Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নিজেদের সিরাম নেই, সর্পদংশনে মৃত্যু বেশি বঙ্গেই

‘ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইল’ বা এনএইচপি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬,২২৯ জন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ রয়েছে। একের পর এক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে তাবড় চিকিৎসক, সর্পবিজ্ঞানী, সাপ ও সর্পদংশনজনিত বিপদ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন মঞ্চ চিঠি লিখে লিখে হয়রান। তবু ঘুম ভাঙছে না রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের। দু’বছরেও রাজ্যের নিজস্ব অ্যান্টিভেনম সিরাম বা এভিএস তৈরির পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। পরিণাম? ২০১৮ সালেও সাপের কামড়ে মৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে বাংলা!

‘ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইল’ বা এনএইচপি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬,২২৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০৩ জনের। দেশের মধ্যে যা সর্বাধিক। দ্বিতীয় স্থানে অন্ধপ্রদেশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মৃতের সংখ্যা অর্ধেক— ১১৭। তামিলনাড়ুতে ৫০ এবং মহারাষ্ট্রে ৩২।

এই পরিসংখ্যানে বাংলার চিকিৎসক বা সর্পবিশারদেরা মোটেই বিস্মিত নন। তাঁদের বক্তব্য, এমনটা তো হওয়ারই কথা। কারণ, দু’বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে এভিএস কাজ করছে না।

আরও পড়ুন: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে ছেলেকে ‘পুড়িয়ে খুন’, ধৃত বাবা

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক শ্যামল কুণ্ডু জানান, চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে বিষক্রিয়া হয়েছে, এমন রোগীর সংখ্যা ১৮৪। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। শ্যামলবাবুর কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি, ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এভিএস আদৌ কাজ করেনি। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। ৩০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এভিএস কাজ করেছে। বাকি ৫০ শতাংশ রোগী এভিএসের দৌলতে প্রাণে বেঁচেছেন ঠিকই, কিন্তু অন্য ধরনের শারীরিক জটিলতার শিকার হয়েছেন। আমাদের অভিজ্ঞতা হল, রাজ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।’’ ডব্লিউএইচও বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্পবিশারদ ডেভিড ওয়ারেলের পরামর্শ, এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে হলে রিজিওনাল অ্যান্টিভেনম কালেকশন সেন্টারের প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ের মন বুঝতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি

সব রোগীর ক্ষেত্রে এভিএম পুরোপুরি কাজ করছে না কেন?

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, স্থানভেদে সাপের বিষের তীব্রতা কমবেশি হয়। বিষের উপাদানে চরিত্রগত ও মাত্রাগত পার্থক্যও থাকে। তাই যে-অঞ্চলের সাপ কামড়াচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে হলে সেখানকার সাপের বিষ দিয়ে তৈরি সিরামই চাই। অন্য অঞ্চলের সাপের বিষ থেকে তৈরি সিরাম তেমন কাজ না-করতেও পারে। সর্পদংশনের চিকিৎসা প্রশিক্ষণে রাজ্য সরকারের ‘রিসোর্স পার্সন’ চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার জানান, এখানে যে-এভিএস দেওয়া হয়, তা মূলত তামিলনাড়ুর সাপের বিষ দিয়ে তৈরি। বঙ্গদেশের সাপ এবং দক্ষিণ ভারতের সাপের বিষের প্রোটিনের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। তাই বেশ কিছু ক্ষেত্রে এভিএস কাজ করছে না।

এই প্রেক্ষিতেই বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রস্তাবিত রাজ্যের নিজস্ব এভিএস তৈরির পরিকাঠামো অবিলম্বে গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সব স্তরে চিঠি দিয়েছে সাপের কামড়ের বিপদ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ‘‘আর কত মৃত্যু হলে স্বাস্থ্য দফতরের ঘুম ভাঙবে, কে জানে! বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চিকিৎসার পরেও কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বার ডায়ালিসিসের পরে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। এভিএস যথাযথ হলে সিরামের এত ভায়াল লাগে না। তাতে তো সরকারের টাকাও বাঁচে,’’ বলছেন যুক্তিবাদী মঞ্চের সৌম্য সেনগুপ্ত।

সর্পবিশেষজ্ঞ উমেশ ভারতী বলেন, ‘‘অ্যান্টিভেনম কাজ করছে কি না, তা যাচাইয়ে রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া উচিত। অ্যান্টিভেনম কতখানি কার্যকর হচ্ছে বা হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বার করতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Snakebite India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE