Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

প্রতি ইঞ্চির খতিয়ান ছেড়ে আর্জি নমনীয়তার

আন্দোলনরত ডাক্তারদের একাংশের চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসার অভাবে রোগী-মৃত্যু ঘটছে। পরিষেবা অমিল বলে বড় হাসপাতালের কিছু ওয়ার্ডও কার্যত খাঁ খাঁ করছে। ডাক্তার বনাম প্রশাসনের দড়ি টানাটানির স্নায়ুযুদ্ধটা এখন কেউই অস্বীকার করছেন না।

আন্দোলনরত ডাক্তারদের একাংশ।—ছবি এএফপি।

আন্দোলনরত ডাক্তারদের একাংশ।—ছবি এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

কেউ আঙুল তুলছেন প্রশাসনের ‘হঠকারিতা’র দিকে। কেউ বলছেন, ডাক্তারদের এ বার ‘নমনীয়’ হতে হবে। কিন্তু এনআরএস-কাণ্ডের জেরে স্বাস্থ্যে অচলাবস্থা কাটেনি ছ’দিনেও।

আন্দোলনরত ডাক্তারদের একাংশের চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসার অভাবে রোগী-মৃত্যু ঘটছে। পরিষেবা অমিল বলে বড় হাসপাতালের কিছু ওয়ার্ডও কার্যত খাঁ খাঁ করছে। ডাক্তার বনাম প্রশাসনের দড়ি টানাটানির স্নায়ুযুদ্ধটা এখন কেউই অস্বীকার করছেন না। কিছু মানুষের চিকিৎসা না-পাওয়া বা মৃত্যু যেন এই সংঘাতের ‘কোল্যাটেরাল ড্যামেজ’! চিকিৎসক-অচিকিৎসক মিলিয়ে বৃহত্তর সমাজও মেনে নিচ্ছে, মানুষের ভাল তথা উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর জন্য আন্দোলনে শামিল হলেও তা অনেকাংশে মানুষের দুর্ভোগের কারণই হয়ে ওঠে।

আইনজীবীদের সাম্প্রতিক ধর্মঘটেও নিম্ন আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্টে দুর্ভোগ চরমে উঠেছিল বিচারপ্রার্থীদের। তখন আইনজীবীরাও পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ করে নিরাপত্তার দাবি তুলেছিলেন। রাজনীতির লোকেরাও যে নিয়মিত মিটিং-মিছিল-অবরোধে নাগরিক ভোগান্তির কারণ ঘটান, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই।

প্রবীণ চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বা হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকারের মনে পড়ছে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলের কথাও। ‘ইগো’ বা অহং ঠেলে সিদ্ধার্থবাবু রোটান্ডায় ডাক্তার-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। ডাক্তারেরাও ধারাবাহিক ভাবে রোগী-স্বার্থে মানবিকতা দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু এ বারের অচলাবস্থার পিছনে নাগাড়ে গোলমাল, প্রশাসনের ‘মমতাহীনতা’র অভিঘাতও কাজ করছে।

প্রবীণ চিকিৎসকেরাও মানছেন, লোকসভা ভোটের ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের রাজনৈতিক ‘দুর্বলতা’ চোখে পড়ায় প্রতিবাদী কণ্ঠ গলা ছাড়ার সাহস পেয়েছে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে হয়তো আরও বড় প্রতিবাদযোগ্য ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে। কিন্তু এখন সরকার কিছুটা বিপাকে পড়ায় আন্দোলনের মাত্রা এত তীব্র হচ্ছে।’’

একদা বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বাম আমলে হাসপাতালে কত গোলমাল হলেও এত দিন ধরে চলেনি। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীরই।’’ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বভাবতই ডাক্তারদের এই আন্দোলনের কার্যত সমালোচনা করছেন। বলছেন, ‘‘ছোট-বড় নানা আন্দোলনেই মানুষের ভোগান্তি হয়। কিন্তু খুব বেশি দিন ভুগতে হয়, এমন আন্দোলন আমরা করিনি।’’

যাঁরা এই আন্দোলনকে সংবেদনশীল চোখে দেখছেন, তাঁরাও মনে করেন, একটা পর্যায়ে থামার রাস্তাটা খোঁজা উচিত। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ডাক্তারদের ধর্মঘটের অধিকারও আইনপ্রদত্ত। এসমা প্রয়োগেও ডাক্তারদের বন্দুক ঠেকিয়ে কাজ করানো যায় না বলে জানাচ্ছেন জয়ন্তবাবু। তবে তিনিও বলছেন, আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়, তা এ বার বোঝার চেষ্টা করা উচিত।

এটা সাধারণ নাগরিকের আন্দোলন ভেবেই মিছিলে সংহতি জানিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তিনি হতাশ। বলছেন, ‘‘ডাক্তারেরা তাঁদের সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছেন। নৈতিক জয় তো তাঁদের হয়েইছে। এখন ইগো ভুলে সকলেরই শুভ পরিণতি খোঁজার সময়।’’ কুণালবাবুর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবার এই সঙ্কটে প্রশাসন বা প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সমাজেরও দায় আছে। কিন্তু এখন জুনিয়র ডাক্তারদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলব, প্রতিবাদ চলুক অন্য ভাবে। কিন্তু যুদ্ধটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেওয়ার আর দরকার নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy