প্রতীকী ছবি।
আসন্ন বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট টানতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। এই লক্ষ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের লাগাতার দলে যোগদান করানোর জন্য সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলি হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আলিও নেমে পড়েছেন নির্দেশ পালনে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমানের মন্তেশ্বরে সংখ্যালঘুদের ‘যোগদান মেলা’ করেছে বিজেপি। ভাতার এবং আসানসোলেও ওই কর্মসূচি আসন্ন।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশেই বিজেপির গায়ে ‘মুসলিম-বিরোধী’ তকমা রয়েছে। এ রাজ্যেও এত দিন ওই সম্প্রদায়ের মানুষদের বিজেপিতে যোগ দিতে খুব বেশি দেখা যেত না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩০% মুসলিম। ফলে, সেই অংশের ভোট একেবারেই না পেলে এ রাজ্যে ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণেই এখন বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের প্রধান কৌশল—মুসলিম সমাজ থেকে অনেককে দলে যোগদান করিয়ে ওই সম্প্রদায়ের বাকি অংশকে ‘ইতিবাচক’ বার্তা দেওয়া। আলি বলেন, ‘‘তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস চিরকাল মুসলিম সমাজকে ভয় দেখিয়েছে যে, বিজেপি নাকি তাদের সর্বনাশ করছে! কিন্তু মুসলিমরা বুঝেছেন, একমাত্র বিজেপিই তাঁদের ভাল চায়। আর বাকিরা তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করে নিজেরা ক্ষমতা ভোগ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব কা সাথ সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস। বিজেপি সকলের জন্য সমান ব্যবস্থা চায়। কোনও সম্প্রদায়কে বঞ্চিতও করে না, কাউকে তোষামোদও করে না।’’
তবে বিজেপির অন্দরেই সংশয় রয়েছে, ইদানীং মুসলিম সমাজের অনেকে দলে যোগ দিলেও ওই সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ তাদের বিরুদ্ধেই ভোট দিতে পারেন। মুসলিম সমাজের যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তাঁরাও মূলত ভয়ে, নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে তা করছেন। বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘আমরা সরকারে এলে যাতে বিপদে পড়তে না হয়, তাই অনেক মুসলিম দলে নাম লিখিয়ে রাখছেন।’’
এই পরিস্থিতিতে এমআইএম এবং অন্য কোনও মুসলিম সংগঠন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেয় কি না, সে দিকে তাকিয়ে আছে বিজেপি। তাদের বিশ্লেষণ, ওই ধরনের কোনও সংগঠন এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে লড়লে মুসলিম সমাজের একাংশের ভোট পাবে। সে ক্ষেত্রে মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার সুবিধা পাবে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে দলের সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলি পর্যন্ত বহু নেতাই বহু বার বলেছেন, ‘‘এমআইএম একটি রাজনৈতিক দল। অন্য রাজ্যে তাদের নেতা-সাংসদ আছেন। ওই দল এ রাজ্যে ভোটে দাঁড়ালে আমাদের আপত্তি করার কিছু নেই।’’ বিজেপি নেতৃত্বের আরও ধারণা, মুসলিম-অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে অন্যান্য দলের প্রার্থী ছাড়াও মুসলিম নির্দল প্রার্থী থাকলে ওই সম্প্রদায়ের ভোট ভাগ হওয়ায় তাঁরা সুবিধা পাবেন।
তবে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমেরা রাজ্যের শাসক তৃণমূলের উপরেই আস্থা রেখেছেন। আগামী দিনেও তাঁদের সেই আস্থা অটুট থাকবে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নে বাজেট ছিল ৬০০ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে পৌঁছেছে প্রায় ৪০০০ হাজার কোটি টাকায়। সংখ্যালঘু উন্নয়ন কর্পোরেশন নিয়মিত বহু মানুষকে শিক্ষা, কর্মজীবনে সাহায্য করছে। এ সব সংখ্যালঘুরা জানেন। আর তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নের পাশাপাশি তাঁদের সুরক্ষিতও রেখেছে।’’ একই সঙ্গে ফিরহাদ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘দেশের মানুষকে গুজরাতের হিংসা, দিল্লির দাঙ্গা কি ভুলিয়ে দিতে পারবে বিজেপি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy