Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

বিশ্বভারতীর হাত থেকে রাস্তা ফের নিয়ে নিল রাজ্য

শান্তিনিকেন থেকে শ্রীনিকেতন সংযোগকারী প্রায় তিন কিলোমিটার ওই রাস্তা মাঝেমধ্যেই বিশ্বভারতী বন্ধ করে দেওয়ায় আশ্রমিকেরা খুবই সমস্যায় পড়েন।

এই সেই রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র

এই সেই রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র

সৌরভ চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৫৬
Share: Save:

উপাসনাগৃহ থেকে কালিসায়র মোড় পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ফিরিয়ে নিল রাজ্য সরকার। সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে এ কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে খুশি আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ সককেই।

শান্তিনিকেন থেকে শ্রীনিকেতন সংযোগকারী প্রায় তিন কিলোমিটার ওই রাস্তা মাঝেমধ্যেই বিশ্বভারতী বন্ধ করে দেওয়ায় আশ্রমিকেরা খুবই সমস্যায় পড়েন। আশ্রমিকদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে চিঠি দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে এই চিঠির অংশবিশেষ পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তাটা যেহেতু পূর্ত দফতরের অধীনে ছিল, তাই ওটা জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু, বিশ্বভারতী আমাদের কাছে আবেদন করে রাস্তাটা নিয়েছিল। আজকে আমি এখানে আসার আগে ফাইলটা সই করে এসেছি, রাস্তাটা আমরা আবার ফেরত নিচ্ছি। তা হলে আশ্রমের যে সমস্যা, তা সমাধান হয়ে যাবে।’’

তবে আশ্রমিকদের চিঠি হাতে পাওয়ার আগেই তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা-ও এ দিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এ দিন বোলপুর রওনা দেওয়ার ঠিক আগে হেলিপ্যাডেই তিনি ফাইল সই করেছেন। তার পরে হেলিকপ্টারে চিঠি হাতে পান। মমতার কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা বলে দিয়েছি যে, ওটা পূর্ত দফতরকে হস্তান্তর করতে হবে। সুতরাং আইন মেনে ওটা হাতে নিয়ে নিজেরা সুন্দর করে রাখবেন।’’

আরও পড়ুন: তাঁর মতোই লক্ষ্য অমর্ত্য সেন, সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর সঙ্গে কি টক্কর নতুন পড়শি বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের

২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তের (বর্তমানে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) আবেদনের ভিত্তিতে এই রাস্তাটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। অমর্ত্য সেন, ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, শান্তিদেব ঘোষ-সহ বহু বিশিষ্ট আশ্রমিকের বাসভবন এই রাস্তার ধারেই। আশ্রমিকদের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্যের সময়ে যখন তখন ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত রকম মালবাহী গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় তাঁরা অসুবিধার মুখে পড়েছেন। বিশেষত, শিক্ষাভবন মোড় থেকে কাচমন্দির পর্যন্ত রাস্তায় সর্বক্ষণের জন্য মালবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করায় সমস্যা আরও বেড়েছে। ঐতিহ্যশালী বাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণেও অসুবিধা হচ্ছিল।

শুধু তাই নয়, সাপ্তাহিক মন্দির বা বিশেষ উপাসনার দিনগুলিতেও শিক্ষাভবন মোড় থেকেই সমস্ত ধরনের যান চলাচল আটকে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ আশ্রমিকদের। একই সঙ্গে ওই রাস্তায় সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ বা ছবি তোলাও ক্ষেত্রবিশেষে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণায় তাই খুশির হাওয়া বইছে আশ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা অত্যন্ত খুশি যে, বিশ্বভারতীর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কিছু একটা হল। প্রবীণ আশ্রমিকদের সমস্যা এতে অনেকটাই মিটবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই এ দিন আশ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ।

বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে যে সমস্যার জন্য রাস্তা চাওয়া হয়েছিল, সেগুলোই আবার ফিরে আসবে। রাস্তার ধারে জমি দখল ও অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ বাড়বে। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতীর সঙ্গে বা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। তা না করে কয়েক জনের সুবিধার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা সৃষ্টি করা তাঁর উচিত হয়নি।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পাঁচিল বিতর্কেও মুখ খোলেন। বিশ্বভারতীর যত্রতত্র পাঁচিল নির্মাণ কতটা আইন মেনে হয়েছে, তা দেখার জন্য তিনি মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন। শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের হাতে যদি কিছু থাকে, তা আইনত দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Visva-Bharati University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy