Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Bikaner–Guwahati Express

Bikaner–Guwahati Express Derailment: পা কাটবেন না, দোহাই, একটু জল দিন, কামরার চেপ্টে যাওয়া অংশের ভেতর থেকে বললেন যুবক

দুই কামরার লোহার দেওয়াল তুবড়ে যেখানে মিশেছে, সেই সংযোগস্থলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে ছাই রঙের একটি জিন্স। পায়ের আঙুল দিয়ে সমানে ঝরছে রক্ত।

জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে আহতদের। চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছেন ডাক্তারেরা। ছবি: সন্দীপ পাল

জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে আহতদের। চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছেন ডাক্তারেরা। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
দোমহনী শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

একটি কামরা উপরে উঠে সামনের কামরার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। পিছনের কামরার লোহার দেওয়াল কেউ যেন টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। দেখে যেন মনে হচ্ছে, কামরাটি লোহার নয়, কাগজ বা থার্মোকলের তৈরি।

দুই কামরার লোহার দেওয়াল তুবড়ে যেখানে মিশেছে, সেই সংযোগস্থলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে ছাই রঙের একটি জিন্স। হাঁটুতে একটি বেগুনি রঙের স্কার্ফ বাঁধা। পায়ের আঙুল দিয়ে সমানে ঝরছে রক্ত। সেই ক্ষতস্থানে সাদা কাপড় বেঁধে দিলেন এক পুলিশকর্মী। শরীরটার বাকি অংশ দেখা যাচ্ছে না। কী ভাবে উদ্ধার করা হবে ওই যাত্রীকে? কামরার তুবড়ে যাওয়া দেওয়াল কাটতে গেলে ঝুলে থাকা পা কেটে ফেলতে হয়। ঝালাই করার যন্ত্র দিয়ে পিছন দিক থেকে কাটা শুরু হল কামরার দেওয়াল। ঘণ্টাদেড়েক পরে চেপ্টে যাওয়া অংশের ব্যবধান আরও একটু বাড়লে যুবকের হাত দেখা গেল। শোনা গেল তাঁর কথাও। হাত দেখিয়ে যুবকটি বলছেন, ‘‘পা কাটবেন না, দোহাই। একটু জল দিন।’’

কেটে গেল আরও এক ঘণ্টা। যুবককে যখন বার করা সম্ভব হল, তখন তিনি অজ্ঞান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে।

দুর্ঘটনা যখন হয়, তখনই দিনের আলো কমে এসেছিল। দিনভর মেঘলা ছিল। বিকট শব্দে যখন দোমহনীর দাড়িভিজা এলাকায় ট্রেনের কামরাগুলি ছিটকে পড়ে, তখনও একটু আলো ছিল। আশেপাশের বাসিন্দারা পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার নেমে আসে। দুর্ঘটনার পরেই রেলের কামরার ভিতরের আলো নিভে যায়। অন্ধকারে ভেসে আসতে থাকে আর্তনাদ। ধান কেটে নেওয়া খেতের আল দিয়ে তখন চাপ চাপ রক্ত গড়াচ্ছে। অন্ধকারে রক্ত দেখা যায় না। কিন্তু উদ্ধারকারীদের অনেকেরই পা রক্তে পিছলে যাচ্ছে।

কুয়াশা-অন্ধকারে হঠাৎই মিশে যায় ‘আল্লা, আল্লা’ আর্তনাদ। অন্ধকার আলে বসে কাঁদছিলেন রুকিয়া খাতুন। কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে নুয়ে পড়ছিল তাঁর শরীর। তিনি বলতে থাকেন, ‘‘আমার মেয়েটাকে বার করে আনো কেউ।’’ কোন কামরায় মেয়ে আছে? কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। শুধু একটাই কথা, ‘‘মেয়েটাকে বার করে আনো।’’

একাধিক উদ্ধারকারী দল দ্রুত নেমে পড়েছিল কাজে। সিভিল ডিফেন্স, বিএসএফ থেকে রেলের নিজস্ব বাহিনী, একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যদিও প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারাই। বাড়ি থেকে শাবল নিয়ে এসেছিলেন প্রসেনজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে যা পেরেছি, নিয়ে এসে কাজ করছি। রেলের ছিটকে পড়া কামরাগুলি থেকে প্রথমে যাত্রীদের টেনে বার করতে শুরু করেছিলাম। দেখি, একটা লোকের সারা গায়ে রক্ত। ‘জল জল’ করতে করতে লোকটার নিঃশ্বাস থেমে গেল।’’

একটু ফাঁক পেয়ে তখনও নিজের হাত দু’টোর দিকে তাকিয়ে প্রসেনজিৎ। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তাঁর হাতের উপরেই এই মৃত্যু।

অন্য বিষয়গুলি:

Bikaner–Guwahati Express Maynaguri Train accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy