প্রতীকী ছবি।
উত্তরবঙ্গের পরে এ বার জঙ্গলমহল। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লার পরে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে আরও একটি পৃথক রাজ্যের দাবি উঠল বিজেপির ভিতর থেকে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ বিভাজনের এই দাবি প্রসঙ্গে বিজেপিও বিভাজিত। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যে দলীয় সাংসদদের রাজ্য ভাগের দাবিকে সমর্থন করেননি। রাজ্যের শাসক তৃণমূলের পাশাপাশি বিরোধী বাম, কংগ্রেসও রাজ্য ভাগের দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছে।
বার্লা আগেই উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবিতে সরব হয়েছেন। সেই দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সৌমিত্র সোমবার ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘‘মণিপুর, মিজোরাম ছোট রাজ্য হিসাবে উন্নয়ন করেছে। জঙ্গলমহলের বিকাশের জন্যও আমরা জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি তুলতে পারি। মানুষ চাইছেন। এক যুবক এবং সাংসদ হিসাবে আমিও চাই, জঙ্গলমহলকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হোক। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।’’ এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র আরও বলেন, ‘‘আমাদের ইতিহাস সিরাজদৌল্লার অধীনে ছিল না। কলকাতা ছিল, ঢাকা ছিল। কিন্তু কখনওই বীরভূম, বর্ধমান, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলির একটা অংশ তা ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহিরাগত বলেন, তা হলে আমাদেরকেও এক দিন বহিরাগত বলতে পারেন। কারণ আমরাও মানভূম, সিংভূমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তা হলে আমরা কেন জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি তুলতে পারি না, যা আমাদের ইতিহাসে আগে ছিল।’’
উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা করার দাবির পিছনে বার্লা এবং সৌমিত্র—দু’জনেরই যুক্তি, দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা, অনুন্নয়ন এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দলের দুই সাংসদের বঙ্গভঙ্গের মনোবাসনা প্রকাশ্যে এসে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এ দিন সিউড়িতে সৌমিত্রর বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিজেপির নীতি পরিষ্কার। আমরা পশ্চিমবঙ্গকে একটা রাজ্য হিসাবে দেখি। আর সেই রাজ্যের পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য বিজেপি কাজ করছে। রাজ্য জুড়ে যে ধরনের অত্যাচার, অন্যায় চলছে, তাতে প্রশাসন এবং সরকার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তাতে অনেকে হতাশ হয়ে এ ধরনের মন্তব্য করছেন। দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।’’ বার্লার দাবি প্রসঙ্গেও দিলীপবাবু আগেই জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গ পৃথক হোক, তা বিজেপি চায় না।
বস্তুত, বার্লা এবং সৌমিত্রদের পশ্চিমবঙ্গকে তিন টুকরো করার দাবি যে রাজ্যের মানুষ পছন্দ করবেন না, তা বুঝেই দিলীপবাবু দলের অন্দরে বার্তা দিয়েছেন, রাজ্য ভাগ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। যাঁরা পৃথক রাজ্যের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে কিছু পোস্ট করেছিলেন, তাঁদেরও সেই সব সব পোস্ট সরিয়ে নিতে হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে সাংগঠনিক বৈঠকে দিলীপবাবুর ওই নির্দেশের পরে বিজেপির ওই জেলার সভাপতি বিনয় বর্মণ বলেন, ‘‘দলের রাজ্য নেতারা চাইছেন না, এ সব নিয়ে আর কিছু হোক। দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ ছাড়া পৃথক রাজ্যের দাবিতে জেলায় কোনও আন্দোলন বা প্রচার হবে না।’’
এ দিকে, রাজ্যের শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বিজেপিকে ‘রাজ্য ভাগের চক্রান্তকারী’ হিসাবে প্রচার করতে শুরু করেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘বিজেপি ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছে। আসলে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের নাম করে ওরা বঙ্গভঙ্গ করতে চাইছে। একে ওরা ইতিহাসকে বিকৃত করে। তার উপরে এ রকম একটা জনাদেশের পরে নানা রকম চক্রান্ত করেই যাচ্ছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘এক দিকে বিজেপি বলছে পশ্চিমবঙ্গ দিবস। আর এক দিকে তাদের সাংসদেরা পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার ডাক দিচ্ছেন। এই সব ষড়যন্ত্র কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মনে রাখতে হবে, বঙ্গভঙ্গ রোধ করে গর্বিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর বাংলাকে ভাগ করে গর্বিত হয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।’’
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য ভাগ কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। রাজ্যের মানুষ যে এটা মানবেন না, তা বিজেপি নেতারা জানেন। তবু কেন তাঁরা সাংসদদের এই সব দাবিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এর পিছনে কোনও দুরভিসন্ধি আছে কি না, এটাই প্রশ্ন। যদি এটা বিচ্ছিন্ন ভাবে ওই নেতাদের মন্তব্য হত, তা হলে দল তাঁদের মুখ বন্ধ করার নির্দেশ দিত। অ-বিজেপি সব শক্তিকে এর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy