তছনছ ঘরেই পড়াশোনা। —নিজস্ব চিত্র।
দরজা ভেঙে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে বেঁধে রেখে লুঠপাট চালাল দুষ্কৃতীরা। আসানসোল শহরের জনবহুল এলাকা রামগুলাম সিংহ রোডে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে সোমবার গভীর রাতে এই ডাকাতি হয়। টাকা, গয়না, মোবাইল ফোন-সহ বহু মূল্যবান জিনিসপত্র জনা দশেকের ওই দুষ্কৃতী দলটি নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় এই রকম একটি বড়সড় লুঠপাটের ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
আসানসোল দক্ষিণ থানার দুর্গা মন্দির লাগোয়া রামগুলাম সিংহ রোডে তাঁর বাড়িতে রাত আড়াইটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা এসেছিল বলে অভিযোগ হার্ডওয়ারের জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী রামঅবতার সিংহের। মঙ্গলবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একতলা ও দোতলার সব ক’টি ঘর লণ্ডভণ্ড। আলমারি, ট্রাঙ্ক, ডিভান থেকে শুরু করে কোনও কিছুই বাদ দেয়নি দুষ্কৃতীরা। গৃহকর্তা রামঅবতারবাবু জানান, রাতে বাড়ির সদস্যেরা যে যার ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। গভীর রাতে দুমদাম শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। বিছানা ছেড়ে উঠে দেখেন, বাড়ির পিছন দিকের কাঠের দরজা ভেঙে জনা দশেক দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে পড়েছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র।
রামঅবতারবাবু জানান, তাঁরা যে চাদর গায়ে ঘুমোচ্ছিলেন, দুষ্কৃতীরা সেই চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে প্রথমে তাঁদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এর পরে এরা দু’জন নীচে পাহারায় থাকে। বাকিরা সোজা দোতলায় উঠে যায়। সেখানে ছিলেন রামঅবতারবাবুর দুই ছেলে, তাঁদের স্ত্রী ও নাতি-নাতনিরা। দুষ্কৃতীরা ঘরের দরজা খুলিয়ে তাঁদেরও হাত-পা বেঁধে ফেলে। বন্দুক তাক করে হুমকি দেয়, চিৎকার করলেই প্রাণে মেরে ফেলা হবে। রামঅবতারবাবুর ছোট পুত্রবধূ লক্ষ্মী লোহিয়া জানান, এই সময়ে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠায় এক দুষ্কৃতী তাঁকে চড় মারে। তিনি বলেন, “আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে য়ায়। ওরা আমার তিন বছরের মেয়ের গলার কাছে ভোজালি দেখিয়ে সব চাবি চায়।” বাড়ির বড় ছেলে দীপকবাবু জানান, বিপদ বুঝে তিনি দুষ্কৃতীদের চাবি এগিয়ে দিয়ে কারও কোনও ক্ষতি না করার আবেদন জানান।
বাড়ির সদস্যেরা জানান, দুষ্কৃতীরা নিজেদের মধ্যে অনর্গল হিন্দিতে কথা বলছিল। তাদের প্রায় সকলেরই পরনে ছিল বারমুডা ও টি-শার্ট। দীপকবাবু বলেন, “আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম, জিনিসপত্র তছনছ করে সব নিয়ে নিচ্ছে ওরা।” তিনি জানান, প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে লুঠপাট চালানোর পরে পালিয়ে যায় ওরা। তার আগে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির লোকজনকে নানা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। এর পরে অনেকক্ষণ কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তাঁরা নিজেরাই বাঁধন ঘরের বাইরে বেরোন। দীপকবাবু থানায় ফোন করেন। পুলিশ পৌঁছয়। আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। এখনও বলার মতো কোনও সূত্র হাতে আসেনি। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এসেছিল।”
সোমবার রাতে যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত জনবহুল। থানাও মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে। জি টি রোড থেকে মেরেকেটে ৫০ মিটার ভিতরে ওই এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহলও হয় বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান। তা সত্ত্বেও মাঝ রাতে এ রকম লুঠপাটের ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। লুঠপাটের ঘটনার খবর পেয়েই ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে যায় আসানসোল বণিকসভার একটি প্রতিনিধি দল। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, মাসখানেক আগে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন এক ওষুধ ব্যবসায়ী। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার কিনারা হয়নি। তারই মধ্যে ফের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনা ঘটল। এতে শহরের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ছে বলে বণিকসভার সদস্যদের অভিযোগ। সংগঠনের সভাপতি সুব্রত দত্ত জানান, তাঁরা শহরের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি নিয়ে পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy