Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পুকুর দখল করে কোথাও মাছচাষ, কোথাও নির্মাণ

কোথাও পুকুর বুজিয়ে জমি দখল। কোথাও জবরদখল করে মাছ চাষ। কার্যত সিন্ডিকেট গড়ে নানা পুকুর ও জলাশয়ে এমন কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকায়। কোথাও বাসিন্দারা খবর দিয়েছেন মত্‌স্য দফতরে। তাদের মালিকানাধীন কিছু জলাশয়ে নানা ঘটনা তাঁদের কানেও পৌঁছেছে বলে এডিডিএ কর্তৃপক্ষ জানান।

ভিড়িঙ্গির আমবাগান এলাকায় এই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ছবি: বিকাশ মশান।

ভিড়িঙ্গির আমবাগান এলাকায় এই পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ছবি: বিকাশ মশান।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

কোথাও পুকুর বুজিয়ে জমি দখল। কোথাও জবরদখল করে মাছ চাষ। কার্যত সিন্ডিকেট গড়ে নানা পুকুর ও জলাশয়ে এমন কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকায়। কোথাও বাসিন্দারা খবর দিয়েছেন মত্‌স্য দফতরে। তাদের মালিকানাধীন কিছু জলাশয়ে নানা ঘটনা তাঁদের কানেও পৌঁছেছে বলে এডিডিএ কর্তৃপক্ষ জানান। পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি সব জানি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বেনাচিতি লাগোয়া ভিড়িঙ্গির আমবাগান এলাকায় নাচন রোড ও জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলের কাছে একটি পুরনো দিঘি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক একর জুড়ে থাকা এই জলাশয়টি ‘কুলু পুকুর’ নামে পরিচিত। জলের জন্য এলাকাবাসীর কাছে তা বড় ভরসা। এলাকায় কোথাও আগুন লাগলে দমকলও এই পুকুরটি ব্যবহার করে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমি দখলের একটি সিন্ডিকেট ওই দিঘির পাড় ধরে বেশ কিছু অংশ বুজিয়ে ফেলছে। রীতিমতো পুকুরের মাঝে ইট ও কংক্রিটের দেওয়াল তুলে মাটি ভরাট করতে শুরু করেছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দার অভিযোগ, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পুকুরের জমি ভরাট করে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ওই সিন্ডিকেট। আমরা তা কোনও মতেই হতে দেব না।” তাঁরা জানান, অবিলম্বে এই বেআইনি কাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে তাঁরা মত্‌স্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন।

মত্‌স্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইনল্যান্ড ফিসারিজ অ্যাক্ট ১৯৮৪’-এর ১৭-এ (২) ধারা মতে এই কাজ বেআইনি। গত ছ’মাস ধরে যে জলাশয়ে জল রয়েছে সেখানে এই ধরনের নির্মাণকাজ করা যায় না। জেলা মত্‌স্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাসিন্দাদের অভিযোগ তদন্ত করে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নিমাই গড়াই অবশ্য বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে পুকুরটি সংস্কারের উদ্যোগ হয়েছে। একটি ঘাট তৈরি হয়েছে। ওখানে পুকুর ভরাট করে কোনও ভাবেই প্রোমোটারি করা যাবে না।”

পুর এলাকার অন্তত সাতটি পুকুর মাছচাষের জন্য লিজ দিতে চেয়েও তারা সাড়া পায়নি বলে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে। ভিড়িঙ্গি, ফরিদপুর, পলাশডিহা, এমএএমসি, খাটপুকুর ইত্যাদি এলাকায় রয়েছে এই সব পুকুরগুলি। মালিকানা এডিডিএ-র। এই সমস্ত পুকুর নিলামে ডেকে তহবিল বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল এডিডিএ। পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, এডিডিএ, পুরসভা, মহকুমাশাসকের অফিসে নোটিস দেওয়া ছাড়াও স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। তা-ও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে, লিজ দেওয়া যায়নি। রাজস্ব হারাচ্ছে এডিডিএ।

ওই সব এলাকার অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, এর পিছনেও রয়েছে সিন্ডিকেটের ছায়া। তাঁরা জানান, বামফ্রন্টের আমল থেকেই ওই সব পুকুর জবরদখল করে মাছচাষের রমরমা কারবার ফেঁদে বসে এক দল যুবক। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে তারা শাসকদলের সঙ্গে ভিড়ে এখনও বেআইনি মাছচাষের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরের এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে একটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছচাষের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আগে থেকেই ওই পুকুরে মাছচাষ করে এক দল যুবক। তারা এলাকায় শাসকদলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিতি। ওই যুবকের অভিযোগ, “এডিডিএ-র রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর সিন্ডিকেট গড়ে মাছচাষ করছে ওরা। আমরা লিজ নিতে উত্‌সাহী, এই খবর পাওয়ার পরেই হুমকি ও শাসানি শুরু হয়। আমরা পিছিয়ে যাই।” পলাশডিহা, ভিড়িঙ্গির কয়েক জনও একই অভিযোগ শুনিয়েছেন।

এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুকুরগুলি ‘লিজ’ দিতে পারলে বছরে প্রায় দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের সুযোগ ছিল। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “নিলাম হয়নি। অথচ অধিকাংশ পুকুরেই বছরের পর বছর ধরে মাছচাষ চলছে বলে খবর রয়েছে। সিন্ডিকেটের দাদাগিরি হঠিয়ে নিলামের পরিবেশ তৈরি করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ!” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি সব জানি। এ ভাবে সরকারি সম্পত্তি লুঠ হতে দেব না। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দ্রুত নতুন করে দরপত্র ডাকার নির্দেশ দিয়েছি। বাকি যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

occupation of pond subrata sheet durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy