এলাকায় চলছে পুলিশ ও র্যাফের টহল। নিজস্ব চিত্র।
কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে প্রথমে পানপুর মোড়। সেখান থেকে বাঁ দিকে ভাটপাড়ার রাস্তায় ঢুকে পড়া। রাস্তার দু’ধারে দোকানপাট খোলা। মানুষজন, গাড়িঘোড়া রাস্তায় ভাল সংখ্যাতেই রয়েছে। কিন্তু, গোটা ছবিটাই পাল্টে গেল কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে রোড ওভারব্রিজে ওঠার আগেই। সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা। অথচ এলাকার সব দোকানই বন্ধ। কেমন একটা গুমোট ভাব চার দিকে। লোকজনও রাস্তায় নেই বললেই চলে।
ব্রিজ পেরনোর পর ছবিটা আরও বদলে গেল। একটু এগোতেই সদ্য ফাঁড়ি থেকে তৈরি হওয়া ভাটপাড়া থানা। থানার সামনে শুনশান রাস্তায় একের পর পুলিশের গাড়ি। র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, পুলিশের বড়কর্তা—সকলেরই। আর একটু এগোলেই সেই কাছাড়ি মোড়। বৃহস্পতিবার এখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন। গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে। অথচ তার মধ্যেই একটু আধটু জটলা। ঠিক যেখানটায় বছর সতেরোর রামবাবু সাউয়ের গুলিবিদ্ধ দেহটা পড়েছিল, সেখানেও দাঁড়িয়ে কয়েক জন। আর পুলিশ বার বারই তাদের সরে যেতে বলছে— ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কিন্তু পুলিশের সে সব কথা যে খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন তাঁরা, তেমনটা নয়। কয়েক জন সরে যাচ্ছেন। ফের তাঁদের জায়গা নিচ্ছেন অন্যেরা।
ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঞ্চাশের বাবুলাল। ঘটনার সময় তিনি এখানেই ছিলেন। এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে কী হল! মাঝে মাঝেই চাপড়ানোর ভঙ্গিমায় কপালে হাত চলে যাচ্ছে তাঁর। কী হয়েছিল? কারা গুলি করল রামবাবু, ধর্মবীরদের? বাবুলাল এক মুহূর্তও সময় নিলেন না। বললেন, ‘‘দু’পক্ষের গন্ডগোল চলছিল। এরা বোমা ছুড়ছে তো ওরা ইট-পাটকেল। পাল্টা ওরা বোমা মারছে আর এরা ইট। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ আসে। কিন্তু তারা পড়ে যায় মাঝখানে। এর পর পুলিশই গুলি চালায় আমাদের লক্ষ্য করে। রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ে রামবাবুরা। পরে পুলিশ বলল, ওরা নাকি শূন্যে গুলি চালিয়েছে। মিথ্যে কথা বলছে।’’ পুলিশ যদিও এ দিনও দাবি করেছে, তারা শূন্যে গুলি চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: মারলে পাল্টা মার: দিলীপ, বিজেপিরই দ্বন্দ্ব বললেন জ্যোতিপ্রিয়
ভোটের সময় থেকেই উত্তপ্ত গোটা শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে এই ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি দিনই এই এলাকায় বোমাবাজি হয়। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় দুষ্কৃতীদের। কিন্তু পুলিশ সেই অর্থে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। একই অভিযোগ এ দিন শোনা গেল ব্যারাকপুর থেকে সদ্য জিতে সংসদে যাওয়া বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহের মুখে। তাঁর দাবি, তৃণমূল বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে এলাকায় অশান্তি পাকাচ্ছে। বৃস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে অর্জুন এ দিন বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলছেন ঠিকই। কিন্তু পুলিশ যদি নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করে তা হলে দু’দিনেই এলাকা ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা তো সেটা করছে না। করতে চাইছেও না।”
এখনও পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের গুলি-বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জনকে। রাস্তায় রাস্তায় কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফ টহল দিচ্ছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এ সবের মধ্যে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার ভাটপাড়া থানা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি সূত্রে খবর, বিকেলে মৃত দু’জনের দেহ নিয়ে এলাকায় শোকমিছিল বার করবে তারা। দুটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রশাসন। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (জোন-১) অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘গত কালকের ঘটনায় আমরা এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। পর্যাপ্ত বাহিনী রয়েছে আমাদের হাতে। অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বাহিনী।’’
আরও পড়ুন: থমথমে কাঁকিনাড়ায় পুলিশি টহল, গ্রেফতার ১৪, কমিশনারেট ঘেরাও অভিযান বিজেপির
এলাকা ঘুরলেই বোঝা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার কী চেহারা নিয়েছিল ভাটপাড়ার এই সব জায়গা। এখনও এ দিক ও দিক পড়ে রয়েছে ইট ও বোমার টুকরো। গুলিতে মৃত্যু হওয়া রামবাবু সাউ এবং ধর্মবীর সাউয়ের দেহ এ দিন বিকেলেই আসার কথা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয় মনোজ বর্মাকে। এখনও ব্যারাকপুর মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যেই এ দিন সকালে ভাটপাড়ার রাস্তায় মিলেছে দু’টি তাজা বোমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy