Advertisement
০১ জানুয়ারি ২০২৫

যানজট মেটাতে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিন

আসানসোলের একটি হোটেলে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শহরবাসীর নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় উঠল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত বণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।বহু বছর এই এলাকার শিল্পতালুকগুলি অবহেলিত ছিল। আলো, নিকাশি, রাস্তা, জলের ব্যবস্থা তলানিতে ঠেকেছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কন্যাপুর শিল্পতালুকের পরিকাঠামো উন্নয়নে ২৯ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

এলাকার শিল্পতালুকগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে কী পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের পুরসভার? আসানসোলে একটি শিল্প-পার্ক তৈরি হলে উপকার হয়।

সুব্রত দত্ত , পুলিশ লাইন

মেয়র: বহু বছর এই এলাকার শিল্পতালুকগুলি অবহেলিত ছিল। আলো, নিকাশি, রাস্তা, জলের ব্যবস্থা তলানিতে ঠেকেছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কন্যাপুর শিল্পতালুকের পরিকাঠামো উন্নয়নে ২৯ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। জামুড়িয়া শিল্পতালুকের উন্নয়নও শুরু হয়েছে। আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আর একটু সময় দরকার। শিল্প-পার্ক গড়ার কথা আপনারা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। তিনি চেষ্টা করছেন। আপনারাও এই অঞ্চলে আরও শিল্প-বাণিজ্য প্রসারের কথা ভাবুন।

শহরে ভাল খেলার মাঠ নেই। একই মাঠে ফুটবল-ক্রিকেট হয়। এ ভাবে কোনওটাই ভাল করে খেলা যায় না। প্রতিভার বিকাশ হচ্ছে না। স্পোর্টস অ্যাকাডেমির ভাবনা আছে কি?

বিশ্বজিৎ দাস, হিরাপুর

মেয়র: ভাল প্রস্তাব। আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছি। মেনে নিচ্ছি, আগে এ নিয়ে ভাবিনি। ঠিক করেছি, খেলাধুলো ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত মানুষদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ব। তাঁরা এই ধরনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বুঝে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন। আমার কাজ হবে সে জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা। তাতে কোনও কার্পণ্য হবে না, কথা দিলাম। মাঠগুলির অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে কিছু পদক্ষেপ করব।

অপরিকল্পিত সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থার জন্য নাগরিকদের নানা অসুখ হচ্ছে। পুরসভার কি নিজস্ব স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরির কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

অরুণাভ সেনগুপ্ত , কল্যাণপুর

মেয়র: ঠিকই বলছেন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আরও উন্নতি করতে হবে। সেই পদক্ষেপ শুরুও হয়েছে। এখানে জেলা হাসপাতাল হয়েছে। পুরসভারও নিজস্ব নানা পরিকল্পনা আছে। তবে সে জন্য আমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেই কাজ আমরা শুরু করেছি। ‘ন্যাশনাল আরবান হেলথ মিশন’-এর অন্তর্গত ‘রিপ্রোডাক্টিভ চাইল্ড হেলথ কেয়ার’ (আরসিএইচ) কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন শুরু হয়েছ। এ ছাড়া, পুরসভার কয়েকশো স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এলাকা ঘুরে টীকাকরণ থেকে প্রসূতিদের নানা পরামর্শ দেন তাঁরা। কোথাও সমস্যা হলে আমাদের স্বাস্থ্যের দল গিয়ে ব্যবস্থা নেয়। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করেছি।

সকালে এসবি গড়াই রোডে খুব যানজট হয়। তার মূল কারণ—রাস্তা দখল করে নানা নির্মাণ। এক পরিস্থিতি আসানসোল বাজারে। সন্ধ্যায় আবার গড়াই রোডে মোটরবাইকের তাণ্ডব। এ সব বন্ধে কোনও উদ্যোগ হবে কি?

বলাকা গঙ্গোপাধ্যায়, মহিশীলা

মেয়র: সব বুঝেও আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। প্রকাশ্যে সে সব কথা না বলাই ভাল। তবে কাজ শুরু করেছি। ওই যে একটা কথা আছে না, ধীরে কিন্তু স্থায়ী। আমি সেটায় বিশ্বাসী। এসবি গড়াই রোডের যানজট আমাদেরও ভোগাচ্ছে। এই সমস্যা মেটাতে কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আসানসোল বাজারের সমস্যা সমাধানেও হাত দিয়েছি। পার্কিং সমস্যা মিটেছে। পাইকারি বাজার সরাতে পারলেই নারকীয় অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। ওই বাজার জাতীয় সড়কের পাশে নিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিক কাজ শুরুও হয়েছে। মোটরবাইক-বাহিনীর তাণ্ডব এখন একটা সামাজিক ব্যাধি। তা রুখতে আইনি পথের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও আনতে হবে। শহর যানজটমুক্ত করতে একটি চার তলা পার্কিং প্লাজা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আসানসোলে সাংস্কৃতিক কাজকর্ম হয়, কিন্তু বৈচিত্রের অভাব। পুরসভার উদ্যোগে বছরভর কর্মসূচির কোনও উদ্যোগ হতে পারে কি? শহরে আরও কিছু ছোট প্রেক্ষাগৃহ ও একটি আর্ট গ্যালারি তৈরির আর্জি জানাচ্ছি।

মলয় সরকার, আপকার গার্ডেন

মেয়র: এ বিষয়ে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে বলে আমি মানি। তবে আমরা সম্প্রতি বাংলা অ্যাকাডেমি বানিয়েছি। হিন্দি অ্যাকাডেমি আগেই রয়েছে। সামনে বিধানসভা ভোট। ঠিক করেছি, ভোটের পাট মিটে গেলে সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের একটি ছাতার তলায় আনব। তাঁরা ঠিক করবেন, সারা বছর কী ধরনের কর্মসূচি হবে। পুরসভা এলাকায় একাধিক বড় প্রেক্ষাগৃহ আছে। ছোট সভা-সমিতির জন্য প্রেক্ষাগৃহের কথা আমরা ভাবছি। শহরে একটা আর্ট গ্যালারির দাবি উঠেছে অনেক দিন আগেই। এ বিষয়ে সত্যিই কিছু ভেবে দেখিনি। তবে আপনাদের আবেদন নিয়ে ভাবব।

এসবি গড়াই রোডের যানজটে জেরবার শহরবাসী। —শৈলেন সরকার

আমাদের এলাকার একটি জ্বলন্ত সমস্যা ধস। শহরবাসী যে কোনও দিন ভূগর্ভে তলিয়ে যেতে পারেন। অবাধে ভূগর্ভের জল তোলায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করবেন?

নিবেদিতা আচার্য, ইভনিং লজ

মেয়র: ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের মনে আবেগ ও বাস্তবের দ্বন্দ্ব চলছে। তাঁরা বুঝেছেন, যে কোনও দিন তলিয়ে যেতে পারেন। আবার, যেখানে বহু বছর বাস করছেন সেখান থেকে উঠে যেতে মন মানছে না। তাঁদের বোঝানোর কাজ শুরু হয়েছে। পুনর্বাসনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এডিডিএ। ভূগর্ভ থেকে জল তুলতে হলে অনুমতি নেওয়ার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আমরা সকলেই এই শহরের নাগরিক। শহরের স্বার্থে বাসিন্দাদের অনিয়ম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আপনাদের ‘গ্রিন আসানসোল, ক্লিন আসানসোল’ স্লোগান, প্লাস্টিক বন্ধের উদ্যোগ ভাল লাগছে। তবে অবাধে গাছ কাটা হচ্ছে। সাফাই, নিকাশির সমস্যায় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। এ নিয়ে কিছু ভাবুন।

অজিত সরকার, পশ্চিম আপকার গার্ডেন

মেয়র: আমরা ওই স্লোগানের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আসানসোল শহরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিয়েছি। প্লাস্টিক বন্ধের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব থলি বিতরণ করা হচ্ছে। পরিবেশ নিয়ে আলোচনাসভাও হচ্ছে। সাফাই ও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও একাধিক পরিকল্পনা হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযান হবে।

আসানসোলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামোয় নানা অভাব রয়েছে। পুর-এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থারও উন্নয়ন দরকার। এ ব্যাপারে কী ভাবছেন?

অরুণাভ দাশগুপ্ত, লোয়ার আপকার গার্ডেন

মেয়র: এই বিষয়টি সরাসরি পুর কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। যত দূর জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া-সহ নানা কাজ চলছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথা বলব। শহরে শিক্ষাবিদ যাঁরা রয়েছেন তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করতে পারেন। আমি সাহায্য করতে পারি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy