Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অবহেলায় থমকে বরুণ হত্যা মামলা

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বরুণের মৃত্যু দিনে ফের একবার দাবি তোলা হল ঘটনার সিবিআই তদন্তের।

 বরুণের ছবিতে ফুল দিচ্ছেন দিদি প্রমিলা। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

বরুণের ছবিতে ফুল দিচ্ছেন দিদি প্রমিলা। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০১:০৯
Share: Save:

সাত বছর পার। এখনও সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের খুনিদের সাজা হল না। বনগাঁ আদালতে বিচারপর্ব কার্যত থমকে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বরুণের মৃত্যু দিনে ফের একবার দাবি তোলা হল ঘটনার সিবিআই তদন্তের। কেন্দ্র সরকার যাতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করে, সেই দাবি জানান বরুণের দিদি প্রমিলা রায়।

বনগাঁর সদ্য নির্বাচিত সাংসদ বিজেপির শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, বরুণ খুনের দোষীরা আজও সাজা পেল না। সোমবার আমি বিষয়টি সংসদে তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি করব।’’ এই পরিস্থিতিতে সুটিয়ার মানুষ আশায় বুক বাঁধছেন, এগোবে প্রতিবাদী যুবক বরুণ খুনের তদন্ত।

এ দিন সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের তরফে বরুণের বাড়ির কাছে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বরুণের মূর্তিতে ফুল-মালা দেওয়া হয়। বরুণের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা, স্মৃতিচারণ করেন অনেকে। সেখানেই নতুন করে ওঠে সিবিআই তদন্তের দাবি। এ দিন সকালে বনগাঁ শহরের ত্রিকোণ পার্ক এলাকা থেকে মর্যাদা সুরক্ষা আন্দোলনকারীদের তরফে প্রায় একশো জনের একটি সাইকেল মিছিল বেরোয় বরুণ-স্মরণে। মিছিল শেষ হয় সুটিয়ায়। এ দিন অসুস্থ অবস্থায় বনগাঁয় সাইকেল মিছিল সূচনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বরুণের বন্ধু তথা শিক্ষক পার্থসারথি দে। তিনি বলেন, ‘‘দেখে খুব ভাল লাগছে, বহু দিন পরে বরুণের জন্য মানুষ পথে নেমেছেন। তাঁকে স্মরণ করছেন। বরুণ বেঁচে থাকবেন মানুষের মধ্যেই।’’

প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননী গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘বরুণকে যারা খুন করেছিল, তারা গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু খুনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও অধরা। আমরা তাই বরুণ খুনের ঘটনার ফের সিবিআই তদন্তের দাবি করছি।’’

এর আগেও সিবিআই তদন্তের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন এলাকার মানুষ ও বরুণের পরিবার। যদিও উচ্চ আদালত সিবিআই তদন্তের দাবি তখন নাকচ করে দিয়েছিল।

বরুণ খুনের মামলাটি চলছে বনগাঁ মহকুমা আদালতে। গত এক বছরে মামলার অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। খুনিরা সাজা না পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ সুটিয়াবাসী। স্মরণসভায় এসেছিলেন বরুণের কাকা অতুলচন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অবহেলায় মামলা এখন কার্যত থমকে। আমরা চাই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করুক সরকার।’’

বরুণের মৃত্যুর পরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই লড়াই করে আসছেন তাঁর দিদি প্রমিলা রায়। বরুণ জবা ফুল ভালবাসতেন বলে রোজ ভাইয়ের ছবির কাছে জবা ফুল দেন। এ দিন বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘তৃণমূল সরকার থাকাকালীন ভাইয়ের খুনের বিচার পাব না। কারণ, এই সরকারের মন্ত্রীই খুনের পরিকল্পনায় জড়িত। সিবিআই তদন্তের দাবি হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। আমরা ফের চেষ্টা করব।’’ কেন্দ্র সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করুক, চান প্রমিলা।

তৃণমূলের তরফে বরাবরই এই খুনের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দলের বনগাঁ লোকসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরাও চাই বরুণ খুনের দোষীরা সাজা পাক।’’

বিচারপর্ব চলা নিয়ে বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘মামলাটি ফাস্ট ট্র্যাক-১ আদালতে চলছে। সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও স্থায়ী বিচারক নেই। তা ছাড়া, সাক্ষীরাও ঠিকমতো আসছেন না বলে বিচারপর্ব ধীর গতিতে চলছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE