Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayet Election 2023

বিয়ের ১১ দিনের মাথায় স্ত্রী থানায় যেতেই ‘বেপাত্তা’ বিধায়ক, বিজেপি উদ্বেগে ‘মণি’ মুকুটমণিকে নিয়ে

বিয়ের বয়স যখন মাত্রই ১১ দিন, তখনই তাঁর স্ত্রী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন বধূ নির্যাতনের। অভিযোগ আরও রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে কথা বলা যাচ্ছে না বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে।

বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী।

বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ১৮:৪০
Share: Save:

বিয়ের শংসাপত্র বলছে বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী রেজিস্ট্রি করেছেন গত ২৮ মে। স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী তিলজলা থানায় বধূ নির্যাতন-সহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন গত ৭ জুন। অর্থাৎ, বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথাতেই অভিযুক্ত হয়েছেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক। অবশ্য সেই খবর জানাজানি হয়েছে রবিবার সন্ধ্যায়। কিন্তু তার পর থেকে মুকুটমণির আরও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না!

রবিবার সন্ধ্যায় প্রথম আনন্দবাজার অনলাইন মুকুটমণিকে নিয়ে ওই খবর করার সময় থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, বিজেপির বিধায়কের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ পুলিশ ‘গুরুত্ব’ দিয়েই দেখছে। কিন্তু তারাও মুকুটমণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। যেমন পারছেন না রাজ্য বিজেপির নেতারাও। তাঁরাও জানাচ্ছেন, ফোন বেজেই যাচ্ছে মুকুটমণির। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের বক্তব্য, ‘বিচারাধীন বিষয়’ বলেই তিনি এখন মুখ খুলতে চাইছেন না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন না।

আইনের ছাত্রী স্বস্তিকার সঙ্গে মুকুটমণির সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই। গত ১৩ মার্চ আইনি বিবাহের জন্য আবেদন করেন তাঁরা। এর পরে বিবাহও হয়। দু’জনের পরিবারের লোকেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিয়েতে বাইরের কেউ আমন্ত্রিত ছিলেন না বলেই জানা গিয়েছে। স্বস্তিকার অভিযোগ, বিয়ের পর দিন থেকেই নাকি মুকুটমণি সহমতের ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে শুরু করেন! শুধু তা-ই নয়, বড় অঙ্কের টাকার দাবিও করেন। তবে এ ব্যাপারে মুকুটমণির পরিবারের কারও সঙ্গেও কথা বলা যায়নি। কেউই ফোন ধরছেন না। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও এ ব্যাপারে নীরব। সকলেই বলছেন, বিষয়টি ‘পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত’। তবে প্রকাশ্যে না বললেও দলের ‘সম্পদ’ হিসাবে পরিচিত মুকুটমণির বিপদ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য নেতারা।

মুকুটমণি অধিকারী-নরেন্দ্র মোদী।

মুকুটমণি অধিকারী-নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

শিক্ষিত এবং বিশিষ্টজন হিসাবে বিজেপিতে বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছেন মুকুটমণি। ৩৩ বছর বয়সেই তাঁর মুকুটে অনেক পালক গুঁজে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের ছাত্র মুকুটমণি কলকাতার এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ২০১৪ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। পরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমডি পড়া শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি সক্রিয় রাজনীতিতে চলে আসায়। চুঁচুড়ার ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল, এম আর বাঙ্গুর এবং এসএসকেএম হাসপাতালেও চিকিৎসক হিসাবে চাকরি করেছেন।

এসএসকেএমের চিকিৎসক থাকার মধ্যেই ২০১৯ সালে রানাঘাট লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী করে মুকুটমণিকে। সেই সময়ে তিনি ইস্তফা দিলেও তা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য দফতর। ফলে বিজেপিকে প্রার্থী বদল করতে হয়। ওই আসন থেকে জিতে সাংসদ হন জগন্নাথ সরকার। বিজেপি মনে করে জগন্নাথের জয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা মুকুটমণির ভূমিকা ছিল। লোকসভা নির্বাচন মেটার পরে পরেই হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে যোগ দেন মুকুটমণি। বিজেপি নদিয়া জেলার সম্পাদক করে মুকুটমণিকে। একই সঙ্গে তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের জেলা ও রাজ্যের পদ পান। বিজেপি পরে তাঁকে দলের উদ্বাস্তু শাখার সহ-আহ্বায়ক করে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণে তাঁকে প্রার্থী করা হয়। ১৬,৫১৫ ভোটে জয় পান মুকুটমণি।

বিজেপিতে আসার পরেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে আসেন মুকুটমণি। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বিজেপি নতুন জাতীয় কর্মসমিতি ঘোষণা করলে তাতেও রাখা হয় তাঁকে। ৩৩ বছরের মুকুটই দলের জাতীয় কর্মসমিতির ‘কনিষ্ঠতম’ সদস্য। রাজ্য বিজেপিও ২০২২ সালে তাঁকে তফসিলি মোর্চার রাজ্যে ‘ইনচার্জ’ ঘোষণা করে। অন্য রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়াতে ২০২২ সালে প্রথমে তেলেঙ্গানা ও পরে বিহারে বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের সফর করতে বলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, আসলে সেগুলি ছিল রাজ্য স্তরের নেতাদের প্রশিক্ষণ পর্ব। সেই সময়ে দু’টি রাজ্যেই কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন মুকুটমণি।

নদিয়ার মাজদিয়া ও বাদকুল্লায় বিনামূল্যের চিকিৎসাকেন্দ্রও চালান মুকুটমণি। একই সঙ্গে বিজেপি এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের সংগঠন সামলান। যা বিজেপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মুকুটমণিকে রানাঘাট আসনে প্রার্থীও করতে পারে বিজেপি। অন্য দিকে, বিধানসভাতেও বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ বিধায়কদের তালিকায় রয়েছেন তিনি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী— সকলেরই পছন্দের মুকুটমণি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এখন উঠেছে অভিযোগ।

স্ত্রী স্বস্তিকা মোট ৬টি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মুকুটমণির বিরুদ্ধে। বধূ নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে টাকা আদায়, বিশ্বাসভঙ্গ, আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগও আনা হয়েছে। তার পর থেকেই আড়ালে মুকুটমণি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy