Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Nabanna Rally for R G Kar Protest

শুভেন্দু-অনুগামীদেরই ভিড়, প্রশ্ন প্রভাব নিয়ে

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেই অভিযানে জাতীয় পতাকা হাতে হাঁটবেন বলেও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি না-গেলেও আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে কার্যত রইলেন ‘দাদার অনুগামী’রাই।

পুলিশকে নিশানা করে পাথর ছুঁড়ছেন বিক্ষোভকারী।

পুলিশকে নিশানা করে পাথর ছুঁড়ছেন বিক্ষোভকারী। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২১
Share: Save:

তিনিই প্রথম ডাক দিয়েছিলেন দলীয় পতাকা ছেড়ে জাতীয় পতাকা হাতে নবান্ন অভিযানের। ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজে’র নামে যখন সে ডাক দেওয়া হল, তখনও পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন তিনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেই অভিযানে জাতীয় পতাকা হাতে হাঁটবেন বলেও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি না-গেলেও আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে কার্যত রইলেন ‘দাদার অনুগামী’রাই। কলকাতা ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশে আন্দোলকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের পরে সামনে এল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাত্র সমাজের উপরে ‘আক্রমণে’র প্রতিবাদে আজ, বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ডেকেছেন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এই পথেই সরকার-বিরোধিতার পরিসরে নিজেদের জমি বাড়ানোর চেষ্টা করল বিজেপি।

তবে রাজনৈতিক শিবিরের অন্য অংশের বক্তব্য, আর জি কর-কাণ্ডের পরে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ। সেই সর্বাত্মক আন্দোলনকে আবার দ্বিমেরু রাজনীতির অঙ্কে নিয়ে আসার চেষ্টা হল ‘ছাত্র সমাজের’ বকলমে শুভেন্দুদের এই কর্মসূচির মাধ্যমে। একে তো সরাসরি নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণহীন নবান্ন অভিযান সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। তার মধ্যেই লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে পুলিশের অতি-তৎপরতা’ও নজর এড়ায়নি। যার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদী জনতার বড় অংশের আশঙ্কা, তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক দ্বৈরথে আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের মূল দাবিটাই না পিছনে চলে যায়! এবং সেটা হলে আখেরে রাজ্য সরকারের স্বস্তি।

বস্তুত, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথমে কিছুটা পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল বিজেপি। বরং, সেই জায়গায় অনেক বেশি স্পষ্ট ছিল বামেদের অবস্থান এবং সক্রিয়তা। শেষ পর্যন্ত ‘ছাত্র সমাজে’র নামে ডাকা কর্মসূচিতে পিছন থেকে সব রকম সাহায্য করার কথা বলে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে মরিয়া ছিল বিজেপি। তবে তাদের এই প্রয়াসের প্রভাব শেষ পর্যন্ত ন্যায়-বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পড়বে না দাবি করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র নানা পেশার মানুষের স্লোগান হয়ে উঠেছে ‘তোমার স্বর, আমার স্বর/ আর জি কর, আর জি কর’। মানুষের এই প্রতিবাদকে দিগ্ভ্রান্ত করতে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করতে নেমেছে বিজেপি। এ রাজ্যের রাজনীতিতে বিজেপি এবং তৃণমূল তাদের হারিয়ে যাওয়া দ্বিমেরু রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। প্রশাসনকেও তাতে নামানো হয়েছে। সে জন্যই নবান্নে বিজেপি-র কর্মসূচিতে যত না আন্দোলনকারী ছিলেন, তার থেকে বেশি পুলিশি বন্দোবস্ত, যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়া সাজিয়ে সরকারি তরফেও প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পরিকল্পিত চোর-পুলিশ খেলা। সাজানো চিত্রনাট্য!’’

শুভেন্দুদের আশা ছিল, দলীয় পতাকা ছাড়া আন্দোলনের ডাক দিলে বাম-সহ অন্যান্য দলের ছাত্র-যুবরা তাতে শামিল হবেন এবং তাতে কর্মসূচির ‘সাফল্য’ দেখা যাবে। কিন্তু সিপিএম এবং অন্যান্য বাম সংগঠন এই নবান্ন অভিযান থেকে দূরত্ব স্পষ্ট করে দেওয়ায় বিজেপি নেতৃত্বের আক্রমণের তির ঘুরে গিয়েছে বামেদের দিকেও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু যেমন এ দিন অভিযান শেষে দাবি করেছেন, ‘‘সিপিএমের লাগাতার প্রচারের পরেও সফল বিজেপি! সিপিএমের এত নেতিবাচক প্রচারের পরেও যে ভাবে মহিলা, যুব ও বয়স্করা বেরিয়ে এসেছেন, তা অভূতপূর্ব। দু’লাখ মানুষ যোগ দিয়েছেন। ‘মাকু’ আর ‘সেকু’দের বাদ দিয়ে মিছিল যে সফল হতে পারে, সেটা আজ বিজেপি করে দেখিয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তেরও তোপ, ‘‘সিপিএম অনেক কুৎসা করেছে। বিজেপি-আরএসএসের গন্ধ পেয়েছে। নবান্ন থেকে যে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, সেটা বোধহয় ফিশ ফ্রাইয়ের গন্ধে ঢাকা পড়ে যায়! বাংলার মানুষ মুখের উপরে জবাব দিয়েছে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, সিপিএম বাংলার মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন।” নবান্ন অভিযানে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সুকান্তের নেতৃত্বে এ দিন লালবাজার অভিযানও করেছে রাজ্য বিজেপি। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় তাদের। অসুস্থ হয়ে পড়েন সুকান্ত। আহত হন বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

নবান্ন অভিযানে পুলিশের ‘দমন-পীড়নে’র নিন্দা করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা বলেছেন, ‘‘দিদির বাংলায় ধর্ষক ও অপরাধীদের পাশে দাঁড়ানো মূল্যবান কিন্তু নারী নিরাপত্তার জন্য সরব হওয়া অপরাধ!’’ নবান্নমুখী মিছিলে এ দিন দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ, কৌস্তভ বাগচী, অম্বিকা রায় প্রমুখকে। শুভেন্দু নিজে পা না-মেলালেও মিছিল ছিল কার্যত তাঁর ‘অনুগামী’দের দখলেই। কল্যাণীর গৌতম দাস থেকে সাগরের দেবকুমার জানা, দমদমের অনিতা দাসেরা মিছিল জুড়ে টানা ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ দাবি করেছেন। কিন্তু তেমনটা হলে কে বসবেন ওই পদে? প্রশ্ন শুনে তাঁদের কেউ বলেই ফেলেছেন, ‘‘কেন, শুভেন্দু অধিকারী!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy