প্রেমচাঁদ ঝা। নিজস্ব চিত্র
বিপদ তাঁর ঘরে-বাইরে। নিজের ঘরে তাঁকে ঘিরে চাপা ক্ষোভ। আর বাইরে বিঁধছে মামলা কাঁটা।
খড়্গপুর উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রেমচাঁদ ঝা-র নাম সামনে আসতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছিল বিজেপির অভ্যন্তরে। দলের বিক্ষুব্ধ নেতা প্রদীপ পট্টনায়েক তো আবার ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে খড়্গপুরে দেখা মিলছিল না বিজেপি প্রার্থী প্রেমচাঁদের। পরিজনেদের দাবি ছিল, আত্মীয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে মোবাইল ছাড়াই ওড়িশা গিয়েছেন তিনি। শেষে মনোনয়নের শেষ বেলা ঘনিয়ে আসতেই সোমবার রাতে উদিত হয়েছেন প্রেমচাঁদ। আত্মীয়ের অসুস্থতা নয়, পুরনো জমি মামলায় গ্রেফতারি ঠেকাতে অন্তর্বর্তী জামিন নিয়ে শহরে ফিরেছেন তিনি এবং অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের দিকে। মঙ্গলবার বিজেপি প্রার্থী বলেছেন, “এ সব তৃণমূলের ষড়যন্ত্র। মামলায় জড়িয়ে আমার মনোনয়ন আটকাতে চেয়েছিল। মানুষ আমার পাশে থাকবেন। লোকসভার থেকেও এগিয়ে ৬০ হাজার ভোটের লিড পাব আমরা।”
পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, প্রার্থী হওয়ার আগেই প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়া তলঝুলির বাসিন্দা সুকান্ত বেরা জামিন অযোগ্য জমি সংক্রান্ত এই প্রতারণা মামলা করেছেন। সুকান্তর দাবি, শহরের তলঝুলি এলাকার তাঁর একটি আড়াই একর জমির নকল দলিল বানিয়ে প্রেমচাঁদ ২০০৪ সালে কলকাতার তিন ব্যক্তিকে কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানান তাঁরা। তারপর প্রেমচাঁদ ও তাঁর সহযোগীরা সুকান্তদের হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। আদালত মারফত প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন সুকান্ত। গত ১৯ সেপ্টেম্বর খড়্গপুর টাউন থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়। মামলাকারী সুকান্ত বলেন, “তলঝুলি ও সোনামুখি মৌজায় ১১ একর জমির মধ্যে আড়াই একর প্রেমচাঁদ নকল দলিল করে বিক্রি করে দিয়েছে। তার জন্য আইনি লড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু প্রেমচাঁদ ক্রমাগত হুমকি দেওয়ায় মামলা করি। আমি একসময়ে তৃণমূলে ছিলাম। কিন্তু মামলার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।”
পুজোর পরে মামলা নিয়ে ফের নাড়াচাড়া হয়। দল তাঁকে প্রার্থী করার পরে গ্রেফতারের আশঙ্কায় আত্মগোপন করেন প্রেমচাঁদ। শেষমেশ সোমবার হাইকোর্টে জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার না করার অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে রাতে শহরে ফেরেন তিনি। প্রেমচাঁদ বলছেন, “আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বুঝে আমি আত্মগোপন করে জামিনের চেষ্টা করছিলাম। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জামিনে আছি। বিচারব্যবস্থার উপর আমার আস্থা রয়েছে।”
শহরে এই নিয়ে শোরগোল চললেও প্রেমচাঁদ পাশে পাচ্ছেন না তাঁরই ‘ঘর’ বিজেপির অনেক নেতা-কর্মীকে। বিজেপি বাঁচাও কমিটি গড়ে মঙ্গলবারই মিছিল করে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা প্রদীপ পট্টনায়েক। অবশ্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি না থাকায় জমা দিতে পারেননি মনোনয়ন। প্রদীপ বলেন, “প্রেমচাঁদের বিরুদ্ধে শুধু জমি নয়, আরও অনেক মামলা আছে বলে শুনেছি। কিন্তু তার পরেও দলের রাজ্য সভাপতিকে তোষামোদ করায় প্রার্থী হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।” ‘এ সব বিষয় জানা নেই’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন প্রেমচাঁদ। সব কিছু ঠিক থাকলে আজ, বুধবার বিজেপির এই দুই নেতাই মনোনয়ন জমা দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy