ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে ৬৪ জন বিচারক নিয়োগের জন্য অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সুপারিশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু ডিসেম্বর শেষ হতে চলল, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিই দেওয়া হয়নি! এই নিয়ে রাজ্য সরকার ও হাইকোর্টের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, শূন্য পদে দ্রুত বিচারক নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। সে-কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে রাজ্যের আইন দফতরে। কিন্তু সরকারের তরফে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। হাইকোর্ট নয়। পিএসসি থেকে বিচারকদের নামের প্যানেল এলে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ হয় সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের মাধ্যমে। ‘‘কিছু দিন আগেই কয়েক জন বিচারকের নাম প্রস্তাব করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য এই ব্যাপারে কোনও শিথিলতা দেখায় না। রাজ্যে বিচারপ্রার্থীরাই অগ্রাধিকার পান,’’ বলেন মলয়বাবু।
হাইকোর্ট প্রশাসনের পাল্টা বক্তব্য, পিএসসি বিচারক নিয়োগ করলেও তাঁদের পদোন্নতি ঘটিয়ে বিভিন্ন আদালতে নিয়োগ করে হাইকোর্টই। সদ্য নিযুক্ত কোনও বিচারককে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট, অতিরিক্ত জেলা বিচারক বা মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পদে দেওয়া যায় না। যে ৬৪ পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলি শূন্য পদ এবং ‘সিনিয়র’ পদ।
হাইকোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করার জন্য রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। সেই অনুযায়ী ২০০২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ১৫১টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হয়। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলিকে স্থায়ী করতে হবে এবং তাদের খরচ বহন করতে হবে রাজ্যগুলিকেই। রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে ১৫১টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মধ্যে মাত্র ৮৮টিকে স্থায়ী করে। বাকি আদালতগুলি পরিণত হয় ‘অতিরিক্ত জেলা আদালত’-এ। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতির মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত বিচারের জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গড়া হয়।
আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছিল কেন্দ্রীয় প্রকল্প। ১০ বছর চালানোর পরে সেই প্রকল্প বন্ধ করে কেন্দ্র দায় চাপায় রাজ্যের ঘাড়ে। আমরা সেই ১৫১টি কোর্টের জায়গায় ৮৮টি স্থায়ী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট, ২৯টি এডিজে আদালত এবং ৪৬টি মহিলা আদালত তৈরি করেছি। একটি আদালতও বন্ধ করা হয়নি। অনেক রাজ্যে এ-সব কিছুই হয়নি।’’
গত অগস্টে হাইকোর্ট প্রশাসন ২১ জন বিচারকের পদোন্নতি ঘটিয়ে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। তাঁদের নামের তালিকা পাঠিয়ে রাজ্যের আইন দফতরকে বলা হয়, ওই বিচারকদের সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। তাঁদের স্থায়ী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঠানো হোক। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২১টি শূন্য পদ পূরণের কথা ছিল।
মলয়বাবু বলেন, ‘‘হাইকোর্ট যদি নতুন পদে বিচারক চেয়ে থাকে, অর্থ দফতরের অনুমোদনসাপেক্ষে তার ব্যবস্থা করা হবে। নিশ্চয়ই সেই প্রক্রিয়া মেনে চলা হচ্ছে।’’
অগস্টেই বিচারক বাছাই করে হাইকোর্ট তাঁদের লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ নেয়। তার পরে প্রোমোশন দিয়ে ২০ জনের তালিকা পাঠায় আইন দফতরে। এর জন্য পিএসসি-র মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা নয় বলেই জানিয়েছে হাইকোর্ট প্রশাসন। রাজ্যকে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ২০ জন বিচারকের নিয়োগের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
সেপ্টেম্বরের গোড়ায় বিভিন্ন জেলায় মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ২৩টি পদ শূন্য হয়। কর্মরত সিভিল জজদের (জুনিয়র ডিভিশন) মধ্য থেকে ২৩ জনের প্রোমোশন দিয়ে তাঁদের নামের তালিকা পাঠানো হয়। তাঁদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy