আর জি করে ছেলের চিকিৎসা করাতে পেরেছেন আজমিরা বিবি। (ডানদিকে) চোখের আঘাত নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে যায় অনুভব। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শুক্রবার কলকাতার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও সেখানে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সকাল থেকে রাত, প্রতিদিনই যেখানে ভিড় উপচে পড়ে, এ দিন সেই জায়গাগুলিই প্রায় ফাঁকা। কোথাও জরুরি বিভাগে এসে কেউ চিকিৎসা পেয়েছেন। কোথাও আবার কাউকে ফিরে যেতে হয়েছে খালি হাতে। এমনকি, প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা মা-মেয়েও পরিষেবা না পেয়ে কী করবেন, তার কূলকিনারা খুঁজে পাননি।
কর্মবিরতি চললেও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পরিষেবা চালু রয়েছে বলে এ দিন বারবারই দাবি করছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। তবে সেখানে আসা সব রোগীই যে পরিষেবা পেয়েছেন, তা কিন্তু নয়। যেমন হাসনাবাদের বাসিন্দা, ১১ বছরের অনুভবের বাঁ চোখ গুলতির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ছেলেকে নিয়ে মা সুনীতা এসেছিলেন আর জি করে। তিনি বলেন, ‘‘বসিরহাট হাসপাতাল থেকে চোখে ব্যান্ডেজ করে এখানে পাঠাল। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে বলল, চোখের চিকিৎসক নেই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হল।’’ কিন্তু সেখানে গিয়েও বন্ধ দরজার সামনে থেকে ফিরতে হয়েছে মা-ছেলেকে।
শেষে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, চোখ ফেটে গিয়েছে। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করা দরকার। কিন্তু সেখানে সেই পরিকাঠামো নেই। শেষমেশ অন্য বেসরকারি হাসপাতালে ছুটেছেন সুনীতা।
ফুলবাগানের বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিলেও আর জি করে অবশ্য পরিষেবা পেয়েছে ভাঙড়ের কোচপুকুর গ্রামের ওবায়েদুল্লা মোল্লার এক মাস কুড়ি দিনের ছেলে। গত মঙ্গলবার আর জি কর থেকে ছুটি হয়েছিল ওই শিশুর। কিন্তু বাড়ি ফিরে পরের দিনই ফের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। ‘‘তখনই আর জি করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কেউ ভর্তি নিল না। তখন পার্ক সার্কাসের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু এত খরচ চালাতে না পেরে শুক্রবার সকালে বি সি রায় হাসপাতালে গেলে ওরাও ফিরিয়ে দিল। বলল, যেখানে জন্মেছে, সেখানে যাও,’’ দাবি ওবায়েদুল্লা ও তাঁর স্ত্রী আজমিরা বিবির। এ দিন আর জি করে জরুরি বিভাগে দেখানোর পরে ওই শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে।
চন্দননগরের বাসিন্দা, অন্তঃসত্ত্বা প্রতিমা বেরাকে অবশ্য এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের বাইরে থেকেই ফিরে যেতে হয়েছে। কারণ, ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢোকার রাস্তাতেই বসে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ আত্মীয়দের সঙ্গে প্রতিমা সেখানে এলে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। তাই কে হাসপাতাল চালাবেন, তা তাঁরা জানেন না।
এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অবশ্য আসতে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েক জন রোগীকে। মিলেছে চিকিৎসাও। যেমন, মেটিয়াবুরুজের জসমিরা বিবি হার্টের সমস্যা নিয়ে আসার পরে তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার মুন্সিরহাটের সাদিয়া বেগম পেটে যন্ত্রণা নিয়ে এলে তাঁকেও কিছু ক্ষণ ভর্তি রেখে স্থিতিশীল করে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দিন সকালে বাংলাদেশের বরিশাল থেকে মা মিনারা বেগমের সঙ্গে পিজি-তে এসেছিলেন তরুণী আফসানা আখতার সেতু। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রক্তের সংক্রমণ ও জ্বরে ভুগছেন ওই তরুণী। মিনারা বলেন, ‘‘সকালে হাসপাতালে আসার পরে চিকিৎসকেরা বললেন, বহির্বিভাগে দেখাতে হবে। কিন্তু সেটা কবে
খুলবে, তা কেউ বলতে পারলেন না। কোথায় যাব এখন?’’
মায়ের হাত ধরে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে আফসানা বললেন, ‘‘আমার বাবা নেই। আত্মীয়স্বজনও কেউ নেই। তাই মা-মেয়ে মিলে অনেক আশা নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। কিন্তু এ তো দেখছি, একেবারে অচেনা শহর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy