Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

যেন ‘বন্‌ধ’ চলছে হাসপাতালে

পাঁচ দিন ধরে চলা অচলাবস্থা স্বাস্থ্য-পরিষেবার উপরে কী প্রভাব ফেলেছে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ছবিই তা বলে দিচ্ছে।

আর জি করে ফাঁকা মেডিসিন ওয়ার্ড। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

আর জি করে ফাঁকা মেডিসিন ওয়ার্ড। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

শয্যা আছে। কিন্তু রোগী নেই!

পাঁচ দিন ধরে চলা অচলাবস্থা স্বাস্থ্য-পরিষেবার উপরে কী প্রভাব ফেলেছে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ছবিই তা বলে দিচ্ছে।

যে কোনও সরকারি হাসপাতালের ব্যস্ত জায়গা হল মেডিসিন ওয়ার্ড। শনিবার সকালে আর জি করের সেই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, একের পর এক শয্যা খালি পড়ে আছে। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে দীর্ঘ লাইন নেই। রোগীর পরিজনদের জন্য তৈরি হওয়া ছাউনিতেও ভিড় নেই। বস্তুত, হাসপাতালের প্রতিটি অংশে যে শূন্যতা এ দিন বিরাজ করেছে, তা যে কোনও বন‌্ধের দিনের সঙ্গে তুলনীয়।

মেডিসিন ওয়ার্ডের এক কোণে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত, ষাটোর্ধ্ব কালীপদ বৈরাগীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর এক আত্মীয় বললেন, ‘‘অন্য সময়ে তো বেডই মেলে না। এখন খাঁ খাঁ করছে। কোনও রোগীই তো ভর্তি হচ্ছেন না!’’ আগরপাড়ার বাসিন্দা গোপীনাথ বিশ্বাস জানান, হার্টের সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। গোপীনাথের দাবি, প্রথমে তাঁকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু ‘প্রভাবশালী’ এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ভর্তি হতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে জুনিয়র চিকিৎসক প্রথমে আমাকে দেখেছিলেন, তিনি আর দেখতে আসেননি। তবে বড় ডাক্তার দেখছেন।’’

চিকিৎসা কি হচ্ছে? স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা অণিমা কোলে বললেন, ‘‘ওয়ার্ডে পাঁচ জন মাত্র রোগী। আগের তুলনায় চিকিৎসকেরা কম আসছেন।’’ এর পরেই চারতলা থেকে নীচে জুনিয়র চিকিৎসকদের জটলার দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কবে মিটবে বলে মনে হচ্ছে?’’

এরই মধ্যে স্বজনদের হারিয়ে বিনা চিকিৎসার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন সঞ্জীব মণ্ডল, নীলিমা দাসেরা। এ দিনই মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা নীলিমার বাবা মন্টু বৈরাগী (৬৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নীলিমা বলেন, ‘‘বুধবার বিকেলে চিকিৎসকদের হাতে-পায়ে ধরে বাবাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। শুধু স্যালাইন, অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। চিকিৎসার অভাবেই বাবা চলে গেলেন।’’ সঞ্জীব মণ্ডলের মা শিখা মণ্ডল (৭০) সার্জারি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে তাঁরও অসন্তোষ রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোনও অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। বহু রোগীর অস্ত্রোপচারের দিন বাতিল হয়েছে। দমদমের বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার মাকে ডায়ালিসিসের জন্য নিয়ে আসি। কিন্তু ফেরত পাঠিয়ে দিল। মায়ের অবস্থা খুব খারাপ।’’

পরিষেবার হাল ফেরাতে এ দিন সকালে আর জি করের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল। বনগাঁর গোপালনগরের বাসিন্দা, বৃদ্ধ সুকুর আলি মণ্ডলকে জরুরি বিভাগের বাইরে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকতে দেখে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। কর্মবিরতির মধ্যেই এ দিন আর জি করে জরুরি অস্ত্রোপচারও হয়েছে বলে খবর।

রোগীশূন্য ওয়ার্ডের এই ছবি দেখা গেল আন্দোলনের উৎসস্থলেও। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের বিভিন্ন ঘরে এ দিন রোগীদের দেখা মেলেনি। কার্ডিয়োলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন, ক্যানিংয়ের আসরাফ সর্দার বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। পরিষেবার হাল দেখে আমিই বললাম, এখন অস্ত্রোপচার করতে হবে না।’’ আর জি করের মতো নীলরতনেও এ দিন এক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁর পরিজনেরা। বসিরহাটের বাসিন্দা রঞ্জু বিশ্বাসের মা সুলতা বিশ্বাসের খাদ্যনালীতে ক্যানসার ছিল। নীলরতনে সুলতাদেবীর অস্ত্রোপচারও হয়। পরে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত ৮ জুন তাঁকে ফের সেখানে ভর্তি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় মায়ের কোনও চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ছেলে।

ঘটনাচক্রে, রোগীর পরিজনদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দ্বিমত পোষণ করেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বক্তব্য, এর দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor's Strike NRS Hospital R G Kar Hosptal Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy