—ফাইল চিত্র।
রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও বিপদ কাটেনি। এই অবস্থায় সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্যে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিধি ১৫ জুলাই পর্যন্ত চালু থাকার কথা। সেই তারিখ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ বিধির মেয়াদ বাড়বে কি না, তা নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধছে। নবান্নের শীর্ষ মহলের খবর, এ ব্যাপারে শীঘ্রই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সরকার।
স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সব গতিবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার সময় এখনও আসেনি। নিয়ন্ত্রণের আগল একেবারে খুলে দিলে সংক্রমণের নিম্নমুখী রেখা আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, পড়শি রাজ্য ওড়িশা ও ত্রিপুরায় সংক্রমণের রেখচিত্র নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওই দুই রাজ্যে দল পাঠাতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। মহারাষ্ট্র্রের পরিস্থিতিও এখন অনুকূল নয়। আবার প্রতিবেশী বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ বিধির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকার এই সব দিক খতিয়ে দেখতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
গত পাঁচ দিনে রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা ওঠাপড়া করেছে। ৮ জুলাই সংখ্যাটা ছিল ৯৯৫। ৯ তারিখে সেটা কমে হয় ৯৯০। কিন্তু ১০ জুলাই ফের তা পৌঁছে যায় ৯৯৭-এ। ১১ এবং ১২ জুলাই সংখ্যাটা ছিল যথাক্রমে ৯২৪ এবং ৮৮৫। সোমবারের জেলা-ভিত্তিক হিসেব বলছে, উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০ জন এবং কলকাতায় ৬৫ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই সংখ্যা তুলনায় কিছুটা কম, ৩৯। কিন্তু হুগলি (৬৮), হাওড়া (৪৩), পূর্ব মেদিনীপুর (৭৫), বাঁকুড়া (৫১), নদিয়া (৪৬), জলপাইগুড়ি (৪৮), দার্জিলিং (৭৭), কোচবিহারে (৫৬) সংখ্যাটা তুলনায় বেশি। ২৪ ঘণ্টায় ১০ থেকে ৫০ জন আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে আলিপুরদুয়ার (২৪), কালিম্পং (১৫), জলপাইগুড়ি (৪৮), মালদহ (১৩), নদিয়া (৪৬), বীরভূম (১১), ঝাড়গ্রাম (৩৭), পশ্চিম মেদিনীপুর (৪৬), পূর্ব বর্ধমান (২৯), পশ্চিম বর্ধমান (২৫)। জেলার অনেক প্রশাসনিক কর্তার ধারণা, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে সংক্রমণের গ্রাফ স্বস্তিজনক জায়গায় পুরোপুরি পৌঁছয়নি বলেই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ‘ঝুঁকি’ না-ও নিতে পারে সরকার।
গত ২৮ জুনের পর্যালোচনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করেছিল রাজ্য। তাতে আর্থিক গতিবিধি কিছুটা হলেও চালু হয়েছে। গণপরিবহণকে নিয়ন্ত্রণের শিথিল-তালিকায় রাখা হলেও লোকাল ট্রেন চলাচলে অনুমতি দেয়নি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী তখন জানিয়েছিলেন, নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পরে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। বস্তুত, গত ২৮ জুন রাজ্যে এক দিনে ১৭৬১ জন সংক্রমিত হন। সেই দিক থেকে এখনকার পরিস্থিতি তুলনায় অনেকটা ভাল। ফলে এ বার ট্রেন চলাচলে অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা-ও রয়েছে জল্পনার মধ্যে। কিন্তু অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকের ব্যাখ্যা, এখনই লোকাল ট্রেন চালু করলে লোকসমাগম এক ধাক্কায় অনেক বেড়ে যাবে। তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ট্রেন চলাচল নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে বরং পরিস্থিতির গভীর পর্যালোচনা করতে চাইছে রাজ্য। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশও বলছেন, “মনে রাখতে হবে, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই করোনা বিধি উপেক্ষা করলে যে-কোনও সময়ে বিপদ ফের আসতেই পারে।”
জেলা প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, গত বার কিছু নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হলেও স্থানীয় স্তরে ‘কন্টেনমেন্ট’ বা ‘মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট’ বিধি চালু রয়েছে। আপাতত তা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা কম। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার আগে একাধিক বার ভাববে নবান্নের শীর্ষ মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy