(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন করে ওই তালিকায় নাম উঠেছে পাঁচটি ভাষার। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চেষ্টা করছে তাঁর সরকার। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে ওই দাবির সপক্ষে গবেষণাপত্রও পাঠানো হয়েছে। সেই দাবিই মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। অন্য দিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, আপামর বাঙালিকে এই পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে জল্পনা, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।
রাজনীতির বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের একাংশের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে ১২টি পেয়েছে বিজেপি। তার আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির শীর্ষ নেতারা ২০০টি আসন পাবেন বলে দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ৭৭টি আসন পেয়েছিল পদ্ম-শিবির। ২০২৬ সালে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন। রাজনীতির কারবারিদের ওই অংশের মত, সেই ভোটে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন থেকে বাঙালি জনতাকে কাছে টানতে চাইছে বিজেপি। সেই কারণে বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র এই স্বীকৃতি।
শুক্রবার রাতে মমতা এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র এই স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘অবশেষে বাংলাকে ধ্রপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত সরকার। এই খবর ভাগ করে নিতে পেরে দারুণ খুশি।’’ এর পরেই তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই স্বীকৃতি ‘ছিনিয়ে’ আনার চেষ্টা করছে তাঁর সরকার। এই সংক্রান্ত গবেষণার তিনটি খণ্ড পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। মমতা লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই গবেষণা সমন্বিত দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আমরা অবশেষে ভারতের ভাষা সংস্কৃতির শিখরে পৌঁছেছি।’’
শুভেন্দু অবশ্য এই স্বীকৃতিকে দুর্গাপুজো উপলক্ষে বাঙালির জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার বলেই মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, বাঙালিদের জন্য এটা ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’। একটি ‘স্ক্রিনশট’ও তিনি শেয়ার করেছেন। সেখানে জানানো হয়েছে, তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম, ওড়িয়ার সঙ্গে ধ্রুপদী ভাষার তালিকায় জুড়ল বাংলা, মরাঠি, পালি, অহমিয়া এবং প্রাকৃত। কোনও ভাষার ইতিহাস বা প্রাপ্ত নথির বয়স যদি ১,৫০০ থেকে ২০০০ বছর হয়, আদি ভাষা এবং সাহিত্যের সঙ্গে বর্তমানের ভাষা এবং সাহিত্যের ফারাক যদি স্পষ্ট হয়, তবেই সেই ভাষাকে ধ্রুপদীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই স্বীকৃতি পেলে সেই ভাষা নিয়ে গবেষণা এবং সাহিত্য চর্চার জন্য বিশেষ অনুদান দেয় কেন্দ্র। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা বিভাগ বা কেন্দ্র গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেলে তাতে লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, শিলালিপি, এবং দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসমূহ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগী হওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই স্বীকৃতি প্রাপ্ত ভাষাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাওয়ার ফলে বাংলার সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদদের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও সম্মাননার ব্যবস্থাও করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy