্রথম নয়, আগেও বীরভূমের ওই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছেন শুভেন্দু। প্রসঙ্গত, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের সরকারি প্যাকেজ ঘোঘণায় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ সাড়া দিলেও একটা বড় অংশ এখনও প্রস্তাবিত কয়লাখনির বিপক্ষে। সেই অংশের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা আগেই করেছেন শুভেন্দু। গত ২০ এপ্রিল কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সূচনার দিনেই বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে ডেউচা গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানে গিয়ে জানান, ‘‘পাঁচামি এলাকার আন্দোলনকারীদের অবস্থানে আমাদের সমর্থন রয়েছে। অরাজনৈতিক মঞ্চ বলে আমি আর গেলাম না। তবে তাঁরা যখনই ডাকবেন, আমাদের পাশে পাবেন।’’ এর পাশাপাশিই শুভেন্দু বলেন, ‘‘এখানে ডেউচা-পাঁচামি (প্রকল্প) হবে না। সাধারণ মানুষ চায় না। ইতিমধ্যে অনেক আদিবাসীর পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সমস্ত বিষয় নিয়ে আদালতে যাব।’’
ঘটনাচক্রে, সুকান্ত তথা রাজ্য বিজেপির ঘোষণায় ৮ এবং ১১ তারিখে নন্দীগ্রাম এবং ডেউচা-পাচামিতে মিছিলের কথা ছিল না। কিন্তু সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সভায় ভাষণ দিতে উঠে শুভেন্দু বলেন, ‘‘৮ মে নন্দীগ্রামে স্বৈরাচারী শাসকের পরাজয়ের বর্ষপূর্তি পালিত হবে। ওই দিন ১৫ হাজার মানুষ পাঁচ কিলোমিটার পথ হাঁটবেন। মাথায় তিলক লাগিয়ে, হাতে শাঁখ নিয়ে মিছিল হবে।’’ এর পরেই তিনি ১১ মে ডেউচা-পাচামি যাওয়ার কথা বলেন। সেখানে আদিবাসীদের নিয়ে মিছিলের কথাও বলেন। সেই মিছিলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত হাজির থাকতে পারেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু।
সুকান্তের ঘোষণা মতো, কলকাতায় সোমবার মিছিলের পরে মঙ্গলবার বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা অনশনে বসবেন কলকাতার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। এক বেলা অনশনের পর রাস্তায় নেমে নিহত কর্মীদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য অর্থসংগ্রহ করবেন তাঁরা। ৪ মে থেকে ৬ মে— তিন দিন রাজ্যে থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। ৫ তারিখ শিলিগুড়িতে হবে সমাবেশ এবং ৬ তারিখ কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠক। এর পর ৭ মে ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছবেন বিজেপি নেতারা। ‘শহিদ’ পরিবারের কাছে আর্থিক সাহায্য নিয়ে যাওয়া হবে। এর পর ৮ এবং ৯ মে দক্ষিণবঙ্গের ব্লক স্তরে মিছিল করবে বিজেপি। ১০ মে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় এনে ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি পালন করবে বিজেপি। ওই দিন বিকেলে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার কথা বিজেপি নেতৃত্বের। পর দিন ১১ মে প্রত্যেক জেলায় একটি করে মিছিল করবে বাংলার বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy