উৎসব: গ্রামবাসীদের সঙ্গে অলীক চক্রবর্তী। ভাঙড়ে। ছবি: সামসুল হুদা।
হাইকোর্টের নির্দেশে হোয়াটস অ্যাপে মনোনয়ন দাখিল করে নজির গড়েছিলেন তাঁরা। ভাঙড়ের জমি আন্দোলনে যুক্ত সেই ৯ নির্দল প্রার্থীর ৫ জনই জয়ী হলেন পঞ্চায়েত ভোটে। তবে পঞ্চায়েত সমিতিতে আরাবুলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হেরেছেন জমি কমিটির প্রার্থী সরিফুল ইসলাম।
জমি কমিটির নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবাধ ভোট হয়নি। তবু তার মধ্যেই এই ফল। মানুষ বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা পাওয়ার গ্রিড চান না।’’ অলীকের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীও আগে বলেছিলেন, মানুষ না চাইলে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড হবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন নবান্নে বলেন, ‘‘যে মাওবাদীরা হোয়াটসঅ্যাপে নমিনেশন জমা দিয়েছিল, তার মধ্যে পাঁচটায় জিতেছে, চারটেতে জেতেনি। পাওয়ার গ্রিড নিয়ে যেখানে গণ্ডগোল হচ্ছিল, সেখানেও আমরা জিতেছি।’’ পাওয়ার গ্রিড নিয়েও তিনি যে অন্য রকম কিছু ভাবছেন না, এ দিন তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প বলে আমি দেখব না, তা তো নয়! এটা তো সরকারের দায়িত্ব।’’ আরাবুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘আরাবুলকে গ্রেফতার করে সঙ্গে সঙ্গে জেলে ভরে দিয়েছি। সে দায়ী কি না, আমি জানি না। একটা অভিযোগের ভিত্তিতে, অভিযোগ করার আগেই আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তা সত্ত্বেও ও জেলে বসেই জিতেছে। মানুষ যদি না ভালবাসত, তা হলে কি ও জিততে পারত! ও শুধু নয়, ওর স্ত্রী, ছেলে সবাই জিতেছে।’’
ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট পঞ্চায়েতের যে আসনগুলিতে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হলেন, সেই আসনগুলি হল খামারআইট, মাছিভাঙা, পদ্মপুকুর, টোনা এবং উড়িয়াপাড়া। জয়ী প্রার্থীরা হলেন, এসরাফিল মোল্লা, আজিজুল মোল্লা, ফরিউদ্দিন মোল্লা, জাহানারা বিবি এবং সালেহার বিবি। এসরাফিল বলেন, ‘‘মানুষ পাওয়ার গ্রিড চান কিনা, এই ভোট ছিল তারই পরীক্ষা। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কি চান।’’
যে আসনগুলিতে নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন, সেখানে কোনওটিতেই তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট তিন অঙ্কে পৌঁছয়নি। যেমন মাছিভাঙা। এখানে নির্দল প্রার্থী পেয়েছেন ১২১৯টি ভোট। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ১৭টি। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে তৃণমূল নেতা তথা আরাবুল ইসলামের ছেলে হাকিমুলের দাবি, ‘‘জমি কমিটির লোকজন ভয় দেখিয়ে ভোট করেছে। মানুষকে ভোট দিতে বেরোতেই দেয়নি।’’
‘অবাধ’ ভোট যে হয়নি, সেই পাল্টা দাবি জমি কমিটির নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীরও। যে তিনটি গ্রাম পঞ্চয়েত আসনে নির্দল প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন, সেখানে তাঁদের প্রাপ্ত ভোট কোথাও ৪০, কোথাও ৫০ কোথাও ৮৯টি। শর্মিষ্ঠার কথায়, ‘‘কারা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল, তা মানুষ জানেন। ওদের একজনও কি কোথায়ও অভিযোগ করেছেন? ভোটের দু’দিন আগে খুনও হয়েছেন জমি আন্দোলনের সমর্থক। বহু জায়গায় ছাপ্পা ভোট করেছে ওরা। আমরা কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট নেওয়ার আবেদন করেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: প্রত্যাশিত জয়, তবু পূর্ণগ্রাস হল না
পাঁচটি আসনে জয়ী হয়ে উচ্ছ্বাস নির্দল শিবিরে। অলীককে ঘিরে ভিড় দেখা গেল গ্রামে। জমি কমিটির আন্দোলনের শুরুর দিকে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন মফিজুল খান। তাঁর বাবা শুকুর আলি খান বলেন, ‘‘মানুষ বুঝিয়ে দিলেন, আরাবুল আর তার বাহিনী সন্ত্রাস করেও কিছু করতে পারল না। মানুষ ওদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।’’
অন্য দিকে, নিজে ভোটে জিতেও স্বস্তিতে নেই খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে নলমুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁকে। এক পুলিশ কর্মী খবর দেন, ‘‘আপনি আর আপনার ছেলে, দু’জনেই ভোটে জিতেছেন।’’ পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এর উত্তরে আরাবুলের ঝাঁঝাল প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। দেশের কোথাও শুনেছেন, শাসক দলের নেতাকে চারবার গ্রেফতার করা হয়েছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy