Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

BJP: পার্থর গ্রেফতারে মিম বানাতেই মত্ত বিজেপি, ‘পথ’ ভুলে ভরসা ফেসবুক আর টুইটারে

কেন্দ্রীয় এজেন্সি সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ তুলেছিলেন অনেক বিজেপি নেতা। কিন্তু পার্থ, অর্পিতা গ্রেফতারের পরেও আন্দোলনে সক্রিয় নয় বিজেপি।

নেট মাধ্যমে আছে, পথে নেই বিজেপি।

নেট মাধ্যমে আছে, পথে নেই বিজেপি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২২ ১৮:৫১
Share: Save:

শুক্র সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা জেরা। তার মাঝেই গ্রেফতার শিল্পমন্ত্রী (এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানিয়ে দেয়, ‘পার্থর ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার ২০ কোটির বেশি টাকা। সঙ্গে সোনা, বিদেশি মুদ্রাও। বাংলায় রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগে এমন ঘটনা অতীতে হয়নি। এত নগদ টাকা উদ্ধারের ছবি সামনে আসেনি। সেই হিসাবে এত বড় ঘটনার পরেও রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ নেই বললেই চলে। কংগ্রেস ও সিপিএম ক্ষয়িষ্ণু। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও মেতে রয়েছে নেট মাধ্যমের প্রচারে। ফেসবুক, টুইটারে নেতারা সরব হলেও আন্দোলনের পথ থেকে দূরত্ব অনেক। এমন সমালোচনা বিজেপির অন্দরেই। আদি নেতাদের কেউ কেউ এমন সমালোচনাও করছেন যে, বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে রাজনীতি বোঝা লোকের অভাবই কাল হয়েছে।

অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় বিজেপি ‘অন্যরকম’ বলেও খোঁচা দেওয়া চলছে দলের ভিতরে। এক নেতার কথায়, ‘‘এত বড় ইস্যু অতীতে আসেনি। আগামীতে আসবে কি না জানা নেই। কিন্তু তার জন্য দলের যা করা উচিত, তার উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। রুটিন কর্মসূচি নিয়েই ব্যস্ত নেতারা। এমন হাতেগরম ইস্যু পেয়ে গেলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যে আন্দোলনে নামতে হবে সেটা ভাবার লোকই নেই নেতৃত্বে।’’ শনিবার থেকে কলকাতাতেই রয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁদেরও কাজে লাগানো যেতে পারত বলে অনেকে মনে করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, ইচ্ছা করেই বেশি সক্রিয় নয় দল। কারণ, তাতে দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহারের অভিযোগ বাড়াতে পারে তৃণমূল।

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব যে একেবারে কিছু করেনি তা অবশ্য নয়। তবে তার বেশিটাই হয়েছে ফেসবুক বা টুইটারে। পার্থর বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা যাওয়ার পরেও চুপ ছিলেন নেতারা। কিন্তু যেই মুহূর্তে ইডি জানায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় পার্থর ঘনিষ্ঠ, তার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘মিম’ বানানো। নেট মাধ্যমের উপরে নির্ভরতার জন্য সিপিএমের সমালোচনা করা বিজেপি ‘মিম’ বানানোয় মেতে ওঠে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের টুইটারে পার্থর থেকে অর্পিতার উল্লেখ বেশি দেখা যায়। তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রেও। আর বিজেপির ‘আইটি সেল’ উঠেপড়ে লাগে পার্থকে নিয়ে নানারকম ‘মিম’ ছড়িয়ে দিতে।

শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সুকান্ত মজুমদার।

শনিবার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র

শনিবার অবশ্য কলকাতায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে যান সুকান্ত। সেখানে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন। শনিবার সুকান্ত যাওয়ার আগে অবশ্য ওই মঞ্চে দেখা যায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকেও। সুকান্ত ওই মঞ্চে গিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সকলকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু কলকাতায় বড় রকমের কোনও কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি গেরুয়া শিবিরকে। বরং, রাজ্য নেতারা ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রুটিন সাংগঠনিক বৈঠকে। জাতীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে সেই বৈঠকে কী ভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনে নামা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক পথে নামার সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে শনিবার কলেজ স্ট্রিটে বিজেপি যুব মোর্চার পক্ষে একটি মিছিল হয়। বিক্ষিপ্তি ভাবে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় পথ অবরোধও হয়। কিন্তু সেগুলি কোনও সংগঠিত আন্দোলনের রূপ নেয়নি বলে বিজেপির অন্দরেই অভিযোগ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ বলেন, ‘‘আমরা পথেই রয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেমন মানুষের কাছে যাচ্ছি, তেমন জেলায় জেলায় আন্দোলনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। বাংলা এত বড় দুর্নীতি আগে দেখেনি। এত টাকা উদ্ধার দেখে মানুষ বিস্মিত। ওই ছবি নিয়েই আমরা মানুষের কাছে যাব।’’ যুব মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ দল পথে রয়েছে বলে মনে করলেও, আন্দোলনে আরও তেজ থাকা দরকার বলে তাঁর মত। এখন রাজ্যের সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকা সৌমিত্র বিষ্ণুপুরের সাংসদও। বাদল অধিবেশন চলায় এখন দিল্লিতে রয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘আমরা সাংসদরা অনেকেই দিল্লিতে রয়েছি। এটাও জরুরি কাজ। রাজ্যে যুব মোর্চা পথেই রয়েছে। তবে আমি মনে করি আমাদের আরও বেশি করে পথে নামতে হবে। শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার হাজরা, কালীঘাটে নিয়ে যেতে হবে। শিল্পমন্ত্রীর অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও তুলতে হবে।’’

আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকা কর্মসূচিতে রবিবার উত্তরবঙ্গে চলে গেলেও, কলকাতা-সহ রাজ্যে যে এ নিয়ে আন্দোলন হবে তা জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ সবটাই দেখেছেন। তৃণমূল সরকারের নীচ থেকে উপর কেউ বাকি নেই, যার গায়ে চোর তকমা লাগেনি। শনিবার থেকেই আমাদের কর্মীরা পথে নেমেছেন। আমরা পথেই থাকব।’’ সুকান্ত আন্দোলনে থাকার কথা বললেও, পার্থর বিধানসভা এলাকা বেহালা পশ্চিমেও কোনও প্রতিবাদ দেখা যায়নি বিজেপির পক্ষে। দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন যে, তাঁরা আন্দোলনেই রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শনিবারই মিছিল করেছি। সেই মিছিলে সুকান্তদাও ছিলেন। রবিবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’

শনিবার কলেজ স্ট্রিটে যুব মোর্চার মিছিল।

শনিবার কলেজ স্ট্রিটে যুব মোর্চার মিছিল। নিজস্ব চিত্র

সুকান্ত, ইন্দ্রনীল, সঙ্ঘমিত্রারা আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছেন বলে জানালেও দলেই অনেকে বলছেন, সময় নষ্ট করে ঠিক করছে না বিজেপি। এক নেতা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের অনেক কিছুই শেখার বাকি রয়ে গিয়েছে। এই ধরণের কিছু ঘটলে বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা কী কী করতেন সেটা ভাবা উচিত। সেই ভাবে আন্দোলনে না ঝাঁপালে এতবড় ইস্যু হাতছাড়া হয়ে যাবে।’’ ওই নেতা, কিছু দিন আগেই রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যা বলে গিয়েছেন সে কথার উল্লেখ করেন। মে মাসে অমিত শাহ রাজ্য সফরে এসে বাংলার নেতাদের পথে নামার বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বিরোধী দলের ভূমিকা। এর পরে কলকাতায় এসে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও একই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। এর পরে বিজেপি বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সে ভাবে পথে নেমেছে বলে মানতে রাজি নন দলেরই অনেকে। তাঁদেরই একজনের বক্তব্য, ‘‘শুধু বক্তৃতা দিয়ে কিছু হবে না। বিধানসভা নির্বাচনে কর্মীরা অনেক কিছু আশা করেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। এর পরে সাংসদ, বিধায়করা তৃণমূলে গেছেন। উপনির্বাচন থেকে পুরভোটে হারতে হয়েছে। এ সবের জন্য কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়াতে বড় ভরসা হতে পারে পার্থ-কাণ্ড। সেই চেষ্টা দলকে করতেই হবে। রোজ পথে নামতে হবে। রাজ্যের সব জেল ভরে দিতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy