ফাইল চিত্র
বাংলায় তৃণমূল সরকারের কল্যাণ প্রকল্পে-তালিকার প্রথম দিকেই আছে স্বাস্থ্যসাথী। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থাকে। এ বারের বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিল কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। মেডিক্যাল কলেজ, ক্যানসার হাসপাতাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন কেন্দ্র, নার্সিং কলেজে তৈরির মতো নানা পরিকল্পনা রয়েছে ওই সব বেসরকারি সংস্থার।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লগ্নি নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র একসঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও কত উন্নত করে তুলতে পারে, সেই দিকটি প্রাধান্য পায় উপস্থিত সকলের বক্তব্যেই। এ দিন বিনিয়োগ প্রস্তাবে অ্যাপোলো হাসপাতাল জানায়, বাটানগর প্রকল্পে প্রথমে ক্লিনিক চালু করা হবে। পরে সেখানে তৈরি হবে ১৫০ শয্যার হাসপাতাল। তারও পরে সেখানে মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল শিক্ষণ কেন্দ্র গড়া হবে। পাশাপাশি অন্তত ৪০০ শয্যার আরও একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে কলকাতায়। আবার আসানসোলে ৪৫০ শয্যার হাসপাতাল, পানাগড়ে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন কেন্দ্র, শহরে চেন ল্যাবরেটারি তৈরির প্রকল্প নিয়েছে হেল্থ ওয়ার্ল্ড হাসপাতাল। সরকারের সঙ্গে পিপিপি মডেলে পাঁচটি নার্সিং কলেজ গড়ার পরিকল্পনা আছে চার্নক হাসপাতালের। হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা জানায় জেআইএস গ্রুপ। উডল্যান্ডস জানিয়েছে, তারা হাসপাতাল সম্প্রসারণের পাশাপাশি ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করবে।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে দৃঢ়তর করতে এ দিন বেশ কিছু পরামর্শ দেন নারায়ণা হেল্থ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান চিকিৎসক দেবী শেঠি। তিনি জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের সেরা ও দক্ষ চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের চিকিৎসকেরা। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। সেই সুযোগকে আরও কাজে লাগানোর জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়ম বদলের প্রয়োজন রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনেক সময়েই অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কেন এমনটা হয়, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শেঠি জানান, ১০০ আসনের একটি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে অন্তত ৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়। ১৪০ টাকা খরচ হয় বেতনে ও হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণে। তাই নিয়ম শিথিল করে কম খরচে কী ভাবে ব্যবস্থা করা যায়, সেই বিষয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলকে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। বাড়াতে হবে আসনও। তার অর্ধেক বরাদ্দ থাকবে সরকারের জন্য। রাজ্যে এক হাজার নার্সিং কলেজ তৈরির প্রস্তাব রাখেন দেবী শেঠি। তাঁর মতে, নার্স হতে গেলে শুধু কাগজকলমে পড়াশোনা করলে হবে না। রোগীর শয্যার পাশে থেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর তা সম্ভব হবে ছোট হাসপাতালগুলিকেও নার্সিং কলেজ বা স্কুলের রূপ দিলে। পরে শেঠি জানান, রাজ্য সরকারের কাছে কয়েক একর জমির জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে হৃদ্রোগ, ক্যানসার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ট্রমা কেয়ার এবং আধুনিক শল্যচিকিৎসার হাসপাতাল তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, এ রাজ্যে বিনিয়োগ করলে তা সুরক্ষিত।’’
শুধু কলকাতা নয়, বিভিন্ন জেলার শহরতলিতেও বেসরকারি উদ্যোগে স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানান হেল্থওয়ার্ল্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অরুণাংশু গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভাঙচুর— এগুলো কড়া হাতে দমন করতে হবে। নইলে চিকিৎসা পরিষেবার যুক্ত লোকজনের মনোবল বাড়বে না।’’ গ্রামাঞ্চলেও বাড়ি থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করতে হলে, সব জেলায় বেসরকারি ল্যাবরেটরির সঙ্গে সরকারের পিপিপি মডেলে বড় পরীক্ষাগার গড়ে তোলার প্রয়োজনের কথা বলেন সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকের অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy