প্রায় ৬৪ ঘণ্টার নাটকীয়তার পর সোমবার ভোরে গ্রেফতার হন বিধায়ক বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। নিজস্ব চিত্র
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যের পর এ বার জীবনকৃষ্ণ সাহা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও এক তৃণমূলের বিধায়ক গ্রেফতার হলেন। এ ছাড়া আরও অনেককেই গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, অপসারিত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদে যে পাঁচ জন এজেন্টের হদিস মেলে, তাঁদের অন্যতম মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানা এলাকার বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ। তাঁকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই দুর্নীতিকাণ্ডে ব়ড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের জড়িত থাকার অভিযোগ ঘিরে চর্চা শুরু হয়। সেই সূত্রেই শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দু’টি সাদা গাড়িতে ছয় সিবিআই আধিকারিক এবং আট জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দল বিধায়কের আন্দির বাড়িতে হানা দেয়। তার পর থেকে চলে ম্যারাথন তল্লাশি এবং বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ। প্রায় ৬৪ ঘণ্টার নাটকীয়তার পর সোমবার ভোরে গ্রেফতার হন বিধায়ক। এই গোটা সময় জুড়ে যা যা হয়েছে, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে...
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, বেলা ১২:৩০— নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে মুর্শিদাবাদের আন্দিতে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল। শুরু তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, দুপুর ১:৩০— মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে জীবনকৃষ্ণের শ্বশুর সেন্টু সাহার বাড়িতেও তল্লাশি সিবিআইয়ের।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, দুপুর ২:০০— নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক কানাই মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছল সিবিআই। তিনি বাড়িতে না থাকায় তল্লাশি তেমন করা হয়নি।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, বিকেল ৩:০০— তল্লাশি চলাকালীন জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল দু’টি ডায়েরি, বেশ কিছু নথি, ল্যাপটপের একটি হার্ডডিস্ক এবং একটি প্রিন্টার।
> ১৪ এপ্রিল শুক্রবার, বিকেল ৪:৩০— জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন অসুস্থতার কথা বলে বাড়ির পিছনে শৌচালয় যাওয়ার নাম করে ছাদে গিয়ে দু’টি মোবাইল বাড়ির উত্তর দিকের পুকুরে ফেলে দেন বিধায়ক। অন্তত তেমনটাই দাবি সিবিআই সূত্রে।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, রাত ৯:৩০— সার্চলাইট নিয়ে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে মোবাইলের খোঁজে তল্লাশি শুরু করলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, রাত ১০:৩০— বিধায়কের মোবাইলের খোঁজে আনা হল মেটাল ডিরেক্টর। শুরু হল মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, রাত ১১:০০— বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইল দু’টি পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা জানতে পারলেন তদন্তকারীরা।
> ১৪ এপ্রিল, শুক্রবার, রাত ১১:৩০— শুরু হল পুকুরের জল ছেঁচে ফেলার কাজ। আনা হলো একটি পাম্প মেশিন।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, সকাল ১০:৩০— পুকুর থেকে মোবাইল পাওয়া গেলে, তা থেকে যাতে তৎক্ষণাৎ তথ্য সংরক্ষণ করা যায়, তার জন্য আনা হল এক বিশেষজ্ঞকে।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, সকাল ১১:০০— বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদের পর নতুন তথ্য সিবিআইয়ের হাতে। শুধু মোবাইল নয়, একটি পেনড্রাইভ ও একটি হার্ডডিস্ক পুকুরে ফেলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, বেলা ১১:৩০— মোবাইল ও অন্যান্য ডিজিটাল নথির খোঁজে শুরু চিরুনিতল্লাশি। আনা হল আরও কয়েকটি মেটাল ডিটেক্টর। জল ছেঁচার কাজে লাগানো হল আরও দু’টি পাম্প। বিধায়কের স্ত্রীর সিঁদুরের কৌটো থেকে উদ্ধার হল মেমরি কার্ড।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, দুপুর ১২:০০— জীবনকৃষ্ণের বাড়ির পিছনে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উদ্ধার ছ’বস্তা নথিপত্র। ৩৪০০-রও বেশি নিয়োগ প্রার্থীর রোল নম্বর অ্যাডমিট কার্ড-সহ তথ্য উদ্ধার।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, দুপুর ১:০০— জীবনকৃষ্ণের কম্পিউটার, নোটপ্যাড এবং ল্যাপটপ পরীক্ষা করে দেখার কাজ শুরু।
>১৫ এপ্রিল, শনিবার, বিকেল ৩:৩০— মোবাইলটি কোথায় ফেলা হয়েছে, বাড়ির পাঁচিলে উঠে পুনর্নিমাণের চেষ্টা করে সিবিআই।
> ১৫ এপ্রিল, শনিবার, রাত ১২:০০— জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সিবিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, ভোর ৩:৩০— স্থানীয় পাম্প অপারেটরদের সহযোগিতায় শুরু জল ছাঁচার কাজ চলছে।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, সকাল ৬:৩০— পুকুরের জল তুলে ফেলা শেষ। বিধায়কের মোবাইলের খোঁজে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে পুকুরে নেমে তল্লাশি শুরু।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, সকাল ৭:৩৫— তল্লাশি চলাকালীন টানা ৩২ ঘন্টার অপারেশন শেষে পুকুর থেকে উদ্ধার হল একটি মোবাইল।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, সকাল ৮:০০— মোবাইল ফোনটি বিধায়ককে দিয়ে শনাক্তকরণ করা হয়।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, সকাল ৮:১০— দ্বিতীয় ফোনটির খোঁজে বিধায়ককের বাড়ির ছাদ ও পাঁচিল থেকে মোবাইল ছুড়ে ফেলার ঘটনার আবার পুনর্নির্মাণ।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, বেলা ১২:০০— বিধায়কের ছুড়ে ফেলা মোবাইল উদ্ধারের তদারকিতে উপস্থিত তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, দুপুর ১:০০— বিতর্ক শুরু হতেই মাঝপথে কাজ বন্ধ রেখে ফিরে গেলেন তৃণমূল সভাপতি।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার বিকেল ৩:০০— বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ির দরজায় হাজির স্থানীয় ৪ তৃণমূল নেতা।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, বিকেল ৪:০০— মাটি কাটার যন্ত্র জেসিবি এবং ট্র্যাক্টর এনে আবার শুরু তল্লাশি।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, সন্ধ্যা ৬:৪০— ফোনের মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি। জানা গেল উদ্ধার হওয়া ফোন বিধায়কের স্ত্রীর! এমনটাই দাবি সিবিআই সূত্রের।
> ১৬ এপ্রিল, রবিবার, রাত ১১:০০— বাড়ানো হল বিধায়কের বাড়ির পুলিশি নিরাপত্তা।
> ১৭ এপ্রিল, রবিবার রাত ২:৩০— জীবনকৃষ্ণের বাড়ি পৌঁছল সিবিআইয়ের বিশেষ দল।
> ১৭ এপ্রিল, সোমবার, ভোর ৪:৩০— টানা ৬৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।
> ১৭ এপ্রিল, সোমবার, ভোর ৪:৫৫— অ্যারেস্ট মেমোতে সই করানো হল বিধায়কের স্ত্রী টগরি সাহাকে দিয়ে।
> ১৭ এপ্রিল, সোমবার, ভোর ৫:২১— বিধায়ককে নিয়ে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিল সিবিআইয়ের পাঁচটি গাড়ির কনভয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy