Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

গোপনীয়তার স্বার্থে ই-ফাইল এড়াচ্ছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর

অর্থকর্তারা জানাচ্ছেন, অনলাইনে ফাইল তৈরি করে সিদ্ধান্ত নিতে যত আপত্তির কথা শোনা যাচ্ছে মূলত পুলিশের ক্ষেত্রেই।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর আর্থিক পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে তুলে কেন্দ্রীয় পুরস্কার ঘরে তুলেছে রাজ্যের অর্থ দফতর। কাগজবিহীন অফিস পরিচালনা ওই ব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ। রাজ্যের ৫২টি দফতরেই চালু হয়েছে ই-অফিস। সেখানে অনলাইনেই ফাইল তৈরি, নোটশিট লেখা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ দফতরের খবর, ৫২টির মধ্যে ৫১টি দফতরের প্রায় ৯০% কাজ ই-অফিসে হলেও ব্যতিক্রম একটি দফতর। সেটি স্বরাষ্ট্র দফতর। তাদের প্রায় ৯০% ফাইলের কাজ এখনও করা হচ্ছে অফলাইনেই। অর্থাৎ কাগজে-কলমেই স্বরাষ্ট্র দফতর ফাইল লিখছে, চালাচালি করছে।

অর্থকর্তারা জানাচ্ছেন, অনলাইনে ফাইল তৈরি করে সিদ্ধান্ত নিতে যত আপত্তির কথা শোনা যাচ্ছে মূলত পুলিশের ক্ষেত্রেই। তাই নবান্নে স্বরাষ্ট্র দফতরও কাগজের ফাইলে সাবেক প্রথায় কাজ চালাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রায় সব দফতরই তো ই-অফিস ব্যবহার করে অনলাইনে ফাইল চালাচালি করছে, তা হলে স্বরাষ্ট্র দফতরে পুরনো প্রথা ধরে রাখার কারণ কী?

স্বরাষ্ট্রকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, স্বরাষ্ট্র দফতরে পুলিশের ফাইলের সংখ্যাই সব চেয়ে বেশি। কিন্তু পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ অফলাইন প্রথা ছাড়তে রাজি নয়। তাদের একাংশের যুক্তি, পুলিশের অধিকাংশ ফাইল স্পর্শকাতর, গোপন এবং অতিগোপন। ফলে সেগুলো সাবধানে চালাচালি করতে হয়। গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়। তাই ই-অফিসে যাওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ স্তরের এক কর্তার বক্তব্য, গোপনীয়তা রক্ষায় এখনও অফলাইন ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে সব দিক রক্ষা করে যাতে অনলাইন চালু করা যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।

অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ই-অফিসের অনলাইন ব্যবস্থার চেয়ে সুরক্ষিত আর কিছু নেই। কারণ, এখানে ফাইল অনলাইনেই থাকে। কোন কোন অফিসার ফাইল দেখছেন, তা নথিবদ্ধ থাকে কম্পিউটারে। ফলে গোপন খবর ফাঁস হলে তার দায়িত্ব বর্তায় অফিসারদের উপরেও।

অর্থকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, কাগজের ফাইল চালাচালি হয় বিভিন্ন কর্মী-অফিসারের মাধ্যমে। ফলে এ ক্ষেত্রে ফাইলের গোপনীয়তা তুলনায় কম সুরক্ষিত। অর্থ দফতরের জন্য নির্দিষ্ট সার্ভারে সব তথ্য জমা থাকে। তাই ফাইল হারিয়ে যাওয়ার বা ফাইলে গরমিল করার সুযোগ নেই। তবু স্বরাষ্ট্র দফতর ই-অফিসে সমস্ত কাজকর্ম করছে না কেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না অর্থ দফতরের কর্তাদের।

নবান্নের খবর, ই-অফিসের পাশাপাশি সরকারের ‘ওয়ার্কফ্লো বেসড ফাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ নামে একটি ব্যবস্থা চালু আছে। তাতে সরকারি কর্তারা অনলাইনে সব ধরনের চিঠিপত্র, অভিযোগ, নির্দেশিকা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। অর্থ দফতর জানাচ্ছে, ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের ২০৬৪টি অফিসে ১১,৬৪৪ জন অফিসার ২১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৪২টি সরকারি নথি দেখেছেন এবং যা ব্যবস্থা করার করেছেন। এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন দফতরের অফিসারেরা ‘লগ-ইন’ করেছেন ২০ লক্ষ ৩১ হাজার বার। শুধু চিঠিপত্র, অভিযোগ বা নির্দেশিকা নিয়ে যদি এমন সুরক্ষিত ব্যবস্থা চলতে পারে, তা হলে ই-অফিসে স্বরাষ্ট্র দফতরের সক্রিয় অংশগ্রহণ কেন সম্ভব নয়, প্রশ্ন তুলেছেন কর্তারা।

এক স্বরাষ্ট্রকর্তা জানান, সম্প্রতি অর্থ দফতরের সঙ্গে ডিজি-সহ পুলিশকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানেই ঠিক হয়েছে, পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ সক্রিয় ভাবে ই-অফিসে যোগ দেবে। প্রশাসনে স্বচ্ছতার স্বার্থে সেটা যে জরুরি, তা মেনে নিয়েছেন পুলিশকর্তারা। ফলে আগামী কিছু দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা করছেন নবান্নের স্বরাষ্ট্রকর্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna mamata banerjee Security Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy