Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Arabul Islam

ভাঙড়ে আরও কোণঠাসা আরাবুল? সভায় যেতে নিষেধ করা হচ্ছে, ক্ষোভ উগরে দিলেন ‘তাজা নেতা’

গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই গুরুত্ব কমছিল তাঁর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা আরও প্রকট হয়। তখন থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের রাজনীতিতে আরাবুল ইসলামের ‘প্রভাব’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল।

আরাবুল ইসলাম।

আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪০
Share: Save:

গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই গুরুত্ব কমছিল তাঁর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা আরও প্রকট হয়। তখন থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের রাজনীতিতে আরাবুল ইসলামের ‘প্রভাব’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সেই আরাবুল এ বার ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করলেন, দলীয় সভায় কর্মী-সমর্থকদের সভায় যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ নিয়ে দলের কর্মিসভায় এক নেতাকে ‘তিরষ্কার’ও করলেন তিনি। বিরোধীদের দাবি, ভাঙড়ে শাসকদলের অন্দরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। কারও কারও প্রশ্ন, ভাঙড়ে কি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আরাবুল?

রবিবার ভাঙড় বিধানসভার বিজয়গঞ্জ বাজারে দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের কর্মিসভা হয়। সেই সভা থেকেই দলের শানপুকুর অঞ্চল কমিটির সদস্য শরিফুল আলমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন আরাবুল। তাঁর অভিযোগ, দলের কয়েক জন নেতার জন্যই তৃণমূলের ক্ষতি হচ্ছে। দলীয় সভায় কর্মী-সমর্থকদের আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। এর পরেই শরিফুলের উদ্দেশে আরাবুল বলেন, ‘‘আমাদের কোনও মিটিং হলেই তুমি সদস্যদের আসতে নিষেধ করছ। দল তোমাকে এই নির্দেশ দেয়নি।’’ শাসানি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তোমার ভাল না লাগলে তুমি দল করবে না। তবে দল তোমাকে নির্দেশ দেয়নি যে তুমি মিটিংয়ে আসতে নিষেধ করবে সদস্যদের।’’

এই ঘটনার পরেই শাসকদলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নিয়ে কটাক্ষ করেছে আইএসএফ। দলের নেতা রাইনুর হক বলেন, ‘‘টাকা দিয়ে পদ কেনা হলে, দলীয় কর্মীদের সম্মান না দিলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো হবে।’’ বিরোধীদের দাবি, আরাবুল ভাঙড়ে যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

শাসকদলের একাংশ এই যুক্তিকে অস্বীকার করতে পারছেন না। তাঁরাও মেনে নিচ্ছেন, ভাঙড়ের রাজনীতিতে আরাবুল অনেক দিন ধরেই কোণঠাসা। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ঝড়ের সামনে তৃণমূলের যে ৩০ জন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের এক জন ছিলেন আরাবুল। সেই সময় সিপিএমের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে দেখা যেত তাঁকে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ভাঙড় কলেজের এক অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুঁড়ে মেরে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। তার পরেও ভাঙড়ের রাজনীতি তো বটেই, রাজ্য-রাজনীতিও তাঁর দাপট দেখেছে। এই আরাবুলকে এক সময় মদন মিত্র (কামারহাটির বিধায়ক) ‘তাজা নেতা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু সেই ‘তাজা নেতা’কেই গত পঞ্চায়েত ভোটে কিছুটা হলেও ‘একঘরে’ দেখিয়েছে। ভাঙড়েরই এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘২০০৬ সালের আরাবুল আর ২০২৩ সালের আরাবুলকে এক করে দেখলে ভুল হবে। ক্ষমতায় আসার পর দলীয় রাজনীতিতে যে ভাবে তাঁর অবনমন হয়েছে, তাতে এখন আর আরাবুলকে ভাঙড়ে তৃণমূলের একচ্ছত্র নেতা বলা চলে না।’’ যদিও দলীয় নেতৃত্ব কখনওই এ কথা প্রকাশ্যে বলেননি।

২০১৫ সালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূল থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল আরাবুলকে। দলের একাংশের দাবি, তখন থেকেই আরাবুলের ‘স্খলনের’ সূত্রপাত। ২০১৬ সালের ভোটের আগে তাঁর সাসপেনশন তুলে নিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে সাসপেনশন উঠে গেলেও, সে ভাবে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি আরাবুল। ২০১৬ সালে সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লা তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁকেই ভাঙড় থেকে প্রার্থী করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ওই অংশের দাবি, সেই সময় এই সিদ্ধান্ত মন থেকে মেনে নিতে পারেননি আরাবুল। কারণ, রেজ্জাক সিপিএমে থাকার সময় থেকেই আরাবুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ ছিল। তা সত্ত্বেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় আরাবুলকে। দলের অন্দরে কান পাতলে সেই সময় শোনা যেত, ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চাপা দিতেই রেজ্জাককে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। বড় ব্যবধানে জয় পান রেজ্জাক। তাঁকে নিজের মন্ত্রিসভায় জায়গাও দেন মমতা। যা ছিল রাজনীতিক আরাবুলের কাছে ‘জোর ধাক্কা’। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও ভাঙড় থেকে চিকিৎসক রেজাউল করিমকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তৃণমূলের ওই প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পান আইএসএফের চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকি। ভাঙড়ে দলীয় প্রার্থীর হারে সেই সময় আরাবুলকেই দায়ী করেছিলের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আরাবুলের ‘দাপট’ যে কমেছে, তার প্রমাণ হিসাবে ভাঙড়ে দলের নেতাদের একাংশ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলও তুলে ধরছেন। তাঁদের বক্তব্য, ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাঙড়ে ১৮টিই দখল করেছে তৃণমূল। যে পঞ্চায়েতে আইএসএফ এবং জমিরক্ষা কমিটির জোট জিতেছে, সেটি আরাবুলেরই ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত।

বর্তমানে ভাঙড় থেকে আইএসএফের প্রভাব কমাতে তৃণমূল নেতৃত্ব ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি আবার শওকতকে সহযোগিতা করতে বিধাননগরের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকেও আনা হয়েছে। ফলে ভাঙড়ের রাজনীতিতে যে আরাবুল এবং তাঁর পরিবারের গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে, মেনে নিচ্ছেন দলের একাংশ।

যদিও এই দাবি মানতে নারাজ আরাবুলের ‘ঘনিষ্ঠ মহল’। তাঁদের বক্তব্য, দলীয় সভায় যেতে নিষেধ করা হচ্ছে বলে আরাবুল যে অভিযোগ করেছেন, তাতে কখনওই প্রমাণ হয় না যে, তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তিনি দলীয় নির্দেশ মেনেই কাজ করছেন। আর এখন ভাঙড়ের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের অন্যতম শওকতও ওই কর্মিসভায় ছিলেন। এতেই স্পষ্ট, শওকতেরও একই মত। যদিও এ ব্যাপারে ক্যানিংয়ের বিধায়ক নিজের মুখে কিছু বলেননি। শুধু তা-ই নয়, দলের অন্য একটি অংশের মতে, এলাকায় শরিফুল নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছেন। নজরে আসতে চাইছেন। আর সেটা করতে গিয়ে তিনি আরাবুল তথা স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধাচরণ করলেও করতে পারেন। যদিও গোটা ঘটনায় শরিফুলের বক্তব্য, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arabul Islam TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy