মায়ের সঙ্গে সুদীপা।—নিজস্ব চিত্র।
অর্থের অভাব দাদাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে দেয়নি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা বোনের স্বপ্ন নষ্ট করতে পারেনি। বরং জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক বেশি।
বাবা স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। তিনি ভাল করে বসে থাকতে পারেন না। মাসকাবারি রোজগার বলতে মায়ের কয়েকটি টিউশন। সঙ্গে রয়েছে শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্য। এই অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে পড়াশোনা চালিয়েই মাধ্যমিকে ৬৪৩ নম্বর পেয়েছে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুর এলাকার সুদীপা নন্দী।
মাধ্যমিকের মার্কশিট বলছে সুদীপা অঙ্কে পেয়েছে ১০০। অন্য বিষয়গুলিতেও সুদীপার প্রাপ্ত নম্বর তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞান ৯৮, ইংরেজিতে ৯০, ইতিহাসে ৮৬, বাংলায় ৮০ পেয়েছে সুদীপা। সে জানায়, চারজন গৃহশিক্ষক তাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। কিন্তু এখন পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে আসবে সেই নিয়েই চিন্তিত এই মেধাবী ছাত্রী।
শরীরে রোগ বাসা বাঁধবার আগে পর্যন্ত সুদীপার বাবা প্রভাত নন্দী ছিলেন পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক। বেশির ভাগ সময়েই এলাকার দরিদ্র মানুষদের বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা করতেন তিনি। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়েই মানুষের সেবা করতে চায় বিদ্যার্থী ভবন গার্লস স্কুলের এই ছাত্রী। পড়াশোনা করে এমবিবিএস পাশ করতে চায় সে। তবে এই ইচ্ছেপূরণের জন্য অর্থই তার কাছে প্রধান বাধা। সুদীপার কথায়, “ডাক্তারি পড়তে তো অনেক খরচ। সেই খরচ কোথা থেকে আসবে, এখন সেটাই চিন্তা।”
শুধু পড়াশোনাই নয়, নাচ ও গানেও সুদীপার আগ্রহ রয়েছে। একটি নাচের স্কুলে ওড়িশি শেখে সে। নাচ তার অন্যতম ভাললাগার জায়গা, সে কথা জানিয়ে সুদীপা বলেন, “আমার নাচের দিদিমনি পৌলমী মুখোপাধ্যায় আমার আগ্রহ দেখে আমাকে নাচ শেখাচ্ছেন। উনি বলেছেন, ভাল নাচতে পারলে আমাকে সাহায্য করবেন।” নিজের ভাল ফলের জন্য প্রতিবেশী স্বাধীনকুমার দে’র পরিবারের ভূমিকার কথাও বলছেন সুদীপা। স্বাধীনবাবুর ছেলে অভীক নিজে এমবিবিএস চিকিৎসক। অভীকবাবুর আশ্বাস, “উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করতে পারলে তারপরের পড়াশোনা এবং জয়েন্টের প্রস্তুতি নিতে ভাবতে হবে না সুদীপাকে।”
নন্দী পরিবারে ভাল ফল অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। সুদীপার দাদা সৌদীপ জয়েন্ট এট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বসে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হয়নি সৌদীপের। বর্তমানে সে পলিটেকনিকের ছাত্র। এ বারও একই সমস্যা হবে না তো? “আমার মেয়ে খুব কষ্ট করে মাধ্যমিক পাশ করেছে। কিন্তু এরপরে ওর লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, তাই সাহায্য দরকার।”--মেয়ের চোখ ধাঁধানো ফলের পরেও অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে মা চন্দনা নন্দীর গলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy