মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
যাদবপুর কাণ্ডে সুর আরও চড়াল বিজেপি। দুপুরে মিছিল বেরল বিজেপি সদর দফতর থেকে, অবরোধ হল ধর্মতলা। তার পরেই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) অবস্থানে বসল গাঁধীমূর্তির পাদদেশে। বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে রাজ্য সরকার এবং নকশালপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্র তোপ দাগলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অন্য দিকে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুকুল রায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র যোগদানকে ঘিরে যে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেই তার নিন্দা করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কোনও রাখঢাক না করে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজভবন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে। আজ বিজেপি-ও সেই সুরেই কথা বলল। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যে র্যাফ ৬ ঘণ্টা বাদে নামানো হল, তা ২ ঘণ্টা আগে কেন নামানো হল না? আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানাব।’’ একই সঙ্গে তিনি তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকেও। দিলীপ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাইছিলেন যাতে বাবুলের উপর আক্রমণ হয়। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে এমনটা আশা করিনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
গত কালকের ঘটনা নিয়ে এসএফআই, নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে মিলিত ভাবে দায়ী করেছেন দিলীপ ঘোষ। ‘বহিরাগত’রাও সে সময় ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে ফুঁসে ওঠেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। হুমকির সুরেই দিলীপ বলেন, ‘‘পাকিস্তানে যেমন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছে তেমন ভাবেই কমিউনিস্টদের ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ বিক্ষোভকারীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলেও আখ্যা দিতে ছা়ড়েননি তিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপির পাল্টা তাণ্ডব নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন দিলীপ ঘোষ। এ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দিলীপ বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করা অরাজকতা নয়। প্রতিবাদের ধরন কী হবে তা কেউ বলে দেবে নাকি? এমন পরিস্থিতি হলে ঠিক করেছে। আগামী দিনেও এমন করব। কারও দম থাকলে আটকাক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে ভাবে ওরা আক্রমণ করেছে, তাতে আমরা বুঝে গিয়েছি ওরা ওই ভাষাই বোঝে। তাই আমাদের কর্মীরাও লাঠি, বাঁশ নিয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে কেউ রসগোল্লা এবং চা নিয়ে যায় না।’’
আরও পড়ুন: যাদবপুরের হিংসা-তাণ্ডবের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনেরা, রাজ্যের কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আবেদন
যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজেপির মিছিল। নিজস্ব চিত্র
মাওবাদীদের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ বা ঝাড়খণ্ডে যেমন ব্যবহার করা হয়েছে তেমনই করা উচিত বলে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন দিলীপ ঘোষ। গতকালকের ঘটনা নিয়ে উপাচার্যের ইস্তফাও দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘বিতর্কের কথা না ভেবে রাজ্যপাল ছুটে গিয়েছেন। তিনি সাহস দেখিয়েছেন। রাজ্যপাল ধন্যবাদের পাত্র।’’
গতকাল রাজ্যপালের হস্তক্ষেপেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও অবস্থা থেকে মুক্তি পান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। আজ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় এবং সাংসদ অর্জুন সিংহ। রাজভবন থেকে বেরনোর পরে মুকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে ‘সাহস’ দেখিয়েছেন তা ‘কুর্নিশ করার যোগ্য’। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের লোক ঢোকানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন মুকুল রায়। বাবুল সুপ্রিয় চুল ধরে টানার একটি ছবি দেখিয়ে মুকুল দাবি করেন, ওই ছবিতে যাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে টানতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নন এবং তাঁর মতো বহিরাগতদের জড়ো করে বাবুলের উপরে আক্রমণ করা হয়েছে বলে মুকুল অভিযোগ করেন। অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের সময়ে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক ছিল না বলে মত মুকুলের। গোলমালের কথা শুনে রাজ্যপাল ছুটে যেতে পারলেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন যেতে পারলেন না, সে প্রশ্নও মুকুল রায় তোলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে মুকুল রায় বলেন, ‘‘ওঁর এখন অনেক কাজ। অনেককে দেখতে হচ্ছে। পুলিশ দেখা সম্ভব হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।’’
রাজ্য বিজেপি সদর দফতর থেকে এ দিন যে মিছিলটি বেরিয়েছিল, সেটি ধর্মতলা পৌঁছে ডোরিনা ক্রসিং অবরোধ করে। রাজ্য বিজেপির দুই সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে। যাদবপুরে যাঁরা হামলা করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়র উপরে, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কেউ ছাড় পাবেন না বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন। উপাচার্যকে তীব্র কটাক্ষ করে রাজু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল চল্ছে আর তিনি হাসপাতালে শুয়ে রয়েছেন! ওখানেই থাকুন। আপনার জন্য আমরা এ বার হাসপাতালে স্থায়ী বেডের ব্যবস্থা করে দেব।’’
আরও পড়ুন: অবস্থান বিক্ষোভে এবিভিপি, মিছিল বিজেপি-এসএফআইয়ের, যাদবপুরকে ঘিরে উত্তাল শহর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy