Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
BJP

এ বার নবান্ন অভিযানেরও সিবিআই তদন্ত চাইছে বিজেপি, সভাপতি নড্ডাকে রিপোর্ট জমা দিল সংসদীয় দল

রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপির নেতৃত্বে ‘গণ আন্দোলন’ গড়ে উঠেছিল রাজ্যে। সেই অভিযান দমন করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছে সংসদীয় দল।

১৩ সেপ্টেম্বরের নবান্ন অভিযান নিয়ে রিপোর্ট বিজেপির সংসদীয় দলের।

১৩ সেপ্টেম্বরের নবান্ন অভিযান নিয়ে রিপোর্ট বিজেপির সংসদীয় দলের। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৮
Share: Save:

নবান্ন অভিযান নিয়েও সিবিআই তদন্ত চাইল বিজেপি। নবান্ন অভিযানের দিন কী হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করে বিজেপি। কলকাতায় এসে সেই দল ঘুরে যাওয়ার পর শনিবার দিল্লিতে গিয়ে দলীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেখানে অনেক অভিযোগের পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে যে, ‘তৃণমূলের নির্দেশে’ই কাজ করেছে রাজ্য পুলিশ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ওই রিপোর্টে আক্রমণ করা হয়েছে। তৃণমূল যদিও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের দাবি, বিজেপির প্রতিনিধি দল বিজেপির মতোই রিপোর্ট দিয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপি নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। সেই দিন কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা হাওড়ায় বিপুল গোলমাল হয়। এর পর ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। ওই দলে ছিলেন বিজেপি সাংসদ বৃজ লাল, রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর, অপরাজিতা সারঙ্গি, সমীর ওঁরাও এবং পঞ্জাব বিজেপির প্রবীণ নেতা সুনীল জাখর। সেই সংসদীয় দলই শনিবার নড্ডাকে ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। বিজেপিকর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে কলকাতার পুলিশের কর্তা দময়ন্তী সেন-সহ একাধিক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে। নির্বিচারে বিজেপিকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

কাদের সঙ্গে কথা বলে, কী ভাবে তৈরি হয়েছে ওই রিপোর্ট, তা-ও সেখানে বিশদে লেখা রয়েছে। নড্ডাকে পাঠানো ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যেও এনেছে বিজেপি। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাসপাতালে গিয়ে বিজেপির কাউন্সিলর মিনা দেবী পুরোহিত এবং কর্মী সৌমিক হালদারের সঙ্গে কথা বলেন সংসদীয় দলের সদস্যরা। প্রত্যেক আহতদের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। আটক বিজেপিকর্মীদের বিষয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসির সঙ্গেও কথা বলেন ওই পাঁচ জন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর পরেই সংসদীয় দল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ‘পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্য চলছে। সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। এখানে আইনের শাসন নেই। বরং শাসকদের আইন রয়েছে।’ নবান্ন অভিযানের দিন কত জন আহত হয়েছিলেন, তারও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অভিযানে গিয়ে পুলিশি ‘হামলা’য় ৭৫০ আহত, ৫৫০ নির্বিচারে গ্রেফতার এবং ৪৫ নিখোঁজ হয়েছেন।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল পাঁচ সদস্যের দল।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল পাঁচ সদস্যের দল। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপির নেতৃত্বে ‘গণ আন্দোলন’ গড়ে উঠেছিল রাজ্যে। সেই অভিযানও দমন করেছে রাজ্য সরকার। ওই রিপোর্টে রাজ্য পুলিশের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছে বিজেপির সংসদীয় দল। দাবি করা হয়েছে, সিদ্ধনাথ গুপ্ত, দময়ন্তী সেন, প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠীর মতো পুলিশ আধিকারিকেরা কর্তব্যে গাফিলতি করেছেন এবং বিজেপিকর্মীদের নিশানা করেছেন। আর এই সবের নেপথ্যে রাজ্যের শাসকদলের নির্দেশকেই ‘দায়ী’ করেছে সংসদীয় দল। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, অভিষেকের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে, ১৩ সেপ্টেম্বর ‘বেআইনি ভাবে’ বাহিনী ব্যবহার করেছিল রাজ্য পুলিশ। আর তাতে সায় ছিল তৃণমূল নেতৃত্বেরই।

প্রসঙ্গত, নবান্ন অভিযানের পরের দিন, ১৪ সেপ্টেম্বর আহত এক পুলিশকর্তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক। সেখান থেকে বেরিয়ে অভিষেক জানিয়েছিলেন, পুলিশের উপর যে ভাবে অত্যাচার হয়েছে, তিনি ওই সময়ে ঘটনাস্থলে থাকলে হামলাকারীদের মাথায় গুলি করতেন। বিজেপির সংসদীয় দলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই মন্তব্য থেকেই শাসক দলের মনোভাব স্পষ্ট।

তৃণমূল যদিও বিজেপির সংসদীয় দলের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তা নিয়ে কটাক্ষ করেছে। দলের মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিজেপির প্রতিনিধি দল ওই রিপোর্ট দিয়েছে। ওরা যে বিজেপির মতো করেই রিপোর্ট দেবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। কারণ ওরা যত এ সব কথা বলবে, ততই বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পাবে। ২০১৯ সালের পর থেকে যে ভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব বাংলাকে অশান্ত করার একের পর এক কাজ করে চলেছে, এই রিপোর্ট এবং প্রতিনিধি দল তারই প্রমাণ।’’

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের গলাতেও একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন কারা গুন্ডামি করেছিল, সারা ভারত দেখেছে। কী ভাবে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল, তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু পুলিশ সে দিন অনেক সহনশীল ছিল। সেই সহনশীলতা নিয়ে আমাদের সাধারণ সম্পাদক মন্তব্য করেছিলেন। এখন নিজেদের অন্যায় ঢাকতে তাঁর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে নির্লজ্জের মতো আচরণ করছে বিজেপি।’’

এর আগে বীরভূমের বগটুই হত্যাকাণ্ড, কাশীপুরে বিজেপিকর্মীর রহস্য মৃত্যু-সহ একাধিক বিষয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে বিজেপি। এ বার সেই তালিকায় নবান্ন অভিযানও জুড়ে গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Nabanna Abhijan TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy