তা হলে কে? প্রশ্নটা বেবাক ঘাবড়ে দেওয়ার মতো, তবে ছাপোষা দলীয় কার্যালয় থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের অলিন্দে নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি হলেই এই চেনা প্রশ্নটাই পরস্পরকে করছেন— তা হলে কে হচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি?
ঘুরতে ঘুরতে সে প্রশ্ন নেমে এসেছে একদা কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস কার্যালয় উজিয়ে পথেঘাটে, নেতা-কর্মীদের আড্ডায়। কারণ একটাই, প্রদেশ সভাপতির তালিকায় মৃদু হলেও উঠে এসেছে একটি নাম, মুর্শিদাবাদ এবং বহরমপুরের অধিকাংশের কাছে যা এই প্রশ্নটার চেয়েও চেনা এবং কিঞ্চিৎ আদরের। তিনি মনোজ চক্রবর্তী। বহরমপুরের বিধায়ক।
বিধায়ক বললে যে চেনা চেহারাটা ফুটে ওঠে সাতষট্টি বছরের মনোজের সঙ্গে তা খাপ খায় না বলেই স্থানীয় মানুষ প্রশ্নটার মধ্যে একটা সুপ্ত আগ্রহ খুঁজে পেয়েছেন, হয়ত খানিক আকাঙ্খাও— তা হলে সত্যিই কি মনোজ চক্রবর্তী!
সোমেন মিত্রের প্রয়াণের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চেয়ারে কে বসবেন তা নিয়ে চাপানউতোর, আকচাআকচি, চাপা আগ্রহ দিল্লিতক পৌঁছে গিয়েছে। প্রাথমিক একটা তালিকা তৈরি করে তা হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছেও দিয়েছেন বাংলার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা গৌরব গগৈ। দলের অন্দরের খবর, সেই তালিকায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীর পছন্দের দুই নেতা নেপাল মাহাতো এবং বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। আর তা নিয়ে জেলায় কানাঘুষো শুরু সেই থেকেই। অধীর অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতির দৌড়ে আমি কারও নাম সুপারিশ করিনি। ক’দিন পরে দিল্লি থেকে তা ঘোষণা হবে, তখনই দেখবেন, কে হচ্ছেন সভাপতি।’’
জেলা কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা অবশ্য বলছেন, ‘মনোজ হলে মন্দ হয় না। একটু ঠোঁটকাটা হয়ত। তবু সাধারণের এমন কাছের মানুষ বড় একটা পাওয়া য়ায় না।’ এক নেতার কথায়, “মনোজ চক্রবর্তী প্রদেশ সভাপতির আসনে বসলে জেলায় কংগ্রেস আবার জেগে উঠবে।” একই সঙ্গে বাংলায় কট্টর মমতা-বিরোধী হিসেবে মনোজ চক্রবর্তীর সুনাম থাকায় সামনের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক বিরোধী আন্দোলনও জোরদার হবে বলে মনে করছেন অনেকে। অনেকে মনোজের সভাপতি হওয়ার পিছনে বাম-কংগ্রেস জোট শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
সদালাপী এই কংগ্রেস নেতার উত্থান ছাত্র রাজনীতি থেকে। পরে অধীর চৌধুরির সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়ে প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলেন ২০০৬ সালে। তারপর টানা তিন বারের বহরমপুরের বিধায়ক হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন প্রায়।
এমনকি বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তীর জন্য শাসকদল ও উপযুক্ত মুখ খুঁজে পাচ্ছে না বলেও কানাঘুষোর খবর। তিন বারের বিধায়ক হওয়া স্বত্তেও মনোজ চক্রবর্তীর সঙ্গে গ্রাম-শহরের মানুষের সম্পর্ক ঘরের ছেলের। যুবসমাজেও অত্যন্ত পছন্দের মানুষ তিনি। অকারণে গাড়িতে সওয়ার হওয়ার চেয়ে সাইকেলে ঘুরে চায়ের আড্ডায় ডুব দেওয়া মানুষটি ইতিমধ্যেই সরকারি দেহরক্ষী সরিয়ে দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল নেতারা অবশ্য মনে করেন, এ সব সহজে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা!
তা সে সহজ-জটিল যাই হোক জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, ‘‘সমস্যাটা অন্য জায়গায়। মনোজ ইতিমধ্যেই বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক। দু’টো পদ কি এক জনের জন্য বরাদ্দ করবে হাইকমান্ড?’’ এবং এ কথাও ঠিক, মুর্শিদাবাদে জনপ্রিয় হলেও মনোজ যে জেলার বাইরে কংগ্রেসের তেমন চেনা মুখ নন তা নিয়ে দলের অন্দরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
কংগ্রেসের অলিন্দে পক্ষে-বিপক্ষে ছড়িয়ে থাকা এই সব প্রশ্ন নিয়ে অবশ্য তেমন ভাবছেন না মনোজ। বলছেন, “দেখুন, কংগ্রেসের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। অধীর চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতি করতে এসেছি। তিনি যা বলবেন তাই আমার ব্যক্তিগত মত, এর বেশি কিছু নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy