Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sovan Chatterjee

‘অমর প্রেম’ নিয়ে বিব্রত বিজেপি, মুখ পোড়ার পর ‘কাঁটা’ মুক্তির দাবি

শোভন-বৈশাখী জুটিকে সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ময়দানে নামানোর উদ্যোগ মূলত নিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই।

শোভন এবং বৈশাখী।

শোভন এবং বৈশাখী।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫৫
Share: Save:

গলা যে খুব সুরে বাজে তা নয়। তাঁকে কেউ গান-টান গাইতেও বিশেষ শোনেননি এর আগে। কিন্তু সোমবার দুপুরের পর থেকে রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা আপনমনে গুনগুন করছিলেন, ‘‘সখী ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলই যাতনাময়।’’

ঠিকই। রবিঠাকুরের এই লাইন দু’টিই সোমবারের থিম সং হয়ে রইল রাজ্য বিজেপি-র কাছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এর আগেও ‘মান-অভিমান’ ঘটিত বিতর্ক সামলাতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তবে এমন ভাবে যে অতীতে তাঁদের মুখ পোড়েনি, তা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। এত দিন যে সব কর্মসূচিতে আসছেন বলেও বান্ধবীর মন রাখতে শোভন আসেননি, সেগুলি সবই ছিল বিজেপি-র ঘরোয়া কর্মসূচি। কিন্তু সোমবারই ছিল প্রথম প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি। কিন্তু সেখানেও বিস্তর নাটকের শেষে শোভন-বৈশাখীকে ছাড়াই কর্মসূচি পালন করতে হওয়ায় ঘোরতর ‘বিব্রত’ বিজেপি। তবে কি না, গতস্য শোচনা নাস্তি। তাই বিজেপি-র রাজ্য দফতরে সেই অস্বস্তির ছবির মধ্যেও রয়ে গেল সোমবারের নাটকের দুই প্রধান চরিত্রের ‘প্রেম’ নিয়ে লঘু চাপল্য। তবে সে সবের মধ্যে সোমবারই ইঙ্গিত মিলেছে যে, শোভন-বৈশাখীকে আর বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। দু’জনের বসার জন্য দলের রাজ্য দফতরে একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছিল। লাগানো হয়েছিল নেমপ্লেটও। সোমবার বিকেলের পরে সে সব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তালা ঝোলানো হয়েছে কলকাতা জোনের জন্য নির্দিষ্ট ঘরটিতে।

আরও পড়ুন : বৈশাখীর গোসা ভাঙল না, এলেন না শোভনও, চরম বিব্রত বিজেপি

বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার বছর দেড়েক পরে শোভন-বৈশাখী জুটিকে সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ময়দানে নামানোর উদ্যোগ মূলত নিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই। কথা ছিল, শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বাইক র‌্যালিতে থাকবেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। প্রস্তাবিত বাইক র‌্যালির মূল মুখ ছিলেন ওই তিন জনই। কিন্তু শেষবেলায় কার্যত একা হয়ে যান কৈলাস। কথা ছিল, কৈলাস সোজা আলিপুরে যাবেন মিছিলে যোগ দিতে। কিন্তু রুট বদলে তিনি চলে আসেন হেস্টিংসে মোড়ে রাজ্য বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ে। সেখান থেকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহকে সঙ্গী করে যান মিছিল শুরু করতে। কর্মসূচিতে নাম না থাকলেও ট্যাবলোয় কৈলাসের পাশে দাঁড়িয়ে কার্যত দলের মুখরক্ষা করেন মুকুল-অর্জুন।

শোভন-বৈশাখী ছাড়াই মান রক্ষার মিছিল।

বাংলায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর প্রধান দূত কৈলাসের কোনও কর্মসূচিতে এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। যাকে ‘অপমানজনক’ মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একটা বড় অংশ। কেন বৈশাখী শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসলেন, কেন শোভনও র‌্যালিতে এলেন না, তাঁর সঠিক কারণ নিয়ে ধন্দ কাটেনি তাঁদের। অনেকের মতে, শঙ্কুদেব পণ্ডাকে কলকাতা জোনের কমিটিতে রাখা বা ‘সঠিক’ ভাবে আমন্ত্রণ না জানানোর মতো যে সব কারণ বৈশাখী বলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তা ‘ছেঁদো’ যুক্তি। রাজ্য বিজেপি-র একাংশ মনে করছে, আসলে বিজেপি-কে ‘বিড়ম্বনায়’ ফেলাই ওই জুটির লক্ষ্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা ড্যামেজ কন্ট্রোলের ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর পর বিজেপি শিবির থেকে এমনটাও দাবি করতে হয়েছে যে, বৈশাখী আচমকা অসুস্থ হওয়াতেই র‌্যালিতে আসেননি শোভন-বৈশাখী।

আরও পড়ুন : সফল ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি, তা দেখেই ভয় পাচ্ছে বিজেপি: শশী পাঁজা

প্রসঙ্গত, শোভনকে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে নেওয়ার সময় দলের একটা অংশের অমত ছিল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাম জড়য়ি থাকা থাকা ছাড়াও নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত শোভন। এ ছাড়াও তাঁদের বক্তব্য ছিল, স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে বান্ধবী বৈশাখীর সঙ্গে থাকায় শোভনকে নিয়ে জনমানসে ‘ভাল ধারণা’ নেই। ওই সব যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ওই নেতারা জানিয়েছিলেন, শোভনকে নিলে দলের ‘ভাবমূর্তি’ নষ্ট হতে পারে। গত বছর ভাইফোঁটার দিনে শোভন-বৈশাখী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়ার পরেও দলের ‘অস্বস্তি’ নিয়ে সরব হন রাজ্য বিজেপি-র ওই নেতারা। সোমবারের ঘটনার পর তাঁরা ফের সরব। এর শেষ হওয়া দরকার বলেও মনে করছেন ওই নেতারা। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউই কিছু বলতে চাননি। কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রথম সারির নেতা সোমবার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এ নিয়ে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রশ্রয়েই গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন ওঁরা। এখন ওঁদের গেলাও যাচ্ছে না। ওগরানোও যাচ্ছে না। কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই মুখ পুড়বে দলের। তবে এ বার যে ভাবে দলের মুখ পুড়ল, তাতে মনে হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টনক নড়বে।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শওভন-বৈশাখী নিয়ে কী অবস্থান নিতে পারেন, তা নিয়ে কোনও আন্দাজ নেই রাজ্য নেতাদের।

২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী।

সোমবার শোভন-বৈশাখী না আসায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও যে অস্বস্তিতে, তা বোঝা যায় মিছিল শুরুর আগে কৈলাস-মুকুলদের কথা শুনেও। শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গে প্রশ্ন এড়িয়ে কৈলাস বলেন, ‘‘এটা বিজেপি-র মিছিল। আমি যাচ্ছি।’’ আর মুকুল তো প্রশ্নের ধারকাছ দিয়েও না গিয়ে সরাসরি তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় চলে যান। বলেন, ‘‘বিরোধীদের মিছিল করতে না দেওয়াই এই সরকারের লক্ষ্য।’’ আর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ? তাঁর হাবভাব হুবহু ‘তিনি কোনও কিছুতেই নেই’। শোভন-বৈশাখী শেষ পর্যন্ত মিছিলে আসবেন কি আসবেন না প্রশ্নে যখন রুদ্ধশ্বাস নাটক চলছে, তখন দলীয় কার্যালয়েই সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন দিলীপ। পরে হাসিমুখে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেও কোনও প্রশ্নের সুযোগ দেননি। যা দেখে দিলীপ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘অকৃতদার দিলীপদা এ সব প্রেম-ট্রেম বোঝেন না। তাই মাথা ঘামাচ্ছেন না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy