শ্রদ্ধা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় জে পি নড্ডা। বৃহস্পতিবার। ছবি: মাসুম আখতার
বাংলার সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাঁরা রাজ্যের সরকার দখলের লড়াইতে নেমেছেন, তাঁদের কাছে ‘পথের পাঁচালী’র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন ‘ঔপনিবেশিক’। বুধবার রাতে কলকাতায় পৌঁছে বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুরে বিভূতিভূষণের বাড়িতে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। দলের তরফে সাড়ম্বরে সেই খবর ও ছবি প্রচার করা হয়। সেই প্রচার-বার্তাতেই বিভূতিভূষণকে ‘ঔপন্যাসিক’-এর বদলে ‘ঔপনিবেশিক’ হিসাবে চিহ্নিত করে বিজেপি। দলের মিডিয়া সেল পরিচালিত হোয়াটস্যাপ গ্রুপে লেখা হয়, ‘‘বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রী জেপি নাড্ডা আজ ঔপনিবেশিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন।’’ কয়েক মিনিটের মধ্যে অবশ্য সেই লেখা মুছে ভুল সংশোধন করে ‘ঔপন্যাসিক’ লিখে ফের বার্তাটি দেওয়া হয় হোয়াটস্যাপ গ্রুপে। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র বাংলা সম্পর্কে জ্ঞান নিয়ে কটাক্ষে নেমে পড়েছে বিরোধীরা।
যেমন— রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, ‘‘আগে প্রথম ভাগের প্রথম পাতাটা পড়ুক। সোনার বাংলা গড়তে গেলে ‘স’ পর্যন্ত পৌঁছতে হয়। সেটা ওদের এ জীবনে আর হল না!’’ তৃণমূলের আর এক নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘নড্ডা নাকি বাংলার জামাই। এত দিন বঙ্কিমের বাড়ি যাননি কেন?’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘বিজেপি তৈরি হওয়ার পর থেকে কখনও বাংলার মনীষীদের নাম উচ্চারণ করেনি। যাঁরা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অমর্ত্য সেন বা মাদার টেরেসাকে কখনও নিজেদের বলে গ্রহণ করতে পারেনি, তাঁরা এখন ভোটের সময় খুঁজে খুঁজে কবিতার লাইন বার করছেন। এটা করতে গিয়ে হাস্যকর সব ভুল হয়ে যাচ্ছে!’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য বলেন, ‘‘লেখার সময় টাইপ করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে। সেই ভুল সংশোধনও করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাঁরা এখন এটা নিয়ে হইচই করছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা শব্দ উচ্চারণ এবং ইতিহাসের তথ্যের ভুলগুলো কি শুনতে পান না?’’
নড্ডার এ দিন কলকাতা থেকে নৈহাটি পর্যন্ত ঠাসা কর্মসূচি ছিল। সকালে বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’ শীর্ষক প্রচার অভিযানের সূচনা করেন তিনি। ওই অভিযানে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল ভ্যান ঘুরবে। প্রতিটি ভ্যানেই রাখা থাকবে অন্তত ১০০টি করে বাক্স। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির জন্য সেই বাক্সগুলিতে জনমত জমা নেওয়া হবে। রাজ্যের উন্নতির জন্য বিজেপির কাছে সাধারণ মানুষের কী প্রত্যাশা, তা জানতে এই ভাবে ২ কোটি মানুষের মত নিতে চায় দল। হেস্টিংস থেকে নৈহাটিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে যান নড্ডা। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে আসতে পেরে আমি ধন্য। যে চেয়ার-টেবিল তিনি ব্যবহার করতেন, যেখানে বসে তিনি বন্দেমাতরম্ লিখেছিলেন, তা দেখার সৌভাগ্য হল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রেরণা নিয়ে আমরা সোনার বাংলা গড়ব।’’ গৌরীপুরে এক চটকল শ্রমিকের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বিজেপি সভাপতি ব্যারাকপুরে বিভূতিভূষণের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। পরে ব্যারাকপুরেই আনন্দপুরী মাঠে জনসভা করেন তিনি। ব্যারাকপুরে আনন্দপুরী কালীমন্দির এবং মঙ্গল পাণ্ডের স্মৃতিসৌধেও নড্ডা যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy