সন্দেশখালি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সন্দেশখালি কাণ্ডে রোহিঙ্গা যোগ আছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। আর রাহুল সিংহের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিতেই রাজ্যে অশান্তি হচ্ছে। সোমবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে আলাদা আলাদা ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করলেন ওই দুই নেতা।
সন্দেশখালি নিয়ে প্রথমে সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুকুল রায়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তের ওপার থেকে লোক ঢুকিয়ে অশান্তি বাধানো হচ্ছে। আমার কাছে খবর রয়েছে, সন্দেশখালির ঘটনায় হাত রয়েছে রোহিঙ্গাদের। আমার ধারণা মূল অভিযুক্ত হয়তো আর দেশেই নেই। সে বাংলাদেশ পালিয়ে গিয়েছে বলে জানতে পারছি।’’
তাঁর সরকার ভেঙেদিতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তি বাধাচ্ছে বিজেপি, সোমবার দুপুরে নবান্নে দাঁড়িয়ে এমনই দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দেন বিজেপির কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়। বিজেপির তেমন কোনও অভিপ্রায় নেই বলেই সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও রাজ্যে সরকার ভাঙেনি বিজেপি। মিথ্যা আশঙ্কায় ভুগছেন মমতা। তার চেয়ে বরং নিজের ঘর সামলান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার ভেঙে দেওয়ার কোনও ইচ্ছা বিজেপির নেই। মানুষের রায় বলছে, এ বারে তৃণমূল যা ভোট পেয়েছে, বিরোধীদের ভোট তার চেয়ে বেশি। তৃণমূল পেয়েছে, ২ কোটি ৪৭ লক্ষ ভোট। তাদের বিরুদ্ধে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন মানুষ। বিরোধীরা ৩ কোটির উপর ভোট পেয়েছে।’’
আরও পড়ুন: মৃত বাঘের চেয়ে আহত বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর: বিজেপিকে হুঁশিয়ারি মমতার
তবে সন্দেশখালি নিয়ে এ দিন মুকুল রায়ের চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। মুকুলের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘শেখ শাজাহান, বাবু মাস্টারের মতো সমাজবিরোধীদের বলে দিচ্ছি, এখনও সংযত হন। এই শেখ শাজাহান একসময় সিপিএম-এর হয়ে সন্ত্রাস করতেন। তখন তাঁকে গ্রেফতার করতে আন্দোলন করতে দেখেছি তৃণমূল নেতাদের। পুলিশের কাছে ধর্না দিতে দেখেছি। আজ সেই শাজাহান তৃণমূলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের ত্রাসে পরিণত হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শেখ শাজাহান।।’’ সন্দেশখালি কাণ্ডের জন্য সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে রাহুল বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেবেন বলেছিলেন মমতা। তাই শুরু হয়েছে। বাংলার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কময় অধ্যায়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে আইন হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর উস্কানিতেই একের পর এক হামলা হচ্ছে।’’
জনাদেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেও এ দিন দাবি করেন মুকুল রায়। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মানুষ। ছেড়ে দেব, ষড়যন্ত্র চলছে, এ সব নাটক না করে মানুষের রায় তো মাথা পেতে মেনে নিতে পারতেন মমতা। এখনও পর্যন্ত মানুষের রায় মেনে নেননি উনি। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে দেখান উনি। আজ পর্যন্ত অবধি কোনও রাজ্যে সরকার ভাঙেনি বিজেপি। মিথ্যা আতঙ্কে ভুগছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিদ্রাযাপন হচ্ছে না ওঁর। তার চেয়ে বরং নিজের ঘর সামলান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্র নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন কী ভাবে হয়েছে দেখেননি আপনারা। লোকসভা নির্বাচনে সারা ভারতে কোথাও কেউ চড় পর্যন্ত খায়নি। খুন হয়নি কেউ। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই অশান্তি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তা অস্বীকার করতে পারেন?’’
আরও পড়ুন: শাজাহান বাহিনীতে ‘রোহিঙ্গা’, সন্দেশখালি ফুঁসছে গ্রেফতারের দাবিতে, দায়ের ৩ এফআইআর
বিজেপির দাবি, ২৩ মে নির্বাচনের শুরু থেকে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বাংলায় তন্ময় সাহা, সন্টু ঘোষ, চন্দন সাউ, সুশীল মণ্ডল, অজয় মণ্ডল, সুকান্ত মণ্ডল ও প্রদীপ মণ্ডল নামের ৭ জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন এবং শঙ্কর মণ্ডল, দেবদাস মণ্ডল ও সঞ্জয় মণ্ডল নামের তিন জন এখনও নিখোঁজ। তবে নিখোঁজ তিনজনকেও গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন মুকুল রায়। এ দিন বিজেপির নিখোঁজ কর্মীদের নাম-ঠিকানা জানতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘নাম-ঠিকানা দিতে রাজি আছি। কিন্তু উনি ফেরত দিতে পারবেন তো? আর তা না হলে পদত্যাগ করবেন তো?’’ অন্য দিকে, আজই হাওড়ায় এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। বাংলার নন, মমতা আসলে তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করছেন, তাই বিজেপি কর্মী মারা গেলে তাঁর কিছু যায় আসে না বলে অভিযোগ তোলেন মুকুল রায়।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy