মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন ৩৫টি আসনের। সেই কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে নেমেছেন রাজ্যে নেতারা। শনিবার মহুয়া মৈত্রের লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্পষ্ট করে দিলেন, এই আসনটিও তাঁদের নজরে রয়েছে। এ দিন কৃষ্ণনগরে কর্মীদের সুকান্ত বলেন, “এই লোকসভা আমাদের বিশেষ নিশানায় আছে। এর মধ্যে কোনও রাখঢাক নেই। এই লোকসভা আসনটি জেতার জন্য ‘অল আউট’ ঝাঁপানো হবে।” যা শুনে মহুয়ার প্রতিক্রিয়া, “ওঁকে বলুন, উনি এসে দাঁড়ান আমার বিরুদ্ধে। অথবা, প্রধানমন্ত্রীকে পাঠান।”
ঘটনাচক্রে, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংক্রান্ত এথিক্স কমিটির রিপোর্ট আগামী কাল, সোমবার শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই সংসদে পেশ হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। মহুয়া অবশ্য আগেই দাবি করেছেন, শেষ কয়েক মাসের জন্য সাংসদ পদ খারিজ হলেও তাঁর কিছু যায়-আসে না। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তিনি আরও বেশি ভোটে জিতে আসবেন। প্রথম দিকে ঘুষ বিতর্কে দলের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও পরে তৃণমূল নেতৃত্ব মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত দেন। মহুয়াকে ফের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী করা হয়। তবে এই কেন্দ্র থেকে তাঁকে তৃণমূল ফের প্রার্থী করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি বিজেপি যে প্রচার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করবে, তা বুঝিয়ে দিয়ে সুকান্ত এ দিন বলেন, “শুভেন্দুবাবু আসবেন। আমিও আসব। দিলীপ ঘোষও আসবেন। বার বার আসব আমরা, যাতে এই লোকসভা এই বার জিততে পারি।” এ দিন কৃষ্ণনগর সাধারণ গ্রন্থাগারের মাঠে বিজেপির কিসান মোর্চার সভায় সুকান্তের মিনিট দশেকের বক্তব্যের বেশির ভাগটাই ছিল মহুয়াকে আক্রমণ। দুবাই-কেন্দ্রিক শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানিকে সংসদে প্রশ্ন তোলার লগ-ইন পাসওয়ার্ড মহুয়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারত বলে দাবি করে সুকান্ত বলেন, “আপনাদের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, যিনি লিপস্টিকের বিনিময়ে নিজের পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন। সংসদে গিয়ে যাঁর গরিব মানুষের কথা তোলার কথা, তিনি না তা তুলে জপ করেন ‘আদানি আদানি আদানি’।” সুকান্তের আরও আবেদন, “কোটি কোটি টাকা নিয়ে যারা দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিচ্ছেন, আমাদের লড়াই করে তাদের হারাতে হবে।”
যদিও স্থানীয়দের কেউ কেউ এবং তৃণমূলের একাংশের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই মহুয়াকে নিশানা করা হচ্ছে, সেটা সুকান্তের বক্তৃতাতেও স্পষ্ট। একই দাবি বহু বিরোধী নেতারও। মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ না করার আর্জি জানিয়ে এ দিনই স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরী। এ দিনও অধীর এথিক্স কমিটিকে দুষে এবং মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘বিনা প্রমাণে চোর বানিয়ে দিয়ে তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করার এই যে একটা পরিকল্পনা, এটা ঠিক নয়। আমি স্পিকারকে নতুন করে ভেবে দেখার দাবি জানিয়েছি।’’ এই প্রসঙ্গে সুকান্তের দাবি, “কংগ্রেস-তৃণমূল সব একই। পশ্চিমবঙ্গে মাঝে মাঝে কুস্তি করে, দিল্লিতে গিয়ে দোস্তি করে।”
যা শুনে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের প্রতিক্রিয়া, “গত বার নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ এসে যা করতে পারেননি, সেই কাজ সুকান্তবাবুরা করবেন— এটা শুনে ঘোড়াও হাসবে।” গত লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে প্রায় ৬২ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন মহুয়া। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত যে চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাঁর সবচেয়ে বেশি ‘লিড’ ছিল, সেখানকারই বিধায়ক রুকবানুর। তাঁর দাবি, “জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিজেপি নেতারা পাগলের প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। লিখে নিন, এই কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে আমরা গত বারের চেয়ে অনেক বেশি ভোটে জিতব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy