Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Turban

পাগড়ি-কাণ্ডে রাজ্যের পাশেই বাংলার শিখ সমাজ

দিল্লির ‘শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র প্রতিনিধিরা রবিবার রাজভবনে গিয়ে নালিশ জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানের দিন ধৃত বলবিন্দর সিংহের পাগড়ি খুলে দিয়ে তাঁকে ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে।

বিজেপির নবান্ন অভিযানে শামিল বলবিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুলে গিয়েছে পাগড়ি। এই পাগড়ি খোলা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

বিজেপির নবান্ন অভিযানে শামিল বলবিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুলে গিয়েছে পাগড়ি। এই পাগড়ি খোলা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়াল বাংলার শিখ সমাজ। নবান্ন অভিযানের দিন ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি যে ভাবে শিখ ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে, তার তীব্র বিরোধিতায় সরব কংগ্রেস এবং সিপিএমও। উভয় দলেরই বক্তব্য, যদি কিছু ঘটেও থাকে, তা ইচ্ছাকৃত নয়। বরং, তাদের মতে, নবান্ন অভিযানের দিন ধৃত ব্যক্তির কাছে বন্দুক উদ্ধারের ঘটনাকে আড়াল করার জন্য বিজেপি শিখ ভাবাবেগ নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।

দিল্লির ‘শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র প্রতিনিধিরা রবিবার রাজভবনে গিয়ে নালিশ জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানের দিন ধৃত বলবিন্দর সিংহের পাগড়ি খুলে দিয়ে তাঁকে ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে। তার জেরে শিখ সমাজের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে তৎপর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ধারাবাহিক ভাবে টুইট করতে থাকেন এবং জানিয়ে দেন, তিনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। কলকাতার ‘গুরুদ্বার বড়া শিখ সঙ্গত’ অবশ্য দিল্লির কমিটির নেতা মনজিন্দর সিংহ সিরসাকে চিঠি দিয়ে কড়া ভাবে বলে দিয়েছে, এ রাজ্যে বাঙালি ও পাঞ্জাবিদের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সম্পর্ককে কোনও ভাবে তিক্ত করে তোলা হলে তার জন্য সিরসারাই দায়ী হবেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ দিনই ফোনে কথা হয়েছে রাজ্যপাল ধনখড়ের। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর উষ্মা গোপন করেননি। রাজ্যপাল তাঁর ক্ষমতা বলে কী করতে পারেন, ফোনালাপে সেই প্রসঙ্গও ওঠে। তখনই বার্তা দেওয়া হয়, এই সরকার ‘হুমকি’র কাছে মাথানত করে না, রাজভবনের ভূমিকা কোনও মতেই ‘বরদাস্ত’ করা হবে না।

আরও পড়ুন: বেচারাম-প্রবীরের মন্তব্যে ফের ঝড় হুগলি তৃণমূলে

পুলিশি হেফাজতে থাকা নবান্ন অভিযানে ধৃত অস্ত্রধারী শিখ যুবক বলবিন্দর-সহ দুই বিজেপি নেতার জামিনের আবেদন এ দিনই ফের খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ধৃতদের আরও ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত বলবিন্দরকে নিয়ে কাশ্মীরের রাজৌরি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হাওড়া পুলিশ। রাজৌরির যে বন্দুক লাইসেন্স জমা দিয়েছিলেন বলবিন্দর, তাতে একাধিক স্ট্যাম্প রয়েছে। ওই লাইসেন্সের বৈধতা রাজৌরি গিয়ে যাচাই করতে চায় পুলিশ। দিল্লি থেকে আসা ‘শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র সভাপতি সিরসার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল ও কলকাতার শিখ সম্প্রদায়ের ১১ জন এ দিনই হাওড়া কোর্ট লক-আপে এসে অস্ত্র আইনে ধৃত বলবিন্দরের সঙ্গে দেখা করে গোটা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর অবশ্য এ দিনও টুইট করে জানিয়েছে, এ রাজ্যে শিখ ভাই-বোনেদের বিশ্বাস ও ধর্মাচরণকে সরকার শ্রদ্ধা-সম্মান করে। সাম্প্রতিক একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অবৈধ ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখার অভিযোগে এক ব্যক্তি ধরা পড়েন। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা করে একটি রাজনৈতিক দল যে ভাবে ‘সংকীর্ণ পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ থেকে তাতে রং লাগানোর চেষ্টা করছে, রাজ্য তাকে সমর্থন করে না।

রাজ্য প্রশাসন ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত রেখেছে বিজেপি। তাদের সুরে সুর মেলানোয় রাজ্যপালকেও বিঁধেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজভবনে বসে সাম্প্রদায়িক বিষ ছ়়ড়ানোর চক্রান্ত হচ্ছে। পায়ের তলায় মাটি না পেয়ে বিজেপি রাজভবনের মাটিকে ব্যবহার করে চক্রান্ত করছে। রাজ্যপাল ও বিজেপির এ ধরনের খেলা বন্ধ হোক।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এ দিন সাফ বলেছেন, ‘‘বাংলায় পুলিশের বিরুদ্ধে আমাদের এক কোটি অভিযোগ আছে। কিন্তু এ রাজ্যে পুলিশ ধর্মীয় বা জাতি-বিদ্বেষমূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করে, এটা মানা যায় না। সেটা উত্তরপ্রদেশে হয়।’’ অধীরবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘যা ঘটেছে, সেটা ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু যাঁরা পাগড়ি নিয়ে এত কথা বলছেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন— মিছিলে বন্দুক নিয়ে থাকা কি অনুমোদনযোগ্য? শিখদের জন্য এত মাথাব্যথা হলে পঞ্জাবে ট্রাক্টর নিয়ে যে হাজার হাজার কৃষক আন্দোলন করছেন, তাঁদের দুর্দশার কথা ভাবুক বিজেপি!’’ একই সুরে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘পুলিশের নিশ্চয়ই সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কিন্তু ধর্মীয় প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করা বিজেপির মজ্জাগত। বন্দুক নিয়ে অভিযানের ঘটনা আড়াল করতে এখন শিখ ভাবাবেগকে ঢাল করেছে তারা। কেন্দ্রের কৃষি আইনে গোটা পঞ্জাবের কৃষক সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ, অকালি দল জোট ছেড়েছে। বিজেপি তাই শিখদের ভাবাবেগ কাজে লাগাতে চাইছে।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও এ দিন প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন, পাগড়ি খোলা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তাঁর নেই। এই নিয়ে আন্দোলনও বিজেপির নয়, শিখ সমাজের প্রতিবাদে তারা পাশে আছে। দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘পাগড়ি যে ভাবেই খুলে থাকুক, আমি বলতে পারব না, কিন্তু বলবিন্দর সিংহকে যে ভাবে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আমি দেখেছি। এটা আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয় নয়। শিখ সমাজের মানুষ যে প্রতিবাদ করছেন, আমরা তাকে সমর্থন করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Turban Sikh Balwinder Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy