Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bear Census

ডুয়ার্সের জনবসতিতে ভালুকের হানা বাড়ছে! কারণ খুঁজতে রাজ্যে প্রথম ভালুক-গণনা ডিসেম্বরে

শীতের শুরুতেই বসতি এলাকায় ভালুকের হামলার আতঙ্কে তাদের উপর পাল্টা হামলার ঘটনা দেখা গিয়েছে। ফলে তাদের অস্তিত্বও সঙ্কটে পড়েছে। অস্তিত্বরক্ষায় ভালুকসুমারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর।

ভালুকের হানায় ডুয়ার্সের স্থানীয়দের মৃত্যু হয়েছে। পাল্টা জনরোষে মারা পড়েছে ভালুকও।

ভালুকের হানায় ডুয়ার্সের স্থানীয়দের মৃত্যু হয়েছে। পাল্টা জনরোষে মারা পড়েছে ভালুকও। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডুয়ার্স শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৫
Share: Save:

শীত পড়তেই বরাবরের মতো ভালুকের আনাগোনা শুরু হয়েছে ডুয়ার্সের চা বাগানের জনবসতি এলাকায়। তাদের হানায় স্থানীয়দের মৃত্যুও হয়েছে। পাল্টা জনরোষে মারা পড়েছে ভালুকও। চা বাগানের বসতিতে ভালুক চলে আসার কারণ খুঁজতে এ বার ভালুকসুমারির সিদ্ধান্ত নিল বন দফতর। ডিসেম্বর থেকেই রাজ্যে প্রথম ভালুক-গণনার কাজ শুরু হবে বলে বনদফতর সূত্রে খবর। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পাহাড়ের পরিবেশপ্রেমীরা।

বন দফতর জানিয়েছে, শীতের মরসুম শুরু হতেই পাহাড়ের বসতি এলাকায় ভালুকের হামলার আতঙ্কে তাদের উপর পাল্টা আক্রমণের ঘটনা দেখা গিয়েছে। ফলে তাদের অস্তিত্বও সঙ্কটে পড়েছে। গত বছর প্রথম ভালুক দেখা গিয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলার মেটেলি ব্লকের ইংডং চা বাগান এলাকায়। এর পর ডুয়ার্সের মালবাজার, মাদারিহাট, ধূপগুড়ি, নাথুয়া, বক্সা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ভালুকের হানায় এক জনের মৃত্যুও হয়েছিল। পাল্টা হামলার মুখে প়ড়ে মারা যায় একটি ভালুকও। পাশাপাশি, ভালুকের আক্রমণে জনাকয়েক স্থানীয় বাসিন্দা আহতও হয়েছিলেন। বন দফতরের পাতা ফাঁদে ধূপগুড়িতে ভালুক ধরাও পড়েছে। ডুয়ার্সের বনাঞ্চল ও বন সংলগ্ন এলাকার পাশাপাশি ভালুকের হামলার আতঙ্কে ছিলেন জলপাইগুড়ি এবং মালবাজার শহরের বাসিন্দারাও। মাল শহরের একটি অনুষ্ঠান ভবনেও ভালুক ঢুকে পড়েছিল।

চলতি বছরেও দিন কয়েক আগেই মেটেলি, মালবাজার, মাদারিহাট-সহ বেশ কয়েকটি চা বাগানে ভালুকের দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। এমনকি, গত পনেরো দিনে ৬টি ভালুককে উদ্ধার করেছে বন দফতর। এর মধ্যে আটিয়াবাড়ি চা বাগান থেকে ১টি, মেন্দাবাড়ি বনবস্তি থেকে ২টি এবং লতাবাড়ি থেকে ৩টি ভালুক উদ্ধার করা হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। উদ্ধার করা ২টি ভালুককে বেঙ্গল সাফারিতে রাখা হয়েছে। বাকি ৪টিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বন দফতর। অন্য দিকে, ডুয়ার্সের মালবাজারে এখনও বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে একটি ভালুক।

ভালুকের অস্তিত্বরক্ষায় তাদের গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। রবিবার মূর্তি টেন্ট ক্যাম্পে ভালুক গণনা সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করে তারা। আরও কয়েকটি প্রশিক্ষণ শিবিরের পর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই গণনা শুরু হবে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।

গোটা ডুয়ার্স জুড়েই ‘বিয়ার কোরাল’ পদ্ধতিতে ভালুক গণনার কাজ করবে বন দফতর। এই পদ্ধতিতে যে সমস্ত জায়গায় ভালুক দেখা গিয়েছে, সেই জায়গাগুলিতে খাঁচা পেতে তাতে ভালুকের পছন্দসই খাবার দেওয়া হয়। যাতে খাবার খেতে এলেই ধরা পড়ে ভালুক। বন দফতরের দাবি, এ ভাবেই এলাকায় ভালুকের সংখ্যা জানা যাবে। সংখ্যা নির্ণয়ের পর তাদের অস্তিত্বরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও বন দফতর সূত্রে খবর। যদিও রবিবার এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি বনাধিকারিকেরা।

বন দফতরের এই সিদ্ধান্তে ভালুকের হানা কমবে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। পশুপ্রেমী সংগঠনের এক কর্মকর্তা নফসর আলি বলেন, ‘‘শীত বাড়তেই মেটেলি, কুমলাই গুডহক, ধূপগুড়ি-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় ভালুকের উপদ্রব বাড়ছে। ভালুকের গণনা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বন দফতরকে ধন্যবাদ জানাব। এতে বোঝা যাবে, পাহাড় থেকে কত ভালুক আমাদের এলাকায় নেমে আসছে। ভালুকরা কোন দিকে রয়েছে, তা-ও বোঝা যাবে এতে। এ নিয়ে একটি ট্রেনিংয়েরও আয়োজন করেছে বন দফতর।’’ সেই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, ‘‘যে সব চা বাগানে ভালুকের আনাগোনা রয়েছে, সেখানে বন দফতরের তরফে সচেতনতা শিবির করা হলে এলাকার লোকজনের সঙ্গে ভালুকের সংঘর্ষ হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bear Census Dooars Forest Departemnt Tea Garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy