আলোর সাজে সেজেছে মোতিঝিল। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই! বড়দিনের আগে বহরমপুর ও লালবাগের হোটেলগুলির এমনই অবস্থা। জেলার বাইরে থেকে যে সব পর্যটক এই সময়টায় মুর্শিদাবাদ বেড়াতে আসছেন, তাঁরা প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই ঘর বুক করে ফেলেছেন।
এ বার বড়দিন শুক্রবার হওয়ায় সপ্তাহান্তের দু’দিন ছুটিও ঢুকে পড়েছে ছুটির তালিকায়। ২৫-২৭ ডিসেম্বর তিন দিনের ছুটির আমেজ চেটেপুটে নিতে মুর্শিদাবাদ আসছেন অনেকেই। হাজার দুয়ারি, কাটরা মসজিদ কিংবা খোশবাগ প্রাণ ভরে দেখতে চাইছেন তাঁরা। বহরমপুরের একটি নামী হোটেলের কর্ণধার সুপর্ণা সাহা বললেন, ‘‘প্রতি বারই এই সময়টায় ভিড় হয়। তবে এ বার আগাম বুকিংয়ের হিড়িক একটু বেশি।’’ ওঁদের হোটেলের ৮০টি ঘরের জন্য সেই নভেম্বর থেকে চলছে অগ্রিম বুকিং। ২৫ ডিসেম্বর কোনও ঘর ফাঁকা নেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বহরমপুরের আর একটি বড় হোটেলেও এক ছবি। সেখানকার ৬৩টি ঘর ইতিমধ্যেই বড়দিনের জন্য বুক হয়ে গিয়েছে। বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া একটি বিলাসবহুল হোটেলের সাড়ে ৫ হাজার টাকার ঘরও বড়দিন উপলক্ষে বুক হয়ে গিয়েছে। ৬০টি ঘরের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার হাতে গোনা কয়েকটি ঘর ফাঁকা রয়েছে।
উৎসবের মরসুমে পর্যটকদের মন কাড়তে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষগুলিও। মনোরঞ্জনের জন্য কোথাও হোটেলের সব আবাসিককে নিয়ে নাচ-গানের জন্য ব্যাঙ্কোয়েট হল রঙিন আলোয় সাজানো হচ্ছে, কোথাও ব্যবস্থা থাকছে বড়দিনের কেক এবং ‘ক্রিসমাস স্পেশাল ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক’-এর। সুপর্ণাদেবী জানালেন, তাঁদের হোটেলে বড়দিনের রাতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ব্যাঙ্কোয়েট হল সাজানো হয়েছে। হুল্লোড়ের জন্য থাকছে ডিজে।’ ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ ড্রিঙ্কসে বিশেষ ছাড়, ‘ফ্রি’ খাবারে চিকেন তন্দুর থেকে চিলি চিকেন, স্কুইড থেকে পমফ্রেটের ব্যবস্থাও রাখছেন। সুপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘বড়দিনকে মনে রেখে লবস্টার আনা হয়েছে। বড়দিন স্পেশাল হিসেবে থাকবে নবাবী বংশের উত্তরাধিকারের হাতে তৈরি বিরিয়ানি।’’
বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া বিলাসবহুল হোটেলটিতেও সব আয়োজন প্রায় সারা। ম্যানেজার প্রলয় তেওয়ারি বলেন, ‘‘বড়দিনের রাতে রেস্তোরাঁয় আসা অতিথিদের কেক ও ক্রিসমাস স্পেশাল ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক খাওয়ানো হবে। প্রতি ঘরে পর্যটকদের জন্য বড়দিনের কেক পাঠানো হবে। এছাড়াও থাকছে স্পেশাল মেনু হট।’’
পিছিয়ে নেই বহরমপুরের হাল ফ্যাশনের রেস্তোরাঁগুলিও। সেখানে বড়দিনের হটকেক এ বার ‘টার্কি’। বহরমপুর মোহন মোড়ে দোতলা ঝাঁ চকচকে এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার সৌমেন সরকার বলেন, ‘‘তন্দুরের উনুনে বিশেষ ভাবে তৈরি টার্কি রান্না করে খাওয়ানো হবে ২৫ ডিসেম্বর রাতে। ট্রার্কির স্বাদের মৌতাত আনতে বিশেষ ভাবে তৈরি সস পরিবেশন করা হবে। আর থাকবে আইসক্রীম কেক।’’ ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হবে গোটা রেস্তোরাঁ। খাবার পরিবেশনের জন্য তৈরি থাকবেন সান্তাক্লজ টুপি পরা কর্মীরা। সৌমেন জানালে, ভারতীয়, চাইনিজ, থাই, তন্দুর সব রকম রান্নাতেই ওই দিন ক্রিসমাসের ছোঁয়া থাকবে।
ফিউশন ফুডের রকমারি রান্না নিয়ে আর একটি রেস্তোরাঁ বহরমপুরের পা রেখেছে। বড়দিন থেকে ইংরেজি বর্ষবরণের রাত পর্যন্ত মনোরঞ্জনের যাবতীয় পরিকল্পনা করে ফেলেছে তারা। রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখে কৃত্রিম ঘাসের লনে থাকছে বেশ কয়েকটি আলো ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি। রেস্তোরাঁ মালিকদের অন্যতম শৈবাল রায়ের কথায়, ‘‘বড়দিন উপলক্ষে আমাদের ‘নিউ অ্যারাইভালস্’ ফিউশন ফুডে থাকছে ইন্দো-চাইনিজ সুইট তন্দুর লেগ, ইংলিশ-পাক ফিউশনে ল্যাম্ব কাবাব ইন ব্রাউন শস, ইন্দো কন্টিনেন্টাল ফিউশন সুইট রোল, ইন্দো-আফগান ফিউশন মাটন কিমা কাবাব। এছাড়াও হারিয়ে যাওয়া কালো নুনিয়া, তুলসি মঞ্জরি, কালো বিন্নি চালের তৈরি রাইস দিয়ে হরেক রকমের রান্না।’’ সঙ্গে ডিপ-ফ্রায়েড আইসক্রীম, ওয়াইন চকোলেট ও টার্কির মাংস।
বাঙালি খানাতেও থাকছে বদলের ছোঁয়া। ষোলোআনা বাঙালি খাবার পরিবেশন করে এমন একটি রেস্তোরাঁ বড়দিনে মোচার কোপ্তা, আলু এঁচোড় চিংড়ি, দই পটলের পরিবর্তে মটন আইসল্যান্ড কাবাব, মুগ চাটনি নাইডু, মোতি পোলাও, সিজলার, স্টেয়ার ফ্রাই চিকেন, মাটন সৌদি, চিকেন পাতিয়ালা, চিকেন পাহাড়ি মশালা, মটন পাহাড়ি মশালা, মটন-চিকেন চাঁদনি কাবাব, চিকেন কস্তুরি দিয়ে সাজাচ্ছে তাদের মেনু। রেস্তোরাঁ মালিকদের অন্যতম অরিন্দম মণ্ডলের মতে, ‘‘বড়দিনের জন্যই এই অন্য ভাবনা।’’
সব মিলিয়ে যা আয়োজন তাতে আগাম বুকিং সেরে ফেলা পর্যটকদের নিরাশ হওয়ার কোনও জো নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy