শনিবার কাটোয়ায় ঢাক বাজালেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রামের কাছে রাধাগোবিন্দ মন্দির। শনিবার ওই মন্দিরে পুজো দিতে গেলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। সেখানেই দেখা গেল এক বেনজির দৃশ্য। নড্ডা যখন মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন, তখন বাইরে ঢাক বাজাচ্ছেন রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষককে কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁকে সঙ্গ দিতে হাতে ঢাকের কাঠি নেন বঙ্গ বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিংহও। দুই নেতা ঢাকে সে ভাবে শচীনদেব বর্মণ-খ্যাত ‘বাংলা মায়ের বোল’ তুলতে না পারলেও ঝপাঝপ ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলতে শুরু করে। কৈলাসের ঢাক বাজানোর ছবি তুলতে মোবাইল নিয়ে হামলে পড়েন আশপাশের বিজেপি কর্মীরাও।
কিন্তু আচমকা ঢাক বাজাতে গেলেন কেন কৈলাস? এ কি নিজেকে তৃণমূলের রাজনৈতিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা? যেখানে তাঁকে বার বার ‘অবাঙালি’ এবং ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে? শাসক শিবিরের ‘বহিরাগত’ আক্রমণের কেন্দ্রে তো কৈলাসই!
বিজেপি-র কোনও অনুষ্ঠানেই ঢাক বাজানোর তেমন রেওয়াজ দেখা যায় না। দলের ‘প্রেরণাদায়ক’ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে বাজনার চল থাকলেও তাতে মূলত বিদেশি অনুকরণ। বিদেশি ব্যান্ড পার্টির মতোই আরএসএসের ‘ঘোষবাহিনী’ আছে। সঙ্ঘ সদস্যদের সেই প্রশিক্ষণও নিতে হয়। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও একদা সেই ‘ঘোষবাহিনী’-র সদস্য ছিলেন বলে শোনা যায়। সেই শিক্ষার নজির দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালের ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর দিন। করোনার মোকাবিলায় সেদিন বিকেলে থালা, বাসন, শাঁখ বাজাতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিলীপ বাজিয়েছিলেন বিউগল। মোদীকেও একবার জাপানে গিয়ে ‘টাইকো ড্রাম’ বাজাতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা কৈলাসের হাতে বাঙালির ঢাকের কাঠি দেখা গেল এই প্রথমবার।
ঢাক বাজালেন রাহুল সিংহও।
প্রশ্ন সেই কারণেই। কারণ, ঢাক মূলত বাঙালির বাদ্যযন্ত্র। শক্তি সামন্তর ‘অনুসন্ধান’ ছবিতে ঢাক বাজিয়েছিলেন ‘বাঙালি নায়ক’ অমিতাভ বচ্চন। ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফি বছর বড়িশার দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজাতে দেখা যায়। সেলেবরা ‘নিজের ঢাক নিজে পেটাতে’ মাঝে মাঝেই কাঠি হাতে নিলেও বাজানোটা মোটেও সোজা নয় বলেই জানিয়েছেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘ঢাক বাজানো একেবারেই সহজ নয়। কাঠি দুটো ব্যবহার করার বিশেষ কায়দা আছে। যার জন্যই গুরুগুরু আওয়াজটা তৈরি হয়। এমন আওয়াজ বার করাটা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। তবলায় যেমন নানা রকম বোল, তেমনই ঢাকেও আছে। ঢাকের একটা আলাদা ভাষাও আছে।’’
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের টিকা দ্রুত ব্রাজিলে পাঠাতে মোদীকে আর্জি প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর
সিনেমা, খেলা বা রাজনীতির সেলেবরা ঢাক বাজিয়ে প্রচারের আলোয় এলেও সত্যিকারের ঢাকিদের জীবনে যে অনেক অন্ধকার, সেটা কারও অজানা নয়। সারা বছর অন্য কোনও কাজ না থাকায় চাষাবাদ বা রাজমিস্ত্রির কাজ করেই সংসার টানতে হয় ঢাকিদের। এর বাইরে নন এমনকি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ঢাকি লালু দাসও। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা লালু ঢাক বাজাতে গিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে। এখন বয়স ষাটের উপর। কিছুদিন আগে পর্যন্তও অফ-সিজনে ভ্যান রিকশা চালাতেন। বয়সের ভারে এখন আর পারেন না। তবে ফি বছর দুর্গাপুজোয় মুম্বই যান। গায়ক অভিজিতের লোখান্ডওয়ালার বাড়ির পুজোয় তিনি বাঁধা ঢাকি। করোনার জন্য গত পুজোয় অবশ্য যেতে পারেননি।
আরও পড়ুন: ভারতে তৈরি দু’টি ভ্যাকসিন মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে, দাবি মোদীর
সাত পুরুষ ধরে ঢাকি লালু দাস একেবারেই পছন্দ করেন না সেলেবদের উল্টোপাল্টা ঢাকে কাঠি চালানো। বললেন, ‘‘এর জন্য অনেক শিখতে হয়। সারা জীবন লেগে যায় শিখতে। চার মাত্রার নাচের বাজনা অনেকেই বাজিয়ে দেয় কিন্তু সেটাই সব নয়। আমকাঠের ঢাককে বাঁশ কিংবা বেতের কাঠি দিয়ে কথা বলানো ছেলেখেলা নয়।’’ কৈলাস-রাহুলদের ঢাক বাজানোর কথা শুনে রাগত গলাতেই লালু বললেন, ‘‘নিজেরা ঢাক না বাজিয়ে ওঁরা বরং ঢাকিদের জন্য কিছু করা যায় কি না ভাবুন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy