Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Chandrayaan-3's Moon Landing

চার মাস নাওয়া-খাওয়া ভুলে পরিশ্রম করেছেন জয়ন্ত, বিজয়, কৃশানুরা, বঙ্গ বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন সফল

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া কলোনির একটি দোতলা বাড়ির সামনে তো সন্ধ্যায় বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায়। এই বাড়ির ছেলে তুষারকান্তি দাস ইসরোর বিজ্ঞানী। তিনি সরাসরি চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।

(ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী) বিজয় দাই, সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৃণানু নন্দী, তুষারকান্তি দাস, অনুজ নন্দী, কৌশিক নাগ।

(ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী) বিজয় দাই, সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৃণানু নন্দী, তুষারকান্তি দাস, অনুজ নন্দী, কৌশিক নাগ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

র‌্যাগিংকে বড্ড ভয় ছিল ছেলেটির। তাই জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভাল ফল করেও শেষ পর্যন্ত আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হয়নি। ছেলেকে প্রযুক্তিবিদ করবেন, এত টাকা-পয়সাও ছিল না বাবা-মায়ের। তাই শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন বারাসত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, বিষয় গণিত। পরে খড়্গপুর আইআইটি থেকে এমএসসি এবং পিএইচ ডি করেন বাদুড়িয়ার জয়ন্ত পাল। বুধবার সন্ধ্যা ছ’টার পরে তিনিও খুশি।

খুশি বীরভূমের বিজয় দাই, বাঁকুড়ার কৃশানু নন্দীও। এই দু’জনই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-টেক করেছেন। প্রথম জন চন্দ্রযান-৩-এর ‘অপারেশন’ দলের সদস্য। দ্বিতীয় জন রয়েছেন সেই দলে, যাঁরা চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরে ‘রোভার’ গাড়ির গতিবিধি সমন্বয়ের বিষয়টি দেখছেন। জয়ন্তদের দায়িত্ব ছিল চন্দ্রযান-৩-এর গতিবেগ কখন কেমন হবে, তা দেখা। সফল অবতরণের পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তখনই এ কথা জানান জয়ন্ত। আরও জানান, গত চার মাস নাওয়া-খাওয়া ভুলে পরিশ্রম করেছে গোটা দল। তাতেই এসেছে সাফল্য।

ইসরোর কন্ট্রোলরুমে ব্যস্ত পীযুষকান্তি পট্টনায়ক।

ইসরোর কন্ট্রোলরুমে ব্যস্ত পীযুষকান্তি পট্টনায়ক। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দ্রযান-২ যে শেষ পর্যন্ত সাফল্য পায়নি, তার ছায়া সকলের উপরেই পড়েছিল। বীরভূমের মল্লারপুরের বিজয় দাইয়ের মা শ্যামলী বলেন, ‘‘ছেলে আজকে দুপুরেও ফোন করে টিভি দেখতে বলেছিল। আমরা টিভির সামনে প্রবল উৎকণ্ঠায় বসেছিলাম। এখন খুব আনন্দ হচ্ছে।’’ তিনি ততক্ষণে শঙ্খ বাজাতে শুরু করেছেন। আগের ব্যর্থতা মন ভেঙে দিয়েছিল বিজয়ের বাবা নারায়ণচন্দ্র দাইয়েরও। এ বার তিনিও খুব চিন্তায় ছিলেন। অবশেষে সাফল্য। তিনি বলেন, ‘‘কালকে বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো দেব।’’

বীরভূমেরই সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় চন্দ্রযান-৩-এর অপারেশন ডিরেক্টর (মিশন সফ্টওয়্যার)। তাঁরা বাবা-মাও এ দিন উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। পরে বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে জীবন সার্থক হল। চন্দ্রযান চাঁদের মাটি ছোঁয়ার মূহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরে গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে আমরাও গর্বিত।’’ দু’জনই জানালেন, ‘‘সৌমজিৎ ফোন করেছিল। বলল, রাতে ছবি পাঠাচ্ছে।’’ তার পরে একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘আমরাও টিভি থেকে ওর ছবি তুলে রেখেছি।’’

যাদবপুরের আর এক প্রাক্তনী, বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের কৃষক পরিবারের ছেলে কৃশানু নন্দীরও স্কুল থেকে ইসরো পর্যন্ত যাত্রাপথ বেশ কঠিন। তাঁর দিদি দেবিকা নায়েক বলছিলেন, কখনও ছাত্র পড়িয়ে, কখনও মেধাবৃত্তির টাকা থেকে ভাইয়ের পড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। জামাইবাবু শৌভিক নায়েক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে অফিসেই রয়েছে কৃশানু। ওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’’ কৃশানুর বাবা-মা চিকিৎসার জন্য এখন বেঙ্গালুরুতেই আছেন। দেবিকার কথায়, ‘‘এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’’

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া কলোনির একটি দোতলা বাড়ির সামনে তো সন্ধ্যায় বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায়। এই বাড়ির ছেলে তুষারকান্তি দাস ইসরোর বিজ্ঞানী। তিনি সরাসরি চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। চন্দ্রযানের চাঁদের মাটি ছোঁয়া তাই যেন গোটা মহল্লার গর্বের দিন। তুষারের বন্ধু অরিন্দম ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘ও বরাবরই পড়ুয়া ছেলে। এখন তো চাঁদও ছুঁয়ে ফেলল!’’ তুষারের দাদা কুমারকান্তি হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভাইয়ের আলোয় আমরাও যেন এখন ছোটখাট সেলিব্রিটি!’’

পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাসিন্দা, বিজ্ঞানী পীযূষকান্তি পট্টনায়ক ছিলেন চন্দ্রযান-৩-এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে। চন্দ্রযানের সফল অবতরণের পরে উচ্ছ্বিসত পীযূষ। ফোনে বলেন, ‘‘আমাদের কন্ট্রোল রুমের মধ্যে কার্যত উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। ঘণ্টা তিনেক পরে রোভার প্রজ্ঞানকে বিক্রমের পেট থেকে বের করতে হবে। প্রজ্ঞানের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের।’’

একই রকম উচ্ছ্বাস উত্তর দিনাজপুরে ইসলামপুরে, আশ্রমপাড়ায় অনুজ নন্দীর বাড়িতে। অনুজ চন্দ্রযানের অভিযানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর মা শোভারানি নন্দী বলেন, ‘‘জানতাম, ছেলের পরিশ্রম সফল হবে।’’ অনুজের ভাইপো অরিত্র টিভির সামনে থেকে উঠতেই চাইছিল না। পরে সে বলল, ‘‘জেঠুর সাফল্য দেশকে গর্বিত করেছে। আমিও চেষ্টা করব, জেঠুর মতো হতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan-3 ISRO Scientist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy