(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের সমীক্ষা শুরু হওয়ার পরে বিভিন্ন জেলায় ক্ষোভের ছবি দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক ‘অযোগ্য’ নাম তালিকা যাচাই প্রক্রিয়ায় সামনে এসেছে বলে অভিযোগ করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। এ বার সেই অভিযোগের ইডি তদন্তের দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দেবে রাজ্য বিজেপি চিঠি। সোমবার এই ঘোষণা করেছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।
জগন্নাথ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে যে তালিকা জমা দিয়েছিল, তাতে জল ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এখন রাজ্য নিজে খরচ করার আগে তালিকা যাচাই শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তাতে বড় অংশের অযোগ্য নাম রয়েছে বলে রাজ্যই জানতে পেরেছে।’’ যার জবাবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এটা সম্পূর্ণ রাজ্যের টাকায় বাংলার বাড়ি প্রকল্প। কেন্দ্রের এক টাকাও দেওয়ার কথা নয়। তবু বিজেপি বাগড়া দিতে চাইছে। কারণ, ওরা বাংলার ভাল চায় না।’’ বিজেপিকে ‘বাংলার শত্রু’ আখ্যা দিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘মানুষকে টাকা না দেওয়াটাই বিজেপির সংস্কৃতি। ওরা আবার সেটাই করতে চাইছে।’’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ এবং রাজ্যের ৪০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৯-’২০ এবং ২০২০-’২১ অর্থবর্ষের টাকা আসার আগেই রাজ্য বিজেপি ‘স্বজনপোষণ’ করে ‘অযোগ্য’ ভোক্তাদের আবাস প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ তোলে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সেই অভিযোগ পেয়ে অর্থ পাঠানো বন্ধ করেছিল। তার পরে কেন্দ্র ওই প্রকল্পে রাজ্যের জন্য আর বরাদ্দ করেনি।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পূর্ণ রাজ্যের টাকায় বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প চালুর ঘোষণা করেন। এখন তারই সমীক্ষার কাজ চলছে। সোমবার জগন্নাথ দাবি করেন, গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত যা সমীক্ষা হয়েছে, তার রিপোর্ট গত ৩০ নভেম্বর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং পঞ্চায়েত সচিব পি উগলানাথন পেশ করেছেন নবান্নে। তাতে এখনও পর্যন্ত সমীক্ষাকৃত ২২.৭৬ শতাংশ ‘অযোগ্য’ নাম তালিকায় রয়েছে। বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘তখনও পর্যন্ত ১৮ লাখ৩৬ হাজারের কিছু বেশি বাড়ির সমীক্ষা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে তাতেই তালিকার ৪ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৪৫ বাড়ি প্রাপক অযোগ্য। ৪৫ লাখের তালিকা যাচাই হলে এই সংখ্যাটা শতাংশের হিসাবে ১০ লাখ ২৪ হাজার হয়ে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, সামনেই রাজ্যের পাঁচ জেলার ছয় বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। তাই নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে ওই সমীক্ষা আপাতত বন্ধ আছে।
দু’বছর আগে ঝাড়াইবাছাই করে একটা ‘স্থায়ী তালিকা’ বা ‘পিডব্লুএল’ (পারমানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট) তৈরি করেছিলেন রাজ্য সরকারের আধিকারিকেরা। তার পরেও একটা বড় অংশের আবেদনকারীদের পাকা বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরে বর্তমান সমীক্ষায় আরও অনেক নাম বাদ পড়তে পারে বলে আগেই প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জগন্নাথ দাবি করেছেন, সব চেয়ে বেশি নাম বাতিল হয়েছে নদিয়া জেলায়। সেখানে ৩৮.২৩ শতাংশ নাম ‘অযোগ্য’ বলে সরকারি তথ্যে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও উপরের দিকে আছে যে সব জেলা, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান (৩৭.৩১ শতাংশ), মালদহ (৩৫.৪৭ শতাংশ), হাওড়া (৩২.১২ শতাংশ) এবং মুর্শিদাবাদ (৩২.০১ শতাংশ) জেলার নাম।
বাংলা আবাস যোজনার তালিকা যাচাইয়ে বহু নাম বাদ পড়া নিয়ে অনেক এলাকায় অসন্তোষ তৈরি হওয়ায় নিয়মের কড়াকড়ি শিথিল করে ‘মানবিক’ হয়ে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিষয়ে জগন্নাথের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ‘মানবিক’ হতে বলে আসলে দুর্নীতিকেই মদত দিতে চাইছেন।’’ তবে ওই অভিযোগে তৃণমূল যে একেবারেই গুরুত্ব দিতে চাইছে না, তা বুঝিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘এটা রাজ্যের প্রকল্প। ১০০ শতাংশ খরচ রাজ্যের। সুতরাং বিজেপির এর মধ্যে নাক গলানোর দরকার নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy