ভেঙে পড়েছে গ্যালারি। বড় ঘাসে ভরেছে মাঠ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ থেকে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক জনসভা হয়েছে এ ময়দানে। লোকসভা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংগঠনও নানা সভা করেছে। অথচ স্টেডিয়ামের হাল না ফেরায় কয়েক বছর ধরে ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে খেলাধূলা।
ক্রীড়া সংগঠনের কর্তাদের দাবি, কাটোয়া স্টেডিয়াম মাঠ এবং গ্যালারির যা দশা তাতে কোনও প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। যে কোনও মুহুর্তে গ্যালারি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আহত হতে পারেন খেলোয়াড়েরাও। কাটোয়ার খেলাপাগল মানুষজনেরও আক্ষেপ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্টেডিয়ামের দশা দেখে সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপর ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও কাজে হাত পড়েনি।
১৯৮২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এই স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বেশ কয়েক একর জমির উপর তৈরি স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন হয় ১৯৮৮ সালের ২৮ মে। তবে উদ্বোধনের বছর খানেক পর থেকেই স্টেডিয়ামের একমাত্র গ্যালারিটি ভেঙে পড়তে থাকে। বর্তমানে স্টেডিয়ামের গায়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে, পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে, দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে আগাছা। যে কোনও সময় গ্যালারি ভেঙে পড়তে পারে বলেও ক্রীড়াপ্রেমীদের আশঙ্কা। এই কারণেই লোকসভা ভোটের আগে কাটোয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় গ্যালারিতে যাতে কেউ না উঠতে পারে সে দিকে নজর রাখতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা ছিল।
কাটোয়ার ক্রীড়ামোদীদের অভিযোগ, বাম আমলে তৈরি এই স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণ নয়। ফলে কয়েকশো দর্শক বসার একটিই গ্যালারি উদ্বোধনের বছর ঘোরার আগেই বেহাল হয়ে পড়ে। তারপর বছরের পর বছর কেটে গেলেও স্টেডিয়াম সংস্কারের দিকে নজর পড়েনি কারও। আরও অভিযোগ, স্টেডিয়ামের পাঁচিল থেকে প্রধান ফটক সবই ভাঙা। নিকাশি ব্যবস্থাও এতটাই খারাপ যে বছরের বেশিরভাগ সময় মাঠটি জলের তলায় থাকে। ফলে একসময় নিয়মিত যাঁরা এ মাঠে খেলাধুলা করতেন কয়েক বছর ধরে তাও বন্ধ। ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবি, স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বহুবার চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। পরে লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্টেডিয়ামের অবস্থা দেখে সংস্কারের আশ্বাস দেওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন খেলাপাগলেরা। জেলা পুলিশও স্টেডিয়ামের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। বেশ কয়েকবার স্টেডিয়ামের বেহাল দশা দেখে গিয়েছেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলও। তবে ছ’মাস কেটে গেলেও সংস্কারের কাজে হাত না পড়ায় সেই আশাও নিভু নিভু কাটোয়াবাসীর।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেডিয়াম তৈরির পরে জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি দেখভালের কাজ করত। পরে জেলাশাসকের অনুমতিতে কাটোয়ার মহকুমাশাসকই স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি দিতেন। গ্যালারির তলায় দুটি ঘরে মহকুমা পুলিশের ইমার্জেন্সি ফোর্সও (ইএফ) রয়েছে। তাঁদের দাবি, প্রতি বর্ষাতেই ছাদ দিয়ে জল পড়ে আর কাটোয়া পুরসভা অস্থায়ী ভাবে তা সংস্কার করে দেয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে সুভাষ চক্রবর্তী ক্রীড়ামন্ত্রী থাকাকালীন স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। পরে বর্তমান সরকারের কাছেও সংস্কারের জন্য ১৩ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাব জমা দেয় পুরসভা। তবে রাজ্য সরকার ওই প্রকল্প ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সরকারের যুক্তি, ওই স্টেডিয়ামটি সরাসরি রাজ্য সরকারের নয়। ফলে স্টেডিয়াম সংস্কার করার জন্য কোনও অর্থ অনুমোদন করতে পারবে না তারা। তবে স্টেডিয়ামটি তাদের হাতে তুলে দিলে সংস্কার করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। স্টেডিয়াম কমিটির অন্যতম সদস্য তথা কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, কমিটির সদস্যেরা একমত হয়ে স্টেডিয়ামটি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরে কি হয়েছে কেউ জানে না।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “সাংসদ উন্নয়ন তহবিল ও সরকারের আর্থিক সাহায্যে স্টেডিয়ামটি সংস্কারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।” কয়েক মাস আগে স্টেডিয়ামের গ্যালারি, মাঠ সংস্কার ও দক্ষিণ দিকে খোলা মঞ্চ তৈরি নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে বলেও মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে সেই টাকার অনুমোদন এখনও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy