প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলায় তৃণমূলের প্রচারে ছিল নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলনে সিপিএমের অত্যাচারের কাহিনী। পাঁচ বছর পর পঞ্চায়েত ভোটে সেই নন্দীগ্রামের নাম নেই তৃণমূল তথা শাসক দলের মুখে। এবার ভোট প্রচারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের মূল ইস্যু ছিল উন্নয়ন।
শাসক দলের উন্নয়নের ঢাক এতটাই বেজেছে যে, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়লে এলাকার উন্নয়নে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ থেকে পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে বলে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারাম্যান শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, হলদিয়া, খেজুরি এলাকা নিয়ে গঠিত হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে রয়েছে জেলার ১৪টি ব্লকের একশোরও বেশি পঞ্চায়েত। শুভেন্দুবাবুর এই ঘোষণায় তমলুক, হলদিয়া, খেজুরি এলাকায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছে। যার ফল, ভোটের মনোনয়ন পর্বেই পর্ষদের এলাকাধীন ১৬টি পঞ্চায়েতে বিরোধীশূন্য ভাবেই জয় নিশ্চিত হয়েছে শাসক দলের।
দলীয় ও নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের পর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সহ জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দখলে এসেছিল বিরোধী তৃণমূলের। ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করে শাসক দল তৃণমূল। তৃণমূল একাই ১৭৪টি পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছিল। বামফ্রন্ট ৪৮টি ও কংগ্রেস একটি পঞ্চায়েত দখল করে। পরবর্তী সময়ে জেলার আরও কয়েকটি পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল। কিন্তু বিপুল জয়ের মাঝেও কাঁটা হয়ে বিঁধেছিল বাম দখলে থাকা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের লাগোয়া সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি। এবার মনোনয়ন পর্বেই সেই সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতিতে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে তৃণমূল।
তবে গত পাঁচ বছরে শাসক দলের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলায় প্রধান বিরোধীর স্থান বদল ঘটেছে। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী হিসেবে বামেদের সরিয়ে উঠে আসে বিজেপি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা উপ-নির্বাচনেও তৃণমূলের প্রধান বিরোধী হয় বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় প্রধান বিরোধী হিসেবে সিপিএম নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে পারবে নাকি বিজেপির উত্থান ঘটবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল রয়েছে। কারণ মনোনয়ন জমার নিরিখে সামগ্রিকভাবে জেলায় বামেদের পিছনে ফেলেছে বিজেপি।
সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘অবাধ ভোট হলে বামফ্রন্টই প্রধান বিরোধী হত। কিন্তু এবার ভোটে যে ভাবে মনোনয়ন পর্ব থেকে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাতে জেলার অধিকাংশ এলাকায় মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। ফলে ভোটে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না।’’
বিজেপি’র তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, পাঁশকুড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী, ময়না-সহ জেলার বেশ কিছু ব্লকে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থেকে সেই সন্ত্রাসে সহযোগিতা করছে। তা সত্ত্বেও মানুষ আমাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি।’’
যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘উন্নয়নই আমাদের জেতাবে। আরও উন্নয়নের জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দেবে। জনসমর্থন হারিয়ে বিরোধীরা এ বার মাঠেই নেই।’’ তিনি জানান, বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রচার করলেও ১০ বছর ধরে জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। এবারও তাই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy