বীরভূমের সিপিএম নেতা সুভাষচন্দ্র দে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
নিঁখোজ হওয়ার তিন দিন পর বীরভূমের সূচপুর হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সিপিএম নেতা সুভাষচন্দ্র দে-র দেহ উদ্ধার হল মাটির তলা থেকে। দুবরাজপুরে একটি পুকুর পাড়ের বাঁশবাগানে তাঁর মুণ্ডহীন দেহ বস্তাবন্দি করে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তবে এখনও তাঁর দু’পা এবং মাথা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের জালে ধরা পড়া খুনি এবং তার সহযোগীর দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকেই ওই খণ্ডিত দেহ উদ্ধার হয়েছে। আর গোটা ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য! পুলিশের দাবি, বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েই খুন হতে হয়েছে বীরভূমের সিপিএম নেতা সুভাষচন্দ্র দে-কে।
গত ১৮ অক্টোবর থেকে সুভাষবাবু নিখোঁজ ছিলেন। ১৯ অক্টোবর অর্থাৎ নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন তাঁর বাইক পাওয়া যায় নানুরে এক তৃণমূল নেতার মালিকানাধীন বেসরকারি কলেজের সামনে। সুভাষবাবুর পরিবার-সহ অনেকেই যখন নিখোঁজ হওয়ার পিছনে রাজনীতি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা শুরু করছিলেন, সেই সময়েই অর্থাৎ সোমবার সকালে উদ্ধার হল সুভাষবাবুর দেহাংশ।
বীরভূম পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, সুভাষবাবুর সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। নিখোঁজ হওয়ার দিন অর্থাৎ শুক্রবারও তিনি ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ওই তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে ছিলেন, তখন হঠাৎই তাঁর স্বামী মতিউর রহমান বাড়ি ফিরে আসেন। নিজের স্ত্রীকে সুভাষবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে রাগের মাথায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে শাবলের আঘাত করেন তাঁর ঘাড়ে। এর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে উপুর্যপরি আরও কয়েক বার আঘাত করেন। স্ত্রী-র সাহায্যে দেহটি তিন টুকরো করেন। এর পর মাথা আর দু’পা ভাসিয়ে দেওয়া হয় অজয়ের জলে। দেহের বাকি অংশ একটা চটের ব্যাগে ভরে তাঁদের বাড়ির কাছে একটি পুকুরপাড়ে বাঁশবাগানে পুঁতে দেন স্বামী-স্ত্রীতে। নানুর থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার কথা মতিউর এবং তাঁর স্ত্রী পুলিশের জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে সুভাষবাবুর দেহের অংশ।
আরও পড়ুন: আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল সেনা জওয়ান, ঘুমের ওষুধে নিস্তেজ করে খুন স্ত্রীকে
কী ভাবে জালে পড়লেন মতিউর এবং তাঁর স্ত্রী?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে নানুর থানার একটি অংশ ঘটনার পিছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছিল। সুভাষবাবুর স্ত্রী জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ ওই সিপিএম নেতা বাড়ি থেকে বেরোন। সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করার পাশাপাশি তিনি জীবনবিমার এজেন্টের কাজও করতেন তিনি। সেই কাজেই বেরোচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন বাড়িতে। পুলিশকে সুভাষবাবুর পরিবার জানিয়েছিল, ওই দিন বেলা ৩টে নাগাদ সুভাষবাবুর মেয়ে ফোন করেছিল বাবাকে। সেই সময় তিনি বলেছিলেন যে, ইলামবাজারে রয়েছেন। জয়দেব ঘুরে বাড়ি ফিরবেন। এর পর ফের ৪টে নাগাদ ফোন করলে তিনি ফোন তোলেননি বলে পুলিশকে জানানো হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ ১৯ অক্টোবর সকালে সুভাষবাবুর গ্রাম নানুরের বাসাপাড়াতেই জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খানের কলেজের সামনে থেকে তাঁর বাইকটি উদ্ধার করে। অন্য দিকে, সুভাষবাবুর মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা যায়, তাঁর শেষ লোকেশন ছিল দুবরাজপুরের খোঁজমহম্মদপুর। পুলিশ এর পর সুভাষবাবুর মোবাইল কল ডিটেলস দেখা শুরু করে। দেখা যায়, খোঁজমহম্মদপুর গ্রামে এক মহিলাকে নিয়মিত ফোন করতেন তিনি। অন্য দিকে স্থানীয় সূত্রে খবর নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই গ্রামেই থাকেন বাসাপাড়ার পাশের গ্রাম আটকুলার বাসিন্দা সোনা শেখের মেয়ে। ওই গ্রামের মতিউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে। সোনা শেখ এবং সুভাষবাবু দীর্ঘ দিনের বন্ধু।
আরও পড়ুন: সম্পর্কের টানাপড়েনে খুন স্ত্রীকে
এর পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে সোনা শেখের মেয়ে এবং তাঁর স্বামী মতিউরকে। পুলিশের দাবি, প্রথমে কিছু স্বীকার না করলেও পরে জেরার চাপে সোনা শেখের মেয়ে স্বীকার করেন, সুভাষ ওই দিন তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। এর পরই ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে মতিউরের স্ত্রী-র সঙ্গে সুভাষের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা। এর পরই মতিউর খুনের কথা স্বীকার করেন। সোমবার পুলিশ মতিউরের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকে সুভাষের খণ্ডিত ধড় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয়েছে মতিউর এবং তাঁর স্ত্রীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy